২০১৬ সালে ৩০ জুন দেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি ঘোষণা হয় শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সরকারি শামসুর রহমান কলেজও। অভিযোগ উঠেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের আদেশ মানছে না। শুধু তাই নয়, উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়ার পরও তা মানছেন না কলেজের অধ্যক্ষ। সরকারি কলেজ হলেও তিনি বলছেন, আদালত ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বিষয়টি ডিল করছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতারা। অর্থাৎ কলেজটি এখনও বেসরকারি ব্যবস্থাপনাতেই চলছে।
অভিযোগ আছে, সরকারি ঘোষণার পর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২১ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেআইনিভাবে কলেজ গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি ও পরিবারের সদস্যদের নামে সাবেক অধ্যক্ষ মৌজে আলী হাওলাদার লিখে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। দুর্নীতির এই বিষয়টি নিয়ে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে অভিযোগ করেন। এ কারণে ২০১৭ সালের ৩১ মে অভিযোগকারী ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
তবে তদন্তের পর দুর্নীতির প্রমাণ হলে ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রভাষক সাইফুল ইসলামকে পুনর্বহাল করা হয় ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর। এরপর আগের গভর্নিং বডি প্রভাব খাটিয়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালে ২৫ মার্চ প্রভাষক পদে পুনর্বহালের চিঠি বাতিল করানোর ব্যবস্থা নেয়। অধ্যক্ষ যোগদানপত্র বাতিল করেন।
চাকরি ফেরাতে প্রভাষক সাইফুল ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেন। রিটের অন্তর্বর্তী আদেশে প্রভাষক সাইফুল ইসলামকে তার পদে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের আদেশের পর মন্ত্রণালয় গত ৩০ এপ্রিল সাইফুল ইসলামকে প্রভাষক পদে দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেয় অধ্যক্ষকে। কিন্তু সরকারের এই নির্দেশের পরও প্রভাষক সাইফুল ইসলামকে কলেজে যোগদান করতে দেননি অধ্যক্ষ।
জানতে চাইলে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. হারুন-অর-রশিদ বিষয়টি পাশ কাটাতে চেষ্টা করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি ডিল করি না। পুরোটাই ডিল করে কলেজের প্রতিষ্ঠাতারা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ প্রশাসন) অধ্যাপক বি. এম. আব্দুল হান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে প্রথম দিকে ঝামেলা চলছিল। আমরা আইন শাখার মতামত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কেন, কোন ক্ষমতাবলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে পদে বহাল করছেন না, তা প্রভাষক সাইফুল ইসলাম আমাদের আবেদন করলে বিষয়টি দেখবো। হয়তো আবেদন করেছেন, আমরা পেয়েছি কিনা আমার এখন মনে নেই। আমি বিষয়টি দেখবো, কোনও আইনগত সমস্যা আছে কিনা।’
অথচ কলেজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি বিধি-বিধান অনুযায়ী সরকারি কলেজের কোনও বিষয় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা দেখভাল করতে পারবে না। কলেজের দেখভাল করবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বা অধ্যক্ষ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। বেসরকারি থাকাকালে প্রতিষ্ঠাতা বা গভর্নিং বডির দেখভাল করার সুযোগ ছিল। সরকারি হওয়ার পর তা নেই। কারণ সরকারই এই কলেজের দেখভাল করবে, সব দায় নিতে হবে অধ্যক্ষকে।’
অভিযোগে জানা গেছে, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সরকারি শামসুর রহমান কলেজের বহুতল ভবন ও আবাসনসহ সরকারি সম্পত্তি প্রায় ২১ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযোগকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই অভিযোগ করায় আমার চাকরি চলে যায়। উচ্চ আদালতে রিট করে চাকরি ফেরত পেলেও তাকে যোগদান করতে দিচ্ছেন না বর্তমান অধ্যক্ষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে প্রভাষক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) হিসেবে যথারীতি দায়িত্ব পালন করতে দেওয়ার জন্য আদালতের আদেশে অধ্যক্ষ মহোদয়কে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অধ্যক্ষ মহোদয় মন্ত্রণালয়ের সেই নির্দেশনা না মেনে উল্টো হয়রানি করছেন। বিগত সময় কলেজ গভর্নিং বডি কলেজের বহুতল ভবন ও আবাসনসহ প্রায় ২১ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আত্মসাৎ করে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের তদন্তে সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তের অভিযোগ প্রমাণের পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো আমাকে যোগদান করতে দিচ্ছেন না বর্তমান অধ্যক্ষ। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের কথায় চলেন তিনি।’