এবার নববর্ষের (১৪ এপ্রিল) প্রথম প্রভাতে, সত্য-সুন্দরকে পাওয়ার অভিলাষী ছায়ানটের আহ্বান থাকবে, দূর করো অতীতের সকল আবর্জনা, ‘ধর নির্ভয় গান’।
সোমবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি আতিউর রহমান ও খায়রুল আনাম শাকিল, সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা ও যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত রায়।
দেশের ঐতিহ্যবাহী এই সাংস্কৃতিক সংগঠনটি এবারের বর্ষবরণের আয়োজন ও ধরণ লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তাতে জানানো হয়- ‘‘কোভিড অতিমারিকে দমিয়ে পৃথিবী আজ নতুন করে স্বাভাবিক-স্বচ্ছন্দ, মানবসমাজের এক অবিস্মরণীয় জয়। বাঙালির যেন চিরচেনা জীবনেই প্রত্যাবর্তন। কিন্তু জয়ের আবহের মধ্যেও বাঙালি আজ মুখোমুখি নতুন সংকটের। শুধু এই ভূখণ্ডই নয় বিশ্বব্যাপী ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, দেশে ক্রমান্বয় অবক্ষয় মূল্যবোধের। আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাইনা, স্বপ্ন দেখি হাতে হাত রেখে সকলে একসাথে মিলবার, চলবার। বাঙালি জাগবেই, সবাই মিলে সুন্দর দিন কাটানোর সময় ফেরাবে, পরম বিশ্বাসে বলবে সবারে বাসরে ভালো নইলে, মনের কালো ঘুচবে নারে। সার্থক হবেই হবে, মানুষ-দেশ, এ পৃথিবীকে ভালবেসে চলবার মন্ত্র। শুভ কর্মপথে আঁধার কাটিয়ে আলোর সন্ধানে সুদিনের পথে চলবো আমরা, বাঙালিকে বলবো- হাল ছেড় না। এবারের নববর্ষের প্রথম প্রভাতে, সত্য-সুন্দরকে পাওয়ার অভিলাষী ছায়ানটের আহ্বান, দূর করো অতীতের সকল আবর্জনা, ‘ধর নির্ভয় গান’।’’
জানানো হয় প্রস্তুতির কথাও, ‘পহেলা বৈশাখে (১৪ এপ্রিল) ভোরের আলো ফুটতেই রমনার বটমূলে আহীর ভৈরবের সুরে, ছন্দের বন্ধনে এবারের নতুন বছর আবাহনের শুরু হবে। গোটা অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে নতুন স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর আত্মবোধন-জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। বর্ষবরণ সার্থক করতে আন্তরিক নিষ্ঠায় মাস দুয়েক আগে থেকেই গান তোলা আর গলা মেলানোর কাজে নেমেছে শতাধিক ক্ষুদে ও বড় শিল্পী। রমনা উদ্যানের প্রায় দুঘণ্টাব্যাপী এই আয়োজন সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। দেখা যাবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও (www.chhayanaut.com/digitalplatformchhayanaut)।’
বরাবরের মতোই এবারের আয়োজনকে ঘিরে থাকছে জোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছায়ানট জানায়, ‘নতুন বছরকে বরণ করার এই আয়োজন সুষ্ঠু রাখতে অক্লান্ত সেবা দিয়ে চলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণপূর্ত অধিদফতর। ছায়ানট কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিরলস শ্রম দিয়ে চলেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা, লাউড ওয়ার্কস এবং থার্টিনথ হুসার্স ওপেন রোভার গ্রুপের নির্বাচিত সদস্যরা। এর মধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে শ’দেড়েক শিল্পী-কর্মীকে ধারণ করতে সমর্থ মঞ্চ।’
উঠে এসেছে চলমান রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়টিও। সংগঠনটি জানায়, ‘রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা করে, সকলকে নিয়ে শুভ কর্মপথে চলবার, কণ্ঠে নির্ভয়ের গান তুলে নেবার ছায়ানটের এই আয়োজন সার্থক হবে সর্বজনের সমর্থন, অংশগ্রহণ এবং উপলব্ধিতে।’
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি আমলের বৈরী পরিবেশে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ছায়ানটের যে যাত্রার সূচনা তা মূলত বাঙালির আপনসত্তাকে জাগিয়ে তুলবার, আপন সংস্কৃতিতে বাঁচাবার অধিকার ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটাবার জন্য ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে শুরু হয় বাংলা বছরকে আবাহনের আয়োজন।
‘কায়মনে বাঙালি’ হবার প্রত্যয় নিয়ে সেই থেকে পাঁচ দশক ধরে বাংলা বছরের প্রথম লগ্ন পহেলা বৈশাখের প্রত্যুষে মানুষের ভালোবাসাধন্য এই সংগঠন আপন সংস্কৃতির অনুষ্ঠান করে আসছে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রমনার বটমূল, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলা নববর্ষ আজ বিশ্বময় বাঙালির সবচেয়ে বড় মিলনমেলা, একটি জাতীয় উৎসব। এই উৎসব আপামর বাঙালিকে প্রাণিত করে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে।