X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেনেসাঁ ব্যান্ডটি নিয়ে আমার অনেক ফ্রাসট্র্যাশন আছে: পিলু খান

ওয়ালিউল বিশ্বাস
২১ মার্চ ২০২২, ১২:১০আপডেট : ২১ মার্চ ২০২২, ১৬:৪৮

পিলু খান। কারও কারও মতে তিনি অভিজাত সুরকার। সুরের ধাঁচটা আনকোরা। ‘আজ যে শিশু’, ‘সময় যেন কাটে না’ বা ‘হে বাংলাদেশ, ‘তোমার বয়স হলো কত’র মতো গানের সৃষ্টি তার হাত ধরে। তার সুরের বুননে এসেছে ‘আকাশ আমার জোছনা আমার’, ‘এদিন তো রবে না’র মতো অসংখ্য গান। চার দশক ধরে নেপথ্যে কাজ করে চলেছেন ব্যান্ড রেনেসাঁর হয়ে। বেশ কয়েক বছর হলো আছেন প্রবাসে। বর্তমানে বাস করছেন আফ্রিকান দেশ ঘানায়। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘বাসবো ভালো’ শিরোনামের গানচিত্র। যেখানে সামনে এসেছেন শুধু মডেল হিসেবে। নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত এই সংগীতশিল্পীর সঙ্গে কথা হয় বর্তমান দিনগুলো নিয়ে। বলেছেন তিনি অতীত প্রসঙ্গেও—

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি দীর্ঘদিন ঘানায় আছেন, বিষয়টি শুনলে অনেকের কাছে বিস্ময় ঠেকবে। 

পিলু খান: হ্যাঁ, অনেক দিন ধরেই ঘানাতে আছি। দেশটির রাজধানী আক্রাতেই আমরা বসবাস করছি। বছর খানেক তো হবেই।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে কি স্থায়ীভাবেই সেখানে থাকছেন?

পিলু খান: সেটা বলা যাবে না। এখানে থাকার কারণ হলো আমার স্ত্রী নেসলে'র এইচআর কর্মকর্তা। এখন পোস্টিং আক্রাতে। এর আগে ২০১৭ সাল থেকে আমরা মালয়েশিয়ায় ছিলাম। চার বছর সেখানে কাটিয়েছি। একই কারণে এখন আক্রাতে আমরা পরিবারসহ থাকছি। হয়তো আর দু-এক বছর এখানে থাকতে হবে।

আক্রার একটি ক্যাফেতে ছেলে দামীরের সঙ্গে পিলু

বাংলা ট্রিবিউন: ঘানা দেশটা কেমন? এখান থেকেই কথার শুরুটা করি। 

পিলু খান: এটা তো ওয়েস্ট আফ্রিকান দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। আফ্রিকার মধ্যে ঘানা সবচেয়ে পিসফুল কান্ট্রি। অন্যান্য আফ্রিকান দেশে যা ঘটে, তা এখানে নেই; সেভ অ্যান্ড সিকিউর। মানুষজনও ভালো। রুলস খুব ফলো করে। যেমন, আমরা তো করোনার মধ্যেই এখানে এসেছি; ২০২১ সালের এপ্রিলে। তারা দেখলাম, নিয়মগুলো বেশ সুন্দর করে মানছে। যার ফলে খুব একটা সমস্যা হয়নি। আর জনসংখ্যাও কম। লাইফটা অবশ্যই খুব নরমাল। কোথাও কোনও বাধা নেই। সবাই সবার মতো জীবনযাপন করেন।

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে মালয়েশিয়া ও ঘানা মিলিয়ে আপনি পাঁচ বছর ধরে পুরোপুরি প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। কেমন কাটছে দিনগুলো?

পিলু খান: মালয়েশিয়াকে অনেক ক্ষেত্রেই ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করা যায়। মালয়েশিয়া কিছু ক্ষেত্রে বেটারও। ওটার সঙ্গে তুলনা করলে এখানকার লাইফ ধীরগতির। ইউরোপের মতো বা মালয়েশিয়ার মতো চাকচিক্য নেই। তবে খুব পিসফুল ঘানা। থাকার মতো একটি দেশ। মন্দ কাটছে না সময়।

বাংলা ট্রিবিউন: একটা সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব ট্রল হয়েছিল, আর ইউ পম গানা? সেখানে গিয়ে কি সেই ট্রলের কথা মনে পড়েছিল?

পিলু খান: হ্যাঁ, মনে পড়েছে (হাসি)। সম্ভবত আমাদের দেশের একজন চিত্রনায়ক (অনন্ত জলিল) এটা বলেছিলেন। আসলে আমরা বাংলাতে ‘ঘানা’ বললেও এখানে উচ্চারণ করা হয় ‘গানা’।

বাংলা ট্রিবিউন: ঘানায় আপনার সময় কেমন কাটছে? সেখানে কি খুব ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে?

পিলু খান: ব্যস্ততা তেমন একটা নেই। বরং পরিবারকে সময় দিচ্ছি। সবার দেখভাল করছি। ২০২১-এর এপ্রিলে আক্রাতে এসেছি। মানে আগামী এপ্রিলে ১ বছর পূর্ণ হবে।

বাংলা ট্রিবিউন: যেহেতু বলছিলেন হাতে বেশ সময় থাকে; তাহলে তো বোধহয় গানের জন্যও এগুলো ব্যয় করছেন? সম্প্রতি একটা গানে আপনাকে দেখাও গেছে। তবে সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে শুনি, গত এক বছরে কতটা সময় দিলেন স্টুডিওতে!

পিলু খান: হ্যাঁ, তা করা হচ্ছে। আসলে ব্যান্ড রেনেসাঁর পুরনো বেশ কিছু গান ইনকমপ্লিট ছিল। সেগুলোই শেষ করছি। ব্যান্ডের বাইরে শিল্পীদের জন্য গানও তৈরি করেছি কিছু। আমার মনে হয়, ১০-১২টা গান তো হবেই।

স্টুডিওতে পিলু খান

বাংলা ট্রিবিউন: ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও তো তার কাজ করে বলে প্রবাদ আছে। আপনি তো গানের দলের মানুষ, ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত। আপনার ক্ষেত্রে কী হচ্ছে? ওখানার কোনও গানের দলে যোগ দিয়েছেন বা পরিচয় হয়েছে?

পিলু খান: হ্যাঁ, সেটা হয়েছে। এখানে একটা কয়ার গ্রুপ আছে। ওদের সঙ্গে যুক্ত আছি। সপ্তাহে রিহার্সেল হয়। সেটা করি। ইতোমধ্যে তিন-চারটা জায়গায় তাদের সঙ্গে পারফর্মও করেছি। নাম- আক্রাজিও। এখানে এসে আমি খোঁজ করছিলাম, মিউজিক রিলেটেড অর্গানাইজেশন কোথায় আছে? তখনই ওদের সন্ধান পাই। এতে যোগ দিতে তেমন কিছু করতে হয় না। তারা জানালো, চাইলে আমি তাদের সঙ্গে কয়ার করতে পারি। তারপর থেকেই তাদের সঙ্গে আছি। বছরে তিন-চারটা পারফর্ম করে তারা। আমিও গত এক বছরে সেগুলোতে থেকেছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি যেহেতু মিউজিশিয়ান, ওদের গানে সুর করা বা যুক্ত হওয়ার বিষয়ে কি ভেবেছেন?

পিলু খান: আমি মিউজিশিয়ান, তারা এতটুকুই জানেন। এর বেশি কিছু নয়। তারা মূলত কাভার সং-ই বেশি করেন। আর যেহেতু কাভার সং বেশি, তাই নতুন সুর করার সুযোগও নেই। আমি রেগুলার মেম্বারের মতো আছি, এর থেকে বেশি কিছু না।

ড্রামসে বুঁদ হয়ে আছেন পিলু খান

বাংলা ট্রিবিউন: সম্প্রতি প্রথমবারের মতো শুধু মডেল হিসেবে আপনাকে একটি গানে দেখা গেছে। নাম ‘বাসবো ভালো’। এটার প্রায় সবকিছুই আপনার ছেলে দামীর করেছেন। গানটা প্রসঙ্গে জানতে চাই। এর কাজ কোথায় হয়েছে?

পিলু খান: এটার সবকিছু দামীরই করেছে। কিছুই আমার নেই। এমনকি অভিনয়েও আমার থাকার কথা ছিল না। দামীর ও তার টিমেরই অভিনয় করার কথা ছিল। কাজটা হয়েছে গত ডিসেম্বরে। যখন আমরা ঢাকায় গিয়েছিলাম। দামীর ভিডিও ধারণের জন্য সেটআপসহ সবকিছু বুকিং দিয়েছিল। যেদিন শুটিং, সেদিনই সে কোভিড পজিটিভ হয়। ফলে সে আর ঘর থেকে বের হয়নি। বাধ্য হয়েই, নতুন করে পরিকল্পনা হয়। আর আমাকে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল। এই ভিডিওর কোনও স্ক্রিপ্ট ছিল না। শুটিং হয়েছে ঢাকার সানবীম স্কুলে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো দীর্ঘদিন থেকেই গানে। সত্তরের দশকে থেকেই। তবে এবারই প্রথম মডেলিংয়ের কাজটা করলেন। আপনার গানের শুরুর গল্পটা একটু শুনতে চাই। ভুল না করলে যতদূর জানি, ১৯৭৭ সালে ‘নাট ক্রেকারস’ নামের ব্যান্ড গঠন করেছিলেন।

পিলু খান: হ্যাঁ, শুধু মডেলিংয়ের জন্য এবারই প্রথম। তবে রেনেসাঁর জন্য মাঝে মধ্যেই ক্যামেরায় দাঁড়াতাম। ব্যান্ড হিসেবে শুরু ১৯৭৭ সালে, সে তথ্য ঠিকই আছে। তবে আমি প্রথম স্টেজ পারফর্ম করেছি ১৯৭২ সালে। আমরা তিন ভাই পারফর্ম করেছিলাম। নকীব ভাই (নকীব খান) ও তারও বড় হলেন জিল্লু ভাই (গীতিকবি-সুরকার জালাল উদ্দীন খান); তাদের সঙ্গে। ওনাদের একটা ব্যান্ড ছিল বালার্ক নামে। ‘বালার্ক’টা বাংলা শব্দ। প্রথম সূর্য বা নবোদিত সূর্য বোঝায়। স্বাধীনতার আগেই ছিল ব্যান্ডটা। ৭২ সালে কক্সবাজারে তারা একটা শো করেন। সেখানেই মঞ্চে আমি উঠি। ড্রামস বাজাই। নকীব ভাইও আমার সঙ্গে প্রথম বাজান সেদিন।

তিন ভাই একসঙ্গে  

এরপর ৭৪’র দিকে জিল্লু ভাই ঢাকায় চলে আসেন। ব্যান্ডের অ্যাক্টিভিটি বললে ৭৭ সাল থেকে আমার শুরু, ‘নাট ক্রেকারস’-এ। সে সময় নাসিম আলী খান, কুমার বিশ্বজিৎ একসঙ্গে গাইতেন। এরপর ৭৯ সালে আমি সোলসে যোগ দিই। ব্যান্ডটির লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম সাজেদ ভাই সুইডেনে চলে যান। তখন আমি সে স্থানে গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত হই। সোলসে জয়েন করার ৬ মাসের মধ্যে ড্রামার রনি দা মিডলইস্টে চলে যান। তখন আবার ড্রামার হিসেবে কাজ শুরু করি। এরপর আমার পুরনো জায়গায় গিটারিস্ট হিসেবে জয়েন করেন আইয়ুব বাচ্চু। আমি যুক্ত হওয়ার পর নাসিম আলীকেও সেখানে এনেছিলাম। ৮৪ পর্যন্ত সোলসে ছিলাম। ৮৫ সালে ঢাকায় চলে আসি। পারিবারিক কারণে আসতে হয়। আমার বড় ভাই ঢাকাতেই স্যাটেল ছিলেন। সে কারণে চলে আসি। ৮৫ সালে আমরা রেনেসাঁ গঠন করি।

পিলু খানের প্রথম রেকর্ডিংয়ে, ১৯৭৮ সালে। বিশ্বজিৎ, পিলু ও মিকি- প্রত্যেকেই দুটি করে গানের রেকডিং করেছিলেন। এগুলোর সংগীত করেছিলেন লাকী আখান্দ

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার শুরুটা ১৯৭২ সালে। মানে ৫১ বছর পর গায়ক হিসেবে আপনার অ্যালবাম আসে। সেটা প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। আগে কেন মনে হয়নি গান গাওয়া দরকার? 

পিলু খান: ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি ও লাকী আখান্দ ভাই আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। বুলবুল ভাই তখন বললেন, ‘তোমার গানে যে ধরনের সুর হয়, তা আমাদের দেশে খুব একটা পাওয়া যায় না। সম্ভব হলে এগুলোর একটা আর্কাইভ করো। কোনও না কোনও দিন যেন নতুন জেনারেশন শুনতে পায়। সেই কারণেই ‘তোমরা ভালো আছো তো?’ অ্যালবামটি করা। আগে এভাবে কাজ না করার আরেকটা কারণ আছে। আমরা যারা ব্যান্ড মিউজিকের সঙ্গে যুক্ত আছি, তারা অনেকেই মনে করেন, ব্যক্তিগতভাবে গান করাটা ব্যান্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে কারণেই অ্যালবাম করার কথা আগে ভাবিনি। ব্যান্ডের বাইরেও আমি অনেকের জন্য গানের সুর করেছি।

   ‘তোমরা ভালো আছো তো?’ 

বাংলা ট্রিবিউন: আর সুরকার হয়ে ওঠার গল্পটা?

পিলু খান: সলো গান তৈরি করার ব্যাপারে বেসিক্যালি উদ্যোগ নিয়েছেন গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ভাই। অ্যালবামটিও তার গীতিকবিতায় তৈরি। আমার সুরকার হওয়ার পেছনে তার অবদান অনেক। আমরা যখন ঢাকায় আসি তখন একই বিল্ডিংয়ে থাকতাম। আমরা ওপরতলায়, জঙ্গী ভাই নিচতলায়। তখন স্বাভাবিকভাবেই একসঙ্গে সময় কাটিয়েছি। ইতোমধ্যে আমি প্রথম গান ‘বৃষ্টি দেখা কবিতা’ (নকীব খানের লেখা, ১৯৮০ সালে সুরকার করা) ও রেনেসাঁর জন্য ‘এদিন তো রবে না’র (খালিদ হাসানের লেখা, রেনেসাঁর প্রথম অ্যালবামে ছিল গানটি) সুর করেছি।

‘তৃতীয় বিশ্ব, এমন এক বিস্ময়, বানায় না অস্ত্র তবু সশস্ত্র, ওরা মরণ খেলায় অভ্যস্ত’—এমন কথার ‘তৃতীয় বিশ্ব’ নামের গানটি আমি রেনেসাঁর জন্য করেছিলাম। এটা জঙ্গী ভাইয়ের লেখা। রেগুলোর গানের যে শব্দগুলো, তা থেকে আলাদা। এটা নিয়ে কাজ করাটা একটু কঠিন ছিল। জঙ্গী ভাই একদিন এসে বললেন, ‘এই গানটি লিখেছি। একজনকে সুর করতে দিয়েছিলাম, সে করতে চায়নি। কারণ, এমন যুক্ত শব্দে তিনি সুর করতে পারবেন না। দেখো তো তুমি পারো কিনা?’ এরপর আমি এর সুর করলাম। এটা করার পর তিনি বাকি গানগুলো একের পর এক দিতে থাকলেন।

‘আজ যে শিশু’, ‘সময় যেন কাটে না’সহ বেশ কিছু গান একই লটে করা। সামিনা চৌধুরীর জন্য একটা অ্যালবাম করেছিলাম। নাম ‘এই বুঝি তুমি এলে’। এখানেই ছিল ‘সময় যেন কাটে না’ গানটি। অ্যালবামের রেকর্ডিং হয়েছে নব্বইয়ের শুরুতে। রিলিজ হয়েছিল কয়েক বছর পরে। এই বুঝি তুমি এলে অ্যালবাম

গানগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা করিনি। একের পর এক কাজ করেছি। পরে এগুলো নানাভাবে রিলিজ হয়েছে। তখনই সামিনা চৌধুরীর ‘এই বুঝি তুমি এলে’ অ্যালবামের প্ল্যানিং হয়। যেহেতু গানগুলো হাতে আছে, সেটাকে কাজে লাগানো আরকি। সে সময় আসিফ ইকবালের লেখা অনেক গান করেছি। যার অনেকটাই অপ্রকাশিত থেকে গেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: এই পর্যন্ত কত গানে আপনি সুর করেছেন?

পিলু খান: ৫০টির বেশি হবে তা। বেশ কিছু প্রকাশিত হয়েছে। কিছু আবার হয়নি। নতুন গানগুলোর বেশিরভাগ আমার ইউটিউব চ্যানেল ‘পিলু খান’ থেকে রিলিজ করবো ভাবছি।

বাংলা ট্রিবিউন: রেনেসাঁর অ্যালবাম আসবে আসবে বলে অনেক দিন ধরেই শুনেছি। শ্রোতারা বারবার আশায় বুক বেঁধেছেন। কিন্তু আপনারা প্রকাশ করেননি। এমনটা কেন হচ্ছে?

পিলু খান: রেনেসাঁ এক প্রকার রিটায়ার্ড ব্যান্ড বলা যায়।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘রিটায়ার্ড’ বলতে আসলে কী ধরে নেবো? একেবারে স্থগিত?

পিলু খান: না, তা নয়। ‘অ্যাক্টিভ নয়’ বোঝাতে বলেছি। তার কারণ হলো, ব্যান্ডে অর্গানাইজেশনাল কিছু বিষয় থাকে। আমাদের রেনেসাঁর ক্ষেত্রে যেটা হয়, নকীব ভাই ও আমিই প্রধান কম্পোজার। বাকি উদ্যোগ যেগুলো নেওয়া হয়, যেমন- অ্যালবাম বের করা, আলাদা কিছু করা, পরিকল্পনা করা- এগুলো আমিই বেসিক্যালি করতাম। আমি না হয় নকীব ভাই করতেন। আমি চলে আসার পরে এটা থেমে গেছে। আমাদের গান কিন্তু রেডি। এমনকি যখন গত ডিসেম্বরে ঢাকায় গিয়েছিলাম, তখন দুটি গান দিয়ে এসেছিলাম ভিডিও করার জন্য। ও সময়ে শুট করার কথা ছিল। সেটা করার আগে আমার কোভিড হয়ে গিয়েছিল। তাই কাজটা এগোয়নি। এখন চাচ্ছি, অন্তত লিরিক্যাল ভিডিও হোক। যেটি রিলিজ করতে চাচ্ছি তার শিরোনাম ‘সাদাকালো নয়, নয় বাদামি’। বর্ণবৈষম্য নিয়ে গান। জঙ্গী ভাইয়ের লেখা। এতে অতিথি গায়িকা হিসেবে আছেন এলিটা। ভয়েসে নকীব ভাই ও আমিও আছি।

বাংলা ট্রিবিউন: রেনেসাঁর গান অ্যালবামের জন্য রেডি বলছিলেন। আসলে ব্যান্ডটির কয়টা গান প্রস্তুত আছে?

পিলু খান: আমার কাছেই আছে ৬-৭টা গান। আর নকীব ভাই করেছেন ৭-৮ গান। সব মিলিয়ে ১৫টার মতো তো হবেই। কোনোটার হাফডান, কোনটার পুরোটা। এখন শুধু উদ্যোগ নিয়ে গানগুলোর রিলিজ শুরু করতে হবে। এ জন্যই বললাম, আমরা ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে গেছি।

রেনেসাঁর সদস্যরা

বাংলা ট্রিবিউন: ব্যান্ড বা ব্যান্ডের বাইরে নানা নতুন উদ্যোগ আসে আপনার কাছ থেকে। এমন কোনও কিছু কি করা যায় না, যেন আবারও সুরে ফেরে রেনেসাঁ?

পিলু খান: ব্যান্ড নিয়ে তেমন একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব ভালো কাজ হবে আশা করছি। এটা হলো, রেনেসাঁ ও সোলস একসঙ্গে যৌথভাবে কয়েকটা গান করবে। দুটি গান প্রায় রেডি। এগুলো লিখেছেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ভাই ও জুলফিকার রাসেল। জঙ্গী ভাইয়ের লেখা গান হলো ‘এই শহরে’ ও জুলফিকার রাসেলের লেখাটার শিরোনাম ‘কখনও যদি’। যদি ঠিকঠাক মতো কাজ হয় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এগুলো রিলিজ করা সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: দুই ব্যান্ডের এমন কোলাবোরেশন ভিন্ন কিছু তৈরি করবে। নিশ্চয়ই দারুণ ভাবনা। কী কারণে এমন ভাবনায় কাজ শুরু করলেন?

পিলু খান: আমার মনে হয়, বিভিন্ন আর্টিস্ট ও ব্যান্ডের মধ্যে জয়েন কোলাবোরেশন থাকা উচিত। এতে আলাদা স্বাদ তৈরি হয়। মিউজিশিয়ানের মধ্যে সৌহার্দ্য বাড়ানো দরকার। সোলসের সঙ্গে আমাদের অন্যরকম সম্পর্ক। আর পার্থ বড়ুয়াকে আমি খুব পছন্দ করি। তাকে বিষয়টি নিয়ে বলেছিলাম। তিনি বললেন, ‘আপনি ঢাকায় কয়দিন আছেন? এরমধ্যে একদিন সময়টা দেবেন।’ এরপর এ দুটির কাজ শুরু। অন্য মিউজিশিয়ান বা ব্যান্ডকেও স্বাগত, তারা যদি রেনেসাঁর সঙ্গে এমনটা করতে চায়। যদি সফল হয় তাহলে নকীব ভাইও এমন প্রজেক্টে গান তৈরি করবেন। 

অনেক কথাই বললাম। রেনেসাঁকে নিয়ে আরও একটু বলতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: অবশ্যই।

পিলু খান: ব্যান্ডটি নিয়ে আমার অনেক ফ্রাসট্র্যাশন আছে। তবে নেগেটিভলি না। সত্যিকার ব্যান্ড বলা হয় তখন, যখন তা অ্যাক্টিভ থাকে। তাদের প্ল্যান থাকবে, ক্রিয়েটিভিটি থাকবে। পুরনো গান নিয়ে থাকলে সেটা হতাশা তৈরি করে। এটাই আমার মধ্যে ভর করেছে। ব্যান্ডের কমিটমেন্ট থাকবে, নতুন গান করবে, থাকবে উদ্যোগ। এগুলো আমাদের মধ্যে নেই। ব্যান্ডের বিষয়ে এর সদস্যদের প্রায়োরিটি কমে গেছে। নকীব ভাইয়ের মতো কম্পোজার আছেন আমাদের। অন্যরাও তো আছেন। কিন্তু নতুন ধরনের গান হচ্ছে না। ১০-১২ বছর আগের ১৫টা গান রেডি আছে। আগেরগুলো ছাড়া হচ্ছে না। নতুন গানও হচ্ছে না। আমার আক্ষেপও আছে, আমাদের যতটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার কথা, সেটা হচ্ছে না। পিলু ও নকীব খান

বাংলা ট্রিবিউন: শেষটা করতে চাই ঘানা ও বাংলাদেশ দিয়ে। আক্রাতে বসে দেশকে মিস করেন? বাংলা ভাষাকে? কী করেন তখন?

পিলু খান: আমার এখানে আসাটা অস্থায়ী। বছর দুয়েকের মধ্যেই বাংলাদেশে ফিরে যাবো। তবে দেশকে প্রচণ্ড মিস করি। দেশের মানুষের ভাষাও। যখন মন খারাপ হয় বন্ধুবান্ধবদের ফোন করি। টানা কথা  বলি। আমার এখানে ছোট একটা স্টুডিওর মতো করেছি। সেখানে বসে গান করি। অনেক গান জমা হয়ে আছে, সেগুলো নিয়েই নাড়াচাড়া করি।

/এম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
ঈদ নাটক: ভিউতে এগিয়ে থাকা ১০
ঈদ নাটক: ভিউতে এগিয়ে থাকা ১০
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া