X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
কান কথা-দুই

সার্চ ইঞ্জিনের ট্রান্সলেটরে চোখ রেখে হাঁটছি

জনি হক, কান (ফ্রান্স) থেকে
০৮ মে ২০১৮, ১৩:০৮আপডেট : ০৮ মে ২০১৮, ১৫:১৮

বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধি জনি হকের কান-পরিচয়পত্রজুয়া-লা-পা’য় যে হোটেলে উঠেছি সেখান থেকে ট্রেন স্টেশন হেঁটে গেলে দুই মিনিট দূরত্বে। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে বললাম, কানে যাবো। ভদ্রমহিলা জানালেন, আড়াই ইউরো ভাড়া। হঠাৎ মনে পড়লো গতবারের একটা ঘটনা।
বাংলা ট্রিবিউন থেকে ৭০তম কান উৎসব কাভার করতে এসে সাঁ রাফায়েলে প্রবাসী মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে ছিলাম। তিনি উপহারের (রে ব্যান রোদচশমা) সঙ্গে কিছু টিপস দিয়েছিলেন। সেটা এবার কাজে লাগালাম।
ট্রেনে প্রতিবার টিকিট কেটে যাতায়াত করলে খরচ বেশি। সপ্তাহের টিকিট একসঙ্গে কেটে ফেললে সস্তা। জুয়া-লা-পা’য় টিকিট বিক্রেতা ভদ্রমহিলাকে বললাম, এক সপ্তাহ কানে যাওয়া ও ফেরা যাবে এমন একটা প্যাকেজ চাই। তিনি পাসপোর্ট চাইলেন। আইডেন্টিটি পেজ দেখে তথ্য নিয়ে ফেরত দিলেন এক মিনিটের মধ্যে। ৬ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত টিকিট পেতে গুনতে হলো ৭ ইউরো ৯০ সেন্ট। এই সাতদিন যতবার খুশি যাতায়াত করতে পারবো। অথচ দিনে প্রতিবার যাওয়া-আসায় লেগে যেতো ৫ ইউরো!
পালে দো ফেস্টিভ্যাল ভবনের একাংশ কানে গত তিনবার এসে এমন অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে, যেগুলো পরে কোনও না কোনও কাজে লেগেছে। সিম কেনা থেকে শুরু করে সস্তায় কিন্তু রুচিতে ধরে এমন খাবার খাওয়া, কত নম্বর বাস কোথায় যায় তার খোঁজ রাখা, সকালে ও রাতে ট্রেন কখন পাওয়া যাবে তা জেনে নেওয়া ইত্যাদি।
তবে আবহাওয়া নিয়ে কোনও অভিজ্ঞতাই কাজে লাগেনি। এক্ষেত্রে কোনও অনুমানই ধোপে টেকে না। সোমবার (৭ মে) সকাল থেকে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই ব্লেজার গায়ে চেপে রওনা হলাম কানে। ভেবেছিলাম কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে হবে। কিন্তু কোথায় কী! ট্রেনে ৮ মিনিটের মধ্যে সাগরপাড়ের শহরটিতে পৌঁছার পর থেকে রোদের তাপ যেন সময় গড়ানোর সঙ্গে বেড়ে চলছিল। এ কারণে ঘেমে একাকার হওয়ার দশা!
রোদ মাথায় নিয়েই প্রেস ব্যাজ সংগ্রহের জন্য অ্যাক্রেডিটেশন ফটকের লাইন দাঁড়াতে হলো। ব্যাজের সঙ্গে লাল রঙের একটি কার্ড এলো হাতে। তাতে ফরাসি ও ইংরেজিতে লেখা, ‘নো সেলফিস অ্যান্ড পিকচার্স অন দ্য রেড কার্পেট। থ্যাংকস!’ এতদিন জানতাম, সেলফি নিষিদ্ধ। এখন তো দেখছি মোবাইল ফোনে যেকোনও ধরনের ছবি তোলাই বারণ!
লালগালিচা বিছানোর প্রক্রিয়া চলছে ছবি তোলায় মানা থাকলেও, ছবি দেখার অফুরন্ত সুযোগ আছে কানে। কোন ছবির প্রদর্শনী কখন, কোথায় হবে; সেসব সময়সূচিসহ আয়োজকরা ব্যাজের সঙ্গে একটি ব্যাগ দিলেন। ভেতরে কয়েকটি ম্যাগাজিন, ক্যাটালগ, উৎসবের লোগো সংবলিত সুদৃশ্য ব্যাগ, লিফলেট, স্মরণিকা। এর মধ্যে আলাদাভাবে চোখে পড়লো একটি প্রচারপত্র। এতে ফরাসি ভাষায় শুরুতে লেখা রয়েছে—ভদ্র আচরণ প্রয়োজন। এরপর যোগ করা কথাগুলো হলো, ‘উৎসবের আমেজ নষ্ট করবেন না। হয়রানি বন্ধ করুন।’
এই বার্তা মূলত মিটু হ্যাশট্যাগ ও টাইমস আপ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতির প্রতীকী। প্রচারপত্রে উল্লেখ রয়েছে একটি নম্বরও। যৌন হয়রানি কিংবা এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখলে এই নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে। সাদা কাগজের ওপর বো-টাইয়ের ছবি। নিচে ডানদিকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা—‘এমন কিছু ঘটতে দেবেন না।’ অথবা এভাবেও বলা যায়, ‘চোখ-কান খোলা রাখুন, সোচ্চার হোন।’
কানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারও চলচ্চিত্র ক্রেতা, বিক্রেতা, সৃজনশীল মানুষ ও সংবাদকর্মী আসেন। তাদের অনেকেই ফরাসি ভাষা জানেন না। যদিও প্রচারপত্রের কোনও কিছুরই অনুবাদ নেই। সমাধান একটাই—গুগল! সার্চ ইঞ্জিনের ট্রান্সলেটরে চোখ রেখে হাঁটছি।
ব্যাগের ওজন কম নয়। কিন্তু সবই উৎসবের জন্য দরকারি। তাই ভার বইতে হচ্ছে। এমনিতে রোদ, তার ওপর ভারী ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে গিয়ে গরম আরও বেশি লাগছে। পালে দো ফেস্টিভ্যাল ভবনের সামনের সড়কে এসে দেখি সাধারণ মানুষের জটলা। কান উৎসব উদ্বোধনের জন্য মুখিয়ে আছেন সবাই। তাই রোদে পুড়ে লালগালিচা বিছানোর প্রক্রিয়া উপভোগ করছেন তারা।
মিটু হ্যাশট্যাগ আন্দোলনের প্রতি কান উৎসবের সংহতি তবে মূল ফটকের সামনে আজও (৭ মে) তেমন ভিড় জমেনি। ফলে অনায়াসেই ঢোকা গেলো। প্রেস রুম, ওয়াইফাই জোন, টেরেস দো জার্নালিস্টস; কিছুই এখনও চালু হয়নি। মঙ্গলবার (৮ মে) থেকে এসব সেবা মিলবে। তবে বাংলা ট্রিবিউনের জন্য বরাদ্দ প্রেস বক্স খোলা গেলো। এখানেও দরকারি আরও কাগজ। উৎসবের উদ্বোধন কখন, উদ্বোধনী ছবির প্রদর্শনী শুরুর সময়, সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত ভেন্যু, প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকদের সংবাদ সম্মেলনের সময়সূচি, সবই হাতে এলো। সেগুলোও রাখতে হলো ব্যাগে। ল্যাপটপের আরেকটি ব্যাগ তো আছেই।
শুধু এলাম, দেখলাম, ঘুরলাম আর লিখলাম; ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় কানে। এখানে সারাক্ষণই চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। প্রতিদিনই দরকারি সবকিছু বয়ে বেড়ানো লাগে। যত ওজনই হোক। আবার ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের চারঘণ্টা সময়ের ব্যবধানের কথাও রাখতে হয় মাথায়। তাছাড়া একটার পর একটা ইভেন্ট থাকেই। সবখানেই যেন জমজমাট আমেজ দেখা যায়, উৎসবের ডিজাইনটাও সেভাবেই সাজানো।
পালে দো ফেস্টিভ্যাল ভবনের সামনে সাধারণ মানুষের জটলা

/জেএইচ/এমএম/.
সম্পর্কিত
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগাল
কান উৎসব ২০২৪কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগাল
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কান উৎসব ২০২৪কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
গানে গানে সরকারের সমালোচনা, ইরানি গায়কের মৃত্যুদণ্ড
গানে গানে সরকারের সমালোচনা, ইরানি গায়কের মৃত্যুদণ্ড
ঢাকাই নির্বাক ছবির মস্কো জয়, যেমনটা বললেন নির্মাতা
ঢাকাই নির্বাক ছবির মস্কো জয়, যেমনটা বললেন নির্মাতা
ফুরফুরে মেজাজে পান্নু
ফুরফুরে মেজাজে পান্নু