X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ওই মুহূর্তে অনবরত কান্না করেছি: শাহনাজ খুশি

কামরুল ইসলাম
৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৭:২৫আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১৯:০১

ভারতের গোয়া শহরটি দুটি কারণে পরিচিত। প্রথমত সমুদ্র ও সৈকতের জন্য, দ্বিতীয়ত সিনেমার জন্য। প্রতি বছর এখানেই অনুষ্ঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া’। চলতি বছরের আয়োজন গত ২০ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ২৮ নভেম্বর। এতে বাংলাদেশের চারটি ছবিও অংশ নিয়েছে। সেই সুবাদে ঢাকার শোবিজের বেশ কয়েকজন তারকার পা পড়েছে গোয়া উৎসবের লাল গালিচায়।

ঢাকা থেকে গোয়ায় যাওয়া একটি ছবি ‘নকশীকাঁথার জমিন’। আকরাম খান পরিচালিত ছবিটি উৎসবে প্রথমবার প্রদর্শিত হয়েছে, সেই সঙ্গে লড়েছে ইউনেস্কো গান্ধী পুরস্কারের জন্যও। এই সিনেমায় জয়া আহসানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি। তারা দুজন তারকা দম্পতি শাহনাজ খুশি ও বৃন্দাবন দাসের যমজ পুত্র।

পুত্রদ্বয়ের প্রথম সিনেমার প্রথম প্রদর্শনী, খুশি-বৃন্দাবন সামনে বসে দেখবেন না, তা কী করে হয়! তাই ছেলেদের সঙ্গে তারাও উড়াল দিয়েছেন সমুদ্র তীরের শহর গোয়ায়। যদিও মনের ভেতর আরও একটি ইচ্ছে পুষে রেখেছিলেন খুশি, তা হলো এশিয়ার অন্যতম এই উৎসবে সিনেমা ঘিরে জমজমাট আয়োজন নিজ চোখে দেখা।

গোয়া উৎসবের অভিজ্ঞতার কথা বাংলা ট্রিবিউনের কাছে শুনিয়েছেন খুশি। তার ভাষ্য, ‘একটা শহর, যেখানে শুধু সিনেমা দেখানো হয়! ১৫-২০টা ভেন্যু, পুরো শহরটিকে আলোকসজ্জিত করা হয়েছে, বিভিন্ন সিনেমার ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়ে সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন হলে ছাত্রছাত্রীরা এসে সিনেমা দেখছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দর্শক, শিল্পী, নির্মাতার পদচারণায় শহরটা মুখর।’

বৃন্দাবন দাস ও খুশির সঙ্গে তাদের দুই পুত্র নিজেকে ভাগ্যবান দাবি করে খুশি বলেন, “এ আর রহমান, অক্ষয় কুমার, আল্লু অর্জুন, প্রসেনজিৎ, দেব, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, আড্ডা দিয়েছি। সবাইকে একটা হোটেলে রাখা হয়েছিল। সকাল ৯টা থেকে শো শুরু হতো, রাত অব্দি চলতো। মজার ব্যাপার হলো, ভেন্যু থেকে কেউ ফেরে না। সারাক্ষণ সিনেমা কেন্দ্রিক আলোচনা-আড্ডায় মেতে থাকে। আমি অনেক ভাগ্যবান মা কিংবা মানুষ যে আমার ছেলেদের প্রথম সিনেমা ‘নকশীকাঁথার জমিন’-এর সুবাদে আমিও সেখানে যেতে পেরেছি।”

খুশি জানালেন, তিনি ও বৃন্দাবন ছেলেদের সঙ্গে গেলেও মূলত নিজ খরচে গিয়েছেন। বললেন, ‘দিব্য, সৌম্যই মূলত আমন্ত্রিত ছিল। কিন্তু একদিকে ওরা একা একা কোথাও সেভাবে যায় না। আবার আমরা যেহেতু এই অঙ্গনের মানুষ, সিনেমা ঘিরে এত বড় আয়োজনের সাক্ষী হওয়ার লোভও ছিল মনে। তাই বৃন্দাবন ও আমার আলাদা রেজিস্ট্রেশন করে নিজের খরচে গিয়েছি আমরা।’

প্রথমবার ছেলেদের বড় পর্দায় দেখে আপ্লুত শাহনাজ খুশি। তার বক্তব্য, ‘আমার ছেলেদের প্রথমবার বড় পর্দায় দেখলাম এবং এত বড় পর্দা; আমাদের দেশে নেই। সাউন্ড, প্রজেকশন প্রত্যেকটা জিনিস অসাধারণ। শো দেখলাম, আপ্লুত হলাম। দিব্য, সোম্যকে আলাদা করে বক্তব্য দিতে দেওয়া হলো, ওই মুহূর্তের সাক্ষী হলাম। এরপর ওরা সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর নিমন্ত্রণে ডিনার অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। দিব্য, সৌম্য আসলে আগে স্থায়ীভাবে মিডিয়ায় কাজ করতে চাইতো না। শখের বশে কাজ করতো। তবে ওখানে যাওয়ার পর সিনেমার এই পরিবেশ দেখে বিষয়টা নিয়ে খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছে।’

হলের মঞ্চে দিব্য ও সৌম্য, দর্শক সারি থেকে আনন্দের মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করছিলেন বৃন্দাবন দাস প্রদর্শনী শেষে টিমের সঙ্গে মঞ্চে উঠেছিলেন দিব্য-সৌম্যও। তারাও বিভিন্ন জনের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, কথা বলেছেন। সেই মুহূর্তে কেমন লেগেছিল খুশির? বললেন, ‘ওই সময়ে আমার পাশে যারা ছিল, তারা দেখেছেন আমি অনবরত কান্না করেছি। এখনও আমার গলা রুদ্ধ হয়ে আসছে, চোখে পানি। আসলে দিব্য, সৌম্যকে আমি নিজের সর্বস্ব ফেলে রেখে সময় দিয়েছি। ওদের গায়ের গন্ধ এখনও আমার নাকে লেগে আছে। সেই বাচ্চা দুইটা যখন হাজার হাজার বোদ্ধার সামনে কথা বললো, হলভর্তি মানুষ তালি দিলো, এটা অভাবনীয় অনুভূতি।’

‘নকশীকাঁথার জমিন’ ছবির গল্প মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। সেই সুবাদে উৎসবে দিব্য-সৌম্যর কাছে গল্পের প্রসঙ্গেও জানতে চান আগ্রহীরা। তখন তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে নিজেদের উপলব্ধির কথা জানান। ওই ব্যাখ্যা শুনেও মুগ্ধ হয়েছেন খুশি। তার কাছে এটা ‘অপার্থিব আনন্দ’র মতো লেগেছে।

দুই সন্তানের জন্য দোয়া চেয়ে গুণী এই অভিনেত্রীর ভাষ্য, “সবার কাছে দোয়া চাই, দিব্য-সৌম্য অনেক বড় তারকা না হোক, কিন্তু এরকম মানবিক মানুষ যেন থাকে। ওদের নিয়ে আমার মুগ্ধতার শেষ নেই। এই যুগের বাচ্চা, অথচ ওদের তেমন কোনও চাহিদা নেই। কিছু চেয়ে বাবা-মাকে জ্বালাতন করবে, এরকম না ওরা। উল্টো আমি যদি ওদের জন্য কোনও খরচ করতে চাই, ওরাই নিষেধ করে। এজন্য আমরা খুব বেশি ক্রাইসিসে পড়ি না। আমাদের দুজনের (খুশি ও বৃন্দাবন) পেশা তো নাটক, এটা থেকে আসলে ধনী হওয়া যায় না। অনেক চেষ্টা করে হয়তো বেঁচে থাকা যায়। একটা মানুষ (বৃন্দাবন) কলম ধরছে, আর আমি মাসে বড়জোর পাঁচ দিন শুটিং করি। এর থেকে আয় দিয়ে ঢাকার মতো ব্যয়বহুল শহরে টিকে থাকা খুব কঠিন। তো সেই জায়গায় দিব্য-সৌম্য আমাদের অবস্থাটা বুঝতে পারে, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।”

এ আর রহমানের সঙ্গে দিব্য-সৌম্য ও শাহনাজ খুশি বাবা-মায়ের মতো দুই ছেলেও অভিনয় ঘিরেই ক্যারিয়ার গড়বে কিনা জানতে চাইলে খুশি জানান, এ বিষয়টি দিব্য-সৌম্যর জন্য উন্মুক্ত। তারা যদি আগ্রহী হয়, অভিনয়ের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা মনে কাজ করে, তাহলে স্থায়ীভাবে কাজ করবে। বাবা-মা হিসেবে কিছু চাপিয়ে দিতে চান না খুশি-বৃন্দাবন।

/কেআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
দেশের প্রেক্ষাগৃহে আসছে নোলানের কালজয়ী দুই ছবি
দেশের প্রেক্ষাগৃহে আসছে নোলানের কালজয়ী দুই ছবি
পরীর টলিউড অধ্যায় শুরু
পরীর টলিউড অধ্যায় শুরু
নিজের যে স্বভাব লুকিয়ে রাখেন সারা
নিজের যে স্বভাব লুকিয়ে রাখেন সারা
চাঁদরাতে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নাটক
চাঁদরাতে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নাটক