X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১
গীতিকবির গল্প

চার দশক পেরিয়ে সিনেমায় চমকে দেওয়া গীতিকবি

সুধাময় সরকার
০৫ জুলাই ২০২৩, ২০:৩৭আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:২৬

ভারত-বাংলাদেশে এখনও সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি শাসন করে গান। বলা হয়, সিনেমা হিট করার প্রথম শর্ত হচ্ছে সেই ছবির গান হতে হবে শ্রোতাদের পছন্দসই। আজকাল কনটেন্ট মুখ্য বটে, কিন্তু গানটা এখনও এই অঞ্চলে বড় ফ্যাক্টর হয়ে রয়েছে। সেটা বলিউডের শেষ হিট ‘পাঠান’ বলুন আর ঢালিউডের ‘পরাণ’-‘হাওয়া’ বলুন; ছবি হিট করার আগে-পরে গানটাই বেজেছে সবখানে।

সেই সূত্রে এই ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। বলা হচ্ছে পাঁচ ছবির মধ্যে তিনটিই নাকি হিট! কারণ, ছবির গানগুলোও মানুষের কানে কানে। নাম হিসেবে চলে আসে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’, আফরান নিশোর ‘সুড়ঙ্গ’ আর মাহফুজ আহমেদের ‘প্রহেলিকা’। এরমধ্যে দুটি ছবির পাঁচ গান একাই লিখে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন গীতিকবি আসিফ ইকবাল।

তালিকা টান দিলে দেখা যায়, ঈদের সিনেমার প্রকাশিত ১৪টি গানের মধ্যে সর্বাধিক ভিউ পাওয়া গানটিই হচ্ছে তার লেখা। ‘ও প্রিয়তমা’ নামের গানটি স্থান পেয়েছে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’য়।

হিমেল আশরাফ নির্মিত ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার টাইটেল গান এটি। কলকাতার আকাশ সেনের সুর-সংগীতে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন বালাম ও কোনাল। গত ২৭ জুন টাইগার মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশের পর গানটির ভিউ এখন (৫ জুলাই দুপুর) ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। এই গানের দৃশ্যে রোমান্টিক আবহে পারফর্ম করেছেন শাকিব খান ও ইধিকা পাল।

এখানেই শেষ নয় চার দশক ধরে গীতিকবিতায় মুগ্ধতা ছড়ানো আসিফ ইকবালের ঝলক। ঈদে মুক্তি পাওয়া আরেক আলোচিত সিনেমা মাহফুজ আহমেদের ‘প্রহেলিকা’র চারটি গান লিখেছেন এই কবি। এরমধ্যে দারুণ আলোচনায় আছে ‘মেঘের নৌকা’ গানটি। নিজের সুর ও সংগীতায়োজনে এতে কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান মাহমুদুল; সঙ্গে কোনাল। এই গানের দৃশ্যে প্রেমময় রসায়নে মজেছেন মাহফুজ আহমেদ ও শবনম বুবলী। গানটি উন্মুক্ত করা হয় বঙ্গ ও রঙ্গন মিউজিকের ইউটিউব চ্যানেলে। দুটো চ্যানেল মিলিয়ে বর্তমানে এর ভিউ ৭৫ লাখের বেশি। যা ঈদে প্রকাশিত ১৪টি সিনেমার গানের মধ্যে ২য় সর্বোচ্চ।

একই ছবির আরেক আলোচিত গান ‘হৃদয় দিয়ে’। সেমি-ক্লাসিক্যাল ঘরানায় এর সুর-সংগীত সাজিয়েছেন কিশোর দাস। গেয়েছেনও তিনি, সঙ্গে স্বরলিপি। নাসির উদ্দিন খান ও বুবলীকে দেখা গেছে গানের দৃশ্যে। গত ২২ জুন রঙ্গন মিউজিক ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত করার পর গানটির ভিউ এখন ৩ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি। তবে ভিউ ছাপিয়ে, এই গানটিকে বলা হচ্ছে ঈদের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গান হিসেবে।

আসিফ ইকবাল একই ছবিতে আসিফ ইকবালের লেখা অন্য দুটি গান হলো ইমন চৌধুরীর সুরে কণার কণ্ঠে ‘আয় বৃষ্টি আয়’ এবং পাভেল অরিনের সুরে ইমরানের কণ্ঠে ‘কইরো না পাগল’। যে গান দুটি আলাদা করে প্রকাশ না হলেও সিনেমায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন হল ফেরত দর্শকরা।

এই পাঁচ গান দিয়ে এবারের ঈদে চমকে দিয়েছেন গীতিকবি আসিফ ইকবাল। অনেকেই বলছেন, এতদিন এমন যোগ্য গীতিকবিরা সিনেমা থেকে দূরে ছিলেন বলেই গানগুলো এভাবে বাজেনি সবার কানে।

এ প্রসঙ্গে আসিফ ইকবাল বলেন, ‘হাজার কর্মব্যস্ততার মাঝেও জীবনের সবটুকু আনন্দ নিয়ে আমি গান লিখি। এবারের ঈদে আলোচিত দুটি ছবির গান লেখার দায়িত্ব যখন দিলেন দুই নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী (প্রহেলিকা) ও হিমেল আশরাফ (প্রিয়তমা), সত্যিই নতুন অভিজ্ঞতা হলো। আমার লেখনীর মধ্য দিয়ে ছবির গল্প ধরার চেষ্টা করেছি। শিল্পীরাও চমৎকার গেয়েছেন, নির্মাতারাও দারুণ দৃশ্যায়ন করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে গানগুলো যে দর্শকদের মন কেড়েছে, সেটিই আপাতত আনন্দের।’

এক ঈদের আলোচিত পাঁচ গানের জনক তিনি, অথচ চার দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এর আগে মাত্র চার ছবিতে ছয়টি গান লেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ঢাকা-কলকাতা মিলিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে করা সেই গানগুলোও প্রশংসা কুড়িয়েছে, তবে এবার যেন ডালা ভরে গানের কলি ছড়িয়ে দিলেন ঈদ উৎসবে। সফলতাও এলো সেই মাপে।

প্রশ্ন ছিল, সিনেমার গানে কেন এমন ধীরলয় কিংবা বিলম্ব পথচলা আসিফ ইকবালের। যার হাত ধরে টিভি রিয়েলিটি শোয়ের কালজয়ী গান ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট’-এর জন্ম হয়, সিনেমা নিয়ে তার লক্ষ্য কি তবে অটুট ছিল না গত চার দশক? 

জবাবে গীতিকবির কণ্ঠে বিনয় আর অপারগতার সুর। বললেন, ‘সিনেমায় তো আসলে যে পরিমাণ সময় দরকার, সেটা ছিল না আমার। করপোরেট অফিসে চাকরি করে আসলে সিনেমার জন্য তেমন সময় বের করতে পারিনি। এটাও ঠিক তেমন প্রস্তাবও পাইনি, যেমনটা এবার পেলাম। সিনেমার গান তো আসলে সহজ বিষয় নয়। এখানে লেখার আগে স্ক্রিপ্ট পড়তে হয়, নির্মাতার সঙ্গে বসতে হয়, গানটির প্রেক্ষাপট মাথায় নিয়ে সেটি লিখতে হয়। তো এবার সঠিক প্রস্তাবও পেলাম, যথেষ্ট সময়ও পেয়েছি নির্মাতাদের কাছে। সেজন্যই গানগুলো গান হয়ে উঠেছে বলে মনে করছি।’

আসিফ ইকবালের এবারের লক্ষ্য কিন্তু অটুট। তার ভাষায়, ‘এবার যে সাড়া পাচ্ছি, সেটা আমি কল্পনাও করিনি। ভাবছি, এখন থেকে নিয়মিত হবো সিনেমায়। কারণ, সিনেমায় আসলে ভিন্ন কিছু করা সম্ভব। আমি মনে করি, অন্যদেরও আসা উচিত সিনেমার গানে। অনেক মেধাবী গীতিকবি নানান কারণে সিনেমা থেকে দূরে সরে আছেন। তাদের সবাইকে সিনেমায় যুক্ত করতে পারলে ভালো গান হবে। সেটা দিনশেষে সিনেমারই উপকার হবে। কারণ, সিনেমাটা এখন আর দেশের প্রেক্ষাগৃহে আটকে নেই। এটা এখন গোটা বিশ্বে চলে যাচ্ছে। ফলে রিয়েলিস্টিক সিনেমার সঙ্গে মানসম্পন্ন গানটাও জরুরি।’ 

আসিফ ইকবাল চার দশকে আসিফ ইকবাল লিখেছেন ৫ শতাধিক গান। যার প্রায় সবগুলোই সিনেমার বাইরে, রেডিও, টেলিভিশন আর অডিওতে। তার লেখা প্রথম গান প্রকাশ হয় ১৯৮৪ সালে বিটিভিতে। সৈয়দ মনসুরের সুরে বন্ধন শিল্পী গোষ্ঠীর জন্য লেখা সেই গানটির নাম ‘অনেক তো বলেছি’।

এরপর আর থামেননি। লিখেছেন হাতভরে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জেমসের ‘অনন্যা’, নকীব খানের ‘স্বপ্ন জড়ানো’, নকীব-সামিনা চৌধুরীর ‘তুমি এলে পায়ে পায়’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘ভাঙা মন’, ‘বহুদূর যেতে হবে’, ‘পরিত্যক্ত ডায়েরিটা’, আশিকুজ্জামান টুলুর ‘এই দূর পরবাসে’, সামিনা-ফাহমিদা নবীর ‘আমার সকল সুখে বুবু’, নিলয়ের ‘হ্যাপি তোকে মনে পড়লে’, মাহাদির ‘সুনীল বরুনা’, ‘মেঘ হয়ে কাঁদো বলে’, ‘অন্যরকম’, মাহাদি-এলিটার ‘হৃদয়ে ঝড়ে’, ‘নিঝুম রাত’, ‘ভোরের শিশির’, সোয়েব-এলিটার ‘ঘুম হয়ে আজ থাকতে যদি’, মিনারের ‘কী তোমার নাম’, ‘বাড়াবাড়ি’, ‘একটুখানি’, ‘বাবা মায়ের জন্য’ প্রভৃতি।

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আচমকা এলো দেড় মিনিটের উসকানিমূলক ‘তুফান’!
আচমকা এলো দেড় মিনিটের উসকানিমূলক ‘তুফান’!
ঢাকার জ্যাম আর গরম নিয়ে প্রেমের গান!
ঢাকার জ্যাম আর গরম নিয়ে প্রেমের গান!
‘দেওরা’ সফলতার পর ‘মা লো মা’ চমক
‘দেওরা’ সফলতার পর ‘মা লো মা’ চমক
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সিনেমা নির্মাণে দিতিকন্যা, নির্বাহী প্রযোজক বাঁধন
সিনেমা নির্মাণে দিতিকন্যা, নির্বাহী প্রযোজক বাঁধন
কলিম শরাফীর জন্মশতবার্ষিকীতে শর্মিলার অ্যালবাম
কলিম শরাফীর জন্মশতবার্ষিকীতে শর্মিলার অ্যালবাম
উঠলো অভিযোগ, তবু অন্তর্জালে ‘মা লো মা’ ঝড়!
উঠলো অভিযোগ, তবু অন্তর্জালে ‘মা লো মা’ ঝড়!
‘চুম্বন’ দৃশ্য প্রসঙ্গে বিস্ফোরক এমিলি ব্লান্ট!
‘চুম্বন’ দৃশ্য প্রসঙ্গে বিস্ফোরক এমিলি ব্লান্ট!
বিচ্ছেদ নয়, যে কারণে বিয়ের ছবি মুছলেন রণবীর
বিচ্ছেদ নয়, যে কারণে বিয়ের ছবি মুছলেন রণবীর