X
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
১৮ বৈশাখ ১৪৩২

জালিয়াত চক্রের সদস্য মাদ্রাসা শিক্ষকের সনদও জাল

এস এম আববাস
২৪ মার্চ ২০২৫, ১০:০০আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০:০০

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ এবং নিয়োগ সুপারিশ জালিয়াত চক্রে সম্পৃক্ততায় অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষকের নিজের সনদও ভুয়া। অন্যের সনদে নিজের বাবা-মায়ের নাম বসিয়ে জালিয়াত চক্রের সদস্য মাদ্রাসা শিক্ষক মো. আশরাফুল আলম মাদ্রাসায় চাকরি নেন এবং এমপিওভুক্ত হন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোকনগর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলম অন্যের সনদে নিজের বাবা-মায়ের নাম বসিয়ে এবং ভুয়া সুপারিশপত্র তৈরি করে চাকরি নিয়েছিলেন। পরে এমপিওভুক্ত হন তিনি। শুধু তাই নয়, এভাবে শতাধিক জাল সনদে চাকরির ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। 

জালিয়াতির এসব ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে ২০২৪ সালে গ্রেফতার করে।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর বলছে— শিক্ষক নিবন্ধন ও ভুয়া সুপারিশে দেড় শতাধিক শিক্ষকের এমপিও বাতিল করা হয়েছে। ফৌজদারি আইনে মামলাও করা হয়েছে মো. আশরাফুল আলমসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। মামলা চলমান রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার পক্ষে ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই আলিয়ার শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম ৩৬ জন শিক্ষকের জাল সনদ শনাক্ত করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের অভিযোগ করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ওই সময়ের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন তথ্য অনুসন্ধান শুরু করেন এবং তথ্যের সত্যতা পান।

জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলমসহ জালিয়াত চক্রের সদস্যরা সনদ জালিয়াতি, ভুয়া সুপারিশপত্র তৈরি করে বিভিন্ন মাদ্রাসায় চাকরির ব্যবস্থা করে দিতেন। চক্রটি নামের মিল সনদধারীদের খুঁজে বের করতেন এবং পিতামাতার নাম বদলে সনদ তৈরি করতেন। মো. আশরাফুল আলমের নিজের সনদও অন্যের সনদে নিজের বাবা-মায়ের নাম বসিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে। এছাড়া ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন তৈরি এবং ভুয়া নিয়োগ সুপারিশ তৈরি করতেন তারা। আমি ৩৬ জনের জাল সনদের তথ্য দিয়েছিলাম মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরে।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর জানায়, ২০২৩ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাই শুরু করা হয়। সনদ যাচাই করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাল সনদের তথ্য মেলে।

এনটিআরসিএ এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের অফিস আদেশে দেখা গেছে, সনদ যাচাইয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে বিভিন্ন শিক্ষকের সনদ যাচাই চলতে থাকে। এনটিআরসিএ ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরকে জানায়, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোকনগর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলমের সনদ জাল।

মূল সনদধারীর নামের সঙ্গে মিল থাকায় মো. আশরাফুল আলম নামের অন্য এক ব্যক্তির সনদ নিজের নামে চালিয়ে দেন। এই সনদে দেখা যায়, রোল নম্বর ৪০১২৪৯০৩, পিতার নাম মো. আব্দুল বাকি এবং মাতার নাম আয়েশা। কিন্তু টোকনগর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলমের পিতার প্রকৃত নাম জসিম উদ্দিন এবং মায়ের নাম পারিনা আকতার।

মাদ্রাসা অধিদফতর থেকে টোকনগর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলমের দেওয়া সনদের রোল নম্বর এবং তার পিতা ও মাতার প্রকৃত নাম উল্লেখ করে সনদ যাচাই করলে এনটিআরসিএ জানায় সনদটি জাল।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ওই সময়ের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন জানান, সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলম জাল সনদে চাকরি নেন এবং এমপিওভুক্ত হন। এই ব্যক্তি সনদ জালিয়াত চক্রের মূল তিন জনের একজন। এই ঘটনার পর গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোকনগর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলম তার সনদ সঠিক বলে দাবি করেন। প্রকৃত সনদধারীর নাম এবং এই শিক্ষকের নাম এক হওয়ায় তিনি সনদটি নিজের হিসেবে দাবি করেন। শুধু তাই নয়, এমপিও বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন তিনি। দেড় শতাধিক জাল সনদধারীকে একত্রিত করছেন। অভিযোগ রয়েছে, জাল সনদধারীদের জাল সনদ সঠিক প্রমাণ করতে টাকা লাগবে বলেও শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।

যেভাবে সন্ধান পায় অধিদফতর

২০২৩ সালে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বড়িবাড়ি দাখিল মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষকের জাল সনদের সন্ধান মেলে। জাল সনদধারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, তার সনদ সঠিক। তার দাবি, এনটিআরসিএ ওয়েবসাইটেও তার প্রমাণ আছে। ফলাফল পেয়েছি এনটিআরসিএ মোবাইল নম্বর থেকে।

এই শিক্ষকের সনদসহ অন্যদের সনদ যাচাই করতে গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর জালিয়াত চক্রের সন্ধান পায়। এই চক্রের তিন সদস্য হলেন— গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোকনগর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলম, কাপাসিয়ার সোহাগপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ ন ম আব্দুল্লাহ এবং অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের আইসিটি শিক্ষক সুমন।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ওই সময়ের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন জানতে পারেন— ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুয়া নিয়োগ সুপারিশ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন এই তিন জন। এছাড়া এনটিআরসিএ’র মোবাইল নম্বরটি ক্লোন করে ফলাফলের ম্যাসেজ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তারা। এই তিন জনের মধ্যে দুজনকে ২০২৪ সালের ২ থেকে ৪ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার টোকনগর দারুল হাদিস আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মো. আশরাফুল আলম, কাপাসিয়ার সোহাগপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ ন ম আব্দুল্লাহসহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। আর আইসিটির শিক্ষক হিসেবে পরিচিত সুমনকে গ্রেফতার করা যায়নি। গ্রেফতার জালিয়াতচক্রের তিন জনসহ ৬ থেকে ৭ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে রমনা থানায় অধিদফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নয়ন মিয়া বাদি হয়ে মামলা করেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নওয়া হয়েছে। আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমার সব ইচ্ছা তো প্রতিফলিত হয় না। দেখা যাক, আর কতটা করতে পারি।’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
চকবাজারে মাদ্রাসাছাত্রের আত্মহত্যার অভিযোগ
মাদ্রাসায় প্রযুক্তি শিক্ষার জন্য কাতার চ্যারিটির সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে তরুণ আলেমদের জেগে উঠতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বুকে-পেটে প্রকাশ্যে গুলি
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বুকে-পেটে প্রকাশ্যে গুলি
এক মোটরসাইকেলে চার যুবক, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকচাপায় দুজনের মৃত্যু
এক মোটরসাইকেলে চার যুবক, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকচাপায় দুজনের মৃত্যু
ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভে অংশ নিতে জনতাকে আহ্বান নাহিদ ইসলামের
ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভে অংশ নিতে জনতাকে আহ্বান নাহিদ ইসলামের
ট্রেলারে আগ্রহ বাড়ালেন জয়া-মহসিনা, মুক্তি ১৬ মে
ট্রেলারে আগ্রহ বাড়ালেন জয়া-মহসিনা, মুক্তি ১৬ মে
সর্বাধিক পঠিত
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
টিসিবির ডিলারদের চুক্তি নবায়নের আহ্বান
টিসিবির ডিলারদের চুক্তি নবায়নের আহ্বান
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট