X
বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
৭৬তম কান উৎসব

আঁ সাঁর্তা রিগা: বিজয়ী নির্মাতার অপেক্ষায় গাইলেন বিচারক!

মাহমুদ মানজুর, কান (ফ্রান্স) থেকে
মাহমুদ মানজুর, কান (ফ্রান্স) থেকে
২৭ মে ২০২৩, ০৪:০২আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১৭:৫৬

এমনটা সম্ভবত কান ইতিহাসে আর ঘটেনি, যেমনটি ঘটলো শুক্রবার (২৬ মে) পালে ভবনের দ্যুবুসি থিয়েটারে। এদিন সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা) বসেছে উৎসবের অন্যতম বিভাগ আঁ সাঁর্তা রিগা বিভাগের সেরা ছবির স্বীকৃতি দেওয়ার আসর। যে আয়োজনে ঘটেছে নতুন ইতিহাস, সেটি প্রকাশের আগে জেনে নেওয়া যাক এই বিভাগে বিচারকদের দৃষ্টিতে বিভিন্ন শাখায় সেরা ছবিসহ বিজয়ীদের নাম।

আঁ সাঁর্তা রিগা প্রাইজ জিতলো যুক্তরাজ্যের নারী নির্মাতা মলি ম্যানিং ওয়াকারের (প্রথম ছবি, যুক্তরাজ্য) ৯৮ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘হাউ টু হ্যাভ সেক্স’। এর বাইরে নিউ ভয়েস প্রাইজ পেয়েছে বালোজি (প্রথম সিনেমা, বেলজিয়াম) নির্মিত ‘অমেন’, অনসাম্বল প্রাইজ পেয়েছে জোয়াও সালাভিৎসা (পর্তুগাল) ও রেনে নাদের মেসোরা (ব্রাজিল) পরিচালিত ‘দ্য বুরিটি ফ্লাওয়ার’, ফ্রিডম প্রাইজ পেয়েছে মোহাম্মদ কোর্দোফানির (সুদান) ‘গুডবাই জুলিয়া’, সেরা নির্মাতার পুরস্কার পেয়েছেন ‘দ্য মাদার অব অল লাইস’ প্রামাণ্যচিত্রের জন্য আসমা এল মুদির (মরক্কো) এবং জুরি পুরস্কার পেয়েছে কামাল লাজরাক পরিচালিত ‘হাউন্ডস’ (প্রথম সিনেমা, মরক্কো)।

নির্মাতার অপেক্ষায় গাইছিলেন বিচারক এই পুরস্কারগুলো ঘোষণা ও প্রদানের সময় মঞ্চে ছিলেন কান উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো। তার আহ্বানে মঞ্চে আসেন আঁ সাঁর্তা রিগা’র প্রধান বিচারক হলিউড অভিনেতা জন সি. রাইলি। তার সঙ্গে মঞ্চে আরও উঠেছেন ফরাসি পরিচালক-চিত্রনাট্যকার অ্যালিস উইনোকোর, জার্মান অভিনেত্রী পলা বিয়ার, ফরাসি-কম্বোডিয়ান পরিচালক-প্রযোজক ডেভি শু এবং বেলজিয়ান অভিনেত্রী এমিলি দ্যুকেন।

এবারের আঁ সাঁর্তা রিগা’র গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো, বড়জোর দু’একটি প্রতিক্রিয়ায়। কিন্তু তার আগেই এই মঞ্চে গান গাইতে হলো বিভাগের প্রধান বিচারক জন সি. রাইলিকে! তাও আবার পরপর দুটি। দুটো গানই তাকে গাইতে হলো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই, বাধ্য হয়ে। কারণ, এবারের আয়োজনে যে ছবিটি (হাউ টু হ্যাভ সেক্স) সেরার পুরস্কার পেলো, সেটির পরিচালক (মলি ম্যানিং ওয়াকার) তখনও দ্যুবুসি থিয়েটারে পৌঁছাননি। তাও আবার তিনি আসছেন সরাসরি ফ্লাইট থেকে নেমে বিমানবন্দর হয়ে!

দৌড়ে এসে মঞ্চে উঠে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন নির্মাতা সবার শেষে ঘোষণা করা হয়েছিল মলি ও তার ছবিটির নাম। এ সময় তার প্রতিনিধি মঞ্চে উঠে মলির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান কান কর্তৃপক্ষকে। মূলত এরপরই এবারের আঁ সাঁর্তা রিগা’র আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু মলির প্রতিনিধি জানান, নির্মাতা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতেই উড়ে এসেছেন আজ (২৬ মে)। বিমানবন্দর থেকে তিনি এরমধ্যে রওনা দিয়েছেন। ভেন্যুতে ঢুকতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট লাগবে।

এমন তথ্য পাওয়ার পর প্রধান বিচারক তথা অভিনেতা জন সি. রাইলি গান ধরেন খালি গলায়। তাতে উপস্থিত সবাই দারুণ আনন্দ পান। সেটি শেষ হওয়ার পরেও যখন মলির দেখা নেই, তখন বাধ্য হয়ে আরও একটি গান ধরেন বিচারক। অবশেষে ৭ মিনিটের মাথায় দৌড়ে দ্যুবুসি থিয়েটারে ঢুকে সোজা মঞ্চে ওঠেন নির্মাতা মলি ম্যানিং ওয়াকার। তার পরনে ছিল কালো শর্টস, হলুদ টি-শার্ট আর পায়ে কেডস। মঞ্চে উঠেই জড়িয়ে ধরেন জন সি. রাইলিকে। এরপর পুরস্কারটি হাতে নেন।

কিছু বলতে বলা হয় মলিকে। কিন্তু কথা তো বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। কারণ, পালে ভবনের ফটক থেকে দ্যুবুসি অডিটোরিয়ামের মঞ্চ পর্যন্ত তিনি এক দৌড়ে এসেছেন। এরপর হাঁপাতে হাঁপাতেই বলেন, ‘এই ছবিটি আমার জীবনে ম্যাজিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স এনে দিয়েছে। যার ধারাবাহিকতা আজও হলো। সবাইকে ধন্যবাদ, আমার জন্য অপেক্ষা করার জন্য।’

এবারের আঁ সাঁর্তা রিগা’র অন্যতম দিক হলো ছয়টি পুরস্কারের তিনটিই নির্মাতাদের প্রথম ছবি।

আঁ সেঁর্তা রিগার বিচারকরা (বামে প্রধান বিচারক রাইলি) বলা দরকার, আঁ সাঁর্তা রিগা বিভাগের বিচারকদের সভাপতি হিসেবে থাকা অভিনেতা জন সি. রাইলি অভিনীত কান ইতিহাসে অফিসিয়াল সিলেকশনে স্থান পাওয়া ছবির তালিকায় রয়েছে লিন রামজের ‘উই নিড টু টক অ্যাবাউট কেভিন’ (মূল প্রতিযোগিতা, ২০১১), মাত্তেও গারোনে পরিচালিত ‘টেল অব টেলস’ (মূল প্রতিযোগিতা, ২০১৫), ইয়োর্গস লান্টিমসের ‘দ্য লবস্টার’ (জুরি প্রাইজ জয়, ২০১৫), তোঁমা বিদোগেয়াঁ পরিচালিত ‘দ্য কাউবয়েজ’ (ডিরেক্টরস’ ফোর্টনাইট, ২০১৫) এবং ক্লেয়ার ডেনি পরিচালিত ‘স্টারস অ্যাট নুন’ (গ্রাঁ প্রিঁ জয়, ২০২২)।

এবারের আঁ সেঁর্তা রিগা আসরে প্রতিযোগিতায় ছিল ২০টি চলচ্চিত্র। এরমধ্যে নবাগত পরিচালকদের কাজ ছিলো ৮টি। এবার এই বিভাগের জন্য নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছে মোহাম্মদ কোর্দোফানি পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘গুডবাই জুলিয়া’। কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে এবারই প্রথম উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানের কোনও ছবি জায়গা পেলো। ২০১১ সালে সুদান দুটি দেশে বিভক্ত হওয়ার আগে রাজধানী খার্তুমে এর শুটিং হয়েছে। ছবিটি ফ্রিডম প্রাইজ জিতে নেওয়ায় আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করলো সুদান। 

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
কানে গিয়ে যা শিখলেন সারা আলি খান
কানে গিয়ে যা শিখলেন সারা আলি খান
স্বর্ণপাম জিতলেন ফরাসি নারী
স্বর্ণপাম জিতলেন ফরাসি নারী
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সততা ও হাসিতে মজে প্রেম, অতঃপর বিয়ে...
সততা ও হাসিতে মজে প্রেম, অতঃপর বিয়ে...
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী তারকা টেইলর সুইফট
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী তারকা টেইলর সুইফট
দেড় দশকের নীরবতা ভেঙে বাজলো তিশার গান
দেড় দশকের নীরবতা ভেঙে বাজলো তিশার গান
বৃহস্পতিবার থেকে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মধ্যপ্রাচ্যের ‘অ্যানিমেল’
বৃহস্পতিবার থেকে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মধ্যপ্রাচ্যের ‘অ্যানিমেল’
উৎসবের দ্বিতীয় চমক তৌসিফ-তিশার প্রেম!
ক্লোজআপ রোম্যান্টিক ড্রামা ফেস্টিভ্যালউৎসবের দ্বিতীয় চমক তৌসিফ-তিশার প্রেম!