X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
গীতিকবির গল্প

আমার কোনও সুরকার বেঁচে নেই, গান লেখাবে কে: মনিরুজ্জামান মনির

মাহমুদ মানজুর
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৪আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৭

যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়/ সে হারালো কোথায় কোন দূর অজানায়...; আলাউদ্দিন আলীর সুরে শাহনাজ রহমতুল্লাহর কণ্ঠে বিটিভির জন্য এমন কালজয়ী সমৃদ্ধ কথার গান যিনি রচনা করেছেন, তিনিই আবার লিখেছিলেন সিনেমার সুপারহিট গান ‘কি যাদু করিলা/ পিরিতি শিখাইলা...’। আলম খানের সুরে গানটি গেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর ও সাবিনা ইয়াসমিন। এ তো গেলো গীতিকবি মনিরুজ্জামান মনিরের বহুমাত্রিকতা নিয়ে একটি উদাহরণ। রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমায় এমন অসংখ্য উদাহরণ সৃষ্টি করে অনেকটা সাদামাটা জীবন নিয়ে নিঃসঙ্গ সময়ে বসে আছেন এই কিংবদন্তি গীতিকবি। এখনও যিনি রোজ অপেক্ষায় থাকেন, গান লেখার প্রস্তাব নিয়ে কেউ হয়তো ফোন করবেন কিংবা সিনেমার জন্য সুরকার-প্রযোজক-পরিচালকদের নিয়ে জমাটি আড্ডায় মাতবেন নতুন সৃষ্টির আশায়।

তেমনই এক পড়ন্ত বিকেলে হাতিরঝিলের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ‘রাইটার হাউজ’-এর আলো-আঁধারিতে বসে কথা হলো মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে। স্বাধীন বাংলাদেশের সংগীত ইতিহাসে যাকে বিবেচনা করা হয় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পর সর্বোচ্চ সফল গীতিকবি হিসেবে। গানের জন্য তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ পেয়েছেন একুশে পদক। এমন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি-অভিমান আর সফলতম দীর্ঘ ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিজীবনের প্রায় সবটুকু গল্প জানার প্রয়াসেই মুখোমুখি বসা এই ৭০ বসন্ত পাড়ি দেওয়া তরুণের। তার আগে ছোট করে জেনে নেওয়া যাক তার সংক্ষিপ্ত বায়োগ্রাফি-  

নাম: মনিরুজ্জামান (সার্টিফিকেট নেম), গানে মনিরুজ্জামান মনির
জন্মস্থান: তেঘরিয়া, সুনামগঞ্জ, সিলেট
জন্মকাল: ২৮/০১/১৯৫২
পড়াশুনা: আইএসসি- সুনামগঞ্জ কলেজ। বিএ-তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা।
পরিবার: স্ত্রী ফাতেমা মনির (মৃত)। দুই সন্তান- সুরেলা মনির আপন ও শোভনউজ্জামান। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মনিরুজ্জামান তৃতীয়।

মনিরুজ্জামান মনির পরিবারের প্রতিক্রিয়া

বাবার খুব আপত্তি ছিলো। তিনি চাইতেন তার ছেলে ডাক্তার হবে। যেহেতু সায়েন্সের ছাত্র ছিলাম মেট্রিক-ইন্টারমিডিয়েটে। তবে পরে সবাই গৌরবের সাথেই দেখেছে আমার গান লেখার কাজটি। কারণ গান লিখে আমার জীবন ও সংসার ভালোই চলতো। আমি পেশাদার গীতিকবি ছিলাম। এর বাইরে আমার আর কিছু ছিলো না।

বেতার দিয়ে শুরু

ইন্টারের সময় কবিতা লিখতাম। ছড়া লিখতাম। ঢাকার পত্রিকায় ছাপা হতো। তখন দৈনিক পয়গাম, দৈনিক পাকিস্তান, সবুজপাতায় নিয়মিত ছড়া লিখতাম। সুনামগঞ্জ শহরে থাকতাম তখন। কলেজে পড়ি। রেডিওতে প্রচুর ভারতীয় বাংলা গান শুনতাম। ঢাকা রেডিওর কমার্শিয়াল সার্ভিসের অনুষ্ঠানগুলোও শুনতাম। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হই গানে। তো আমার এক মামা উজির মিয়া ছিলেন সিলেট বেতারের কণ্ঠশিল্পী। বেশ জনপ্রিয় ছিলেন, হাছন রাজার গান গাইতেন। মূলত তার সুবাদেই আমার প্রথম গান লেখা। সেটি ছিলো ফোক গান। নামটি এখন মনে পড়ছে না। সেগুলো আসলে অফিশিয়াল কোনও গান না।

মনিরুজ্জামান মনির তবে এরপর যে গানটি লিখি সেটির নাম ‘আঁধারে আছি’। গেয়েছেন ওস্তাদ গোপাল দত্ত। ওনার কাছে গানও শিখতাম। পরে অবশ্য ছেড়ে দিয়েছি। এগুলো ১৯৭০ সালের আগের কথা। সিলেট বেতারে তখন এনলিস্টেড করে দেন তিনি। এরপর প্রথম বাংলাদেশ বেতারের জন্য গান লিখি ১৯৭২ সালে। নাম ‘ও রূপসী ও ষোড়শী’। প্রণব দাশের সুরে গানটি গেয়েছিলেন আকরামুল ইসলাম। ঢাকা বেতারের কমার্শিয়াল সার্ভিসে গানটি প্রচার হয়।

টেলিভিশনে যেভাবে প্রবেশ

১৯৭৩/৭৪ সাল। রেডিওর মাধ্যমে আমার সঙ্গে সুরকার আবু তাহেরের পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে পরিচয় হয় তরুণ আলাউদ্দিন আলীর সাথে। আলী ছিলেন আবু তাহেরের চাচা। ওনার মাধ্যমে ১২টা ফোক গান করি প্রথম বিটিভির জন্য। সবগুলো আলাউদ্দিন আলীর সুরে। মুসা আহমেদ ছিলো প্রযোজক। এগুলোর ভিডিও হয়েছিল। তখন ফোক গানই লিখতাম বেশি। পরে যেমন সিনেমায় ‘নাই টেলিফোন’, ‘কি যাদু করিলা’, ‘কি দিয়া মন কাড়িলা’- এগুলো লিখেছি। তখন আসলে আবেগে গান লিখেছি। টাকা পয়সার জন্য না। তখন সারাদিন ঘুরতাম রেডিও টেলিভিশনে। এরপর ১২টা গান লেখার সুবাদে বিটিভিতে এনলিস্টেড হয়ে গেলাম।

গান তৈরির ফাঁকে সাবিনা ইয়াসমিন, আলাউদ্দিন আলী, মনিরুজ্জামান মনির ও এন্ড্রু কিশোর গান লিখে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ

‘বর্ণালী’ নামের একটা অনুষ্ঠান ছিলো বিটিভিতে। নওয়াজীশ আলী খানের প্রযোজনায় ওটা একক সংগীতানুষ্ঠান ছিলো। তো শাহনাজ রহমতুল্লাহর জন্য এই অনুষ্ঠানে তিনটি গান লিখি। ‘মানিক সেতো মানিক নয়’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ ও ‘জীবনটা দু-দিনের’। এরমধ্যে ‘মানিক সেতো মানিক নয়’ ছিলো বাংলা গজল ঘরানার। গানটি খুব হিট করে। আলাউদ্দিন আলীর সুরে। এটা ৭৯/৮০ সালের কথা। এরপর একই অনুষ্ঠানের ‘প্রথম বাংলাদেশ’ গানটিও দারুণ হিট করে। এই গানটি শুনে আমাকে বঙ্গভবনে ডেকে পাঠান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি। প্রশংসা করলেন, আর্থিক পুরস্কার দিলেন। এমনকি শিল্পকলায় চাকরিও পেলাম।

বদলে যাওয়া জীবন

এরপর দ্রুত বদলে যেতে থাকলো আমার জীবন। আলাউদ্দিন আলী সুরকার হিসেবে সিনেমা পেতে শুরু করলেন। আমি তো তার ছায়া-সঙ্গী। ১৯৮০ সালের দিকে। আমাদের প্রথম ছবি ‘সন্ধিক্ষণ’। প্রযোজক ডাব্লু। পরিচালক মীর মোহাম্মদ হালিম। এতে দুইটা না তিনটা গান করেছি আমরা। এরমধ্যে ‘চলতে পথে বাধা আসে’ গানটি সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছিলেন। সিনেমায় অভিনয় করেছিলো শাবানা ও ওয়াসিম। তখন গাজী মাজহারুল আনোয়ার ভাইয়ের হাতে সিনেমার ৯৯ ভাগ গান। তাকে পাশ কাটিয়ে সিনেমায় জায়গা পাওয়া সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো বিষয় ছিলো।

তবুও প্রায় ১০ বছর একটু একটু করে চেষ্টার পর ৯০-এর দিকে মোটামুটি আমি সেট হতে পেরেছি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে। মানে বেশিরভাগ সুরকারের সঙ্গে গান করতে পারছিলাম তখন। তবে আলাউদ্দিন আলী দিয়ে শুরু করে আলম খানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। এমনিতে ৯০ দশকের সব সুরকারের সঙ্গেই আমার গান করার সুযোগ হয়েছে কম-বেশি।

মনিরুজ্জামান মনির গানের সংখ্যা

এক হাজার তো হওয়ার কথা। প্রায় দুইশ ছবিতে কাজ করেছি। এটার পূর্ণ সংখ্যা আমার কাছে এখনও নেই। ইচ্ছা আছে সব সংগ্রহ করে একটা বই বের করার।

৩০০ টাকায় শুরু

তখন (৮০ থেকে ৯০ দশক) পরিবেশটা ছিলো যারা গান করছিলেন গানই করছেন। গান ছাড়া কিছু নাই। টিভির বাজার সিনেমার বাজার সব হিট। ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী’, ‘সূর্যদয়ে তুমি’- এমন অসংখ্য হিট গান বিটিভিতে লিখেছি। তখন টাকা পয়সা নিয়ে কোনও ক্ষুধা ছিলো না। দিন কাটলেই চলতো। ইনকাম তখন খুব কম ছিলো। প্রতি গান ৩০০ টাকা দিয়ে শুরু করি। পরে সত্য সাহা সাতশ টাকা করলেন। ২০০৭ সালে সিনেমায় শেষ গান লিখি ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও’। এটা লিখে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিলাম।

মনিরুজ্জামান মনির রুনা লায়লা থেকে কুমার শানু

৯০ সালের আগে একবার হঠাৎ রুনা লায়লা আলাউদ্দিন আলীকে কলকাতা নিয়ে যান। আলীর সুরে সাতটা গান করান আমার কথায়। এইচএমভি’র ব্যানারে। সেখানে ছিলো ‘বাড়ির মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছে’ (সারা ভারতে হিট হয়), ‘শেষ করো না শুরুতে খেলা’- এগুলো সেই প্রজেক্টের গান।

এর বাইরে কলকাতার সঙ্গে আমার আরেকটি বড় স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেটা হলো কুমার শানু। তার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র বা রেকর্ডের গান হলো আমার লেখা। ‘তিন কন্যা’ সিনেমার টাইটেল গান ছিলো সেটি। আলম খানের সুরে গানটি লিখেছিলাম। আমরা কলকাতা গিয়ে শানুকে দিয়ে এই গানটা করি। বলিউড জয় করার পর শানু এটা স্বীকার করতো না। পরে আলম ভাইয়ের কাছে রুনা লায়লার মাধ্যমে ভুল স্বীকার করেছে। এরপর আমার লেখা আরও অনেক গান করেছে কুমার শানু।

৮০ দশকে ফকির আলমগীর, এন্ড্রু কিশোর, মনিরুজ্জামান মনির ও ফিরোজ সাঁই সমসাময়িক গীতিকবি

আমার সমসাময়িক গীতিকবি ছিলেন নজরুল ইসলাম বাবু। তার সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব ছিলো আমার। তবে আমাকে পাল্লা দিতে হয়েছে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গে। মজার বিষয় হলো, তখন কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনও প্রতিযোগিতা বা হিংসা ছিলো না। বরং গাজী ভাইকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতাম। আমাদের মধ্যে তিক্ততা হয়নি কখনও। দেখা হলেই উনি বলতেন- ‘আমার পরে আর কে আছে। তুমিই তো আছো।’ এটাই তো আমার জন্য অনেক প্রাপ্তি।

তখন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ছিলেন। ভালো। তার গানে কাব্য ছিলো। মুন্সি ওয়াদুদ ছিলেন। বেশি লিখতেন না। আমার গানে কাব্য হয় তো ছিলো না অতো। কিন্তু আমার লেখা ছিলো সিনেমার সূত্র ধরে। সিকোয়েন্স যা চায় আমি তাই দিতাম। রুনা লায়লার জন্য লিখলাম ‘তোমাকে চাই আমি আরও কাছে’। সিকোয়েন্স এটাই ডিমান্ড করছিলো। ফলে সেখানে আমি কাব্য বা সাহিত্যমান নিয়ে ভাবিনি। যেমন ‘প্রাণ সজনী’র গানে ‘কি জাদু করিলা’। সহজ কথার গান। যেটা দর্শকরা নিজের সঙ্গে মেলাতে পারে। সেটাই লিখেছি। এই বিষয়টা গাজী ভাইর মধ্যেও ছিলো। চলচ্চিত্রে এটাই দরকার, সরল ভাষা।

তারকা বন্ধু

ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক হয়। জাফর ইকবালের সঙ্গেও খুবই আত্মিক সম্পর্ক ছিলো। আনোয়ার পারভেজ, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, জাফর ইকবাল- এদের সঙ্গে তো পারিবারিক সম্পর্ক ছিলো আমার। এখনও আফসোস হয় জাফর ইকবালের জন্য। ওকে খুব দরকার ছিলো এই ইন্ডাস্ট্রিতে। আমার কথায় ওর তিনটা হিট গান রয়েছে। এগুলো হলো ‘শেষ করো না’, ‘বিদেশ ঘুরে দেশে এলে’ এবং ‘সুখে থাকো’।

মনিরুজ্জামান মনির এখনও অপেক্ষা

এখন আমার কোনও সুরকার বেঁচে নেই। শিল্পী নেই। আলাউদ্দিন আলী, আলম খান, আবু তাহের, আলী হোসেন, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, সত্য সাহা, সুবল দাস- কেউই তো বেঁচে নেই। আমাকে দিয়ে লেখাবে কে? এখন আর কেউ আমাকে ডাকে না। এমন নয় যে আমি আর লিখতে পারি না। ইউটিউবের জন্য এখনও টুকটাক লিখি। কিন্তু সিনেমায় তো আমার প্রাণ পড়ে থাকে। অথচ সেখান থেকেই ডাক পাই না। এটা বলতে লজ্জা নেই। অথচ এখনও আমি রোজ অপেক্ষায় থাকি।

শেষ সিনেমা

শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস অভিনীত ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’ সিনেমার জন্য সর্বশেষ লিখেছিলাম। আলী আকরাম শুভর সুরে ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও’ গানটিও বেশ হিট করেছিলো। গেয়েছিলো এন্ড্রু কিশোর ও কনক চাঁপা।

মনিরুজ্জামান মনির নিজের লেখা পছন্দের এক ডজন

১. চলতি পথে বাধা আসে
২. কি যাদু করিলা
৩. কারে ডাকে ঐ বাঁশি
৪. একদিন তোমায় না দেখিলে
৫. এই জীবন তো একদিন চলতে চলতে থেমে যাবে
৬. জীবন মানেই যন্ত্রণা, নয় ফুলের বিছানা
৭. এখানে দুজনে নিরজনে
৮. প্রথম বাংলাদেশ
১০ সূর্যদয়ে তুমি
১১. হারানো দিনের মতো
১২. এক বিন্দু ভালোবাসা দাও

স্ত্রী ও নাতির সঙ্গে মনিরুজ্জামান মনির পদক ও আক্ষেপ

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি- ‘দুই জীবন’ (১৯৮৮), ‘চেতনা’ (১৯৮৯) ও ‘দোলনা’ (১৯৯০) ছবিতে গান লেখার সুবাদে। এরপর ২০০৪ সালে পাই একুশে পদক। এরমধ্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তিনটি কদিন আগে চুরি হয়ে গেলো। উদ্ধারের নাম নেই সরকার ও পুলিশের। আমার গান যে হারে জনপ্রিয় ছিলো। অন্তত ১০টা জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিলো। পাইনি।

এখন যেমন জীবন

ছেলে যুক্তরাষ্ট্র থাকে। মেয়ে আমার সাথেই আছে। চাকরি করে। আমার প্রাত্যহিক জীবন কাজের লোক নির্ভর। মেয়ে সকালে অফিসে চলে যায়। সারাদিন একাই থাকি। হাঁটি। গান লিখি। শুনি। ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি গান লিখেছি সম্প্রতি। ন্যানসি গেয়েছে। আরেকটি গান ডলি সায়ন্তনী গেয়েছে। আরও কিছু গান হয়ে আছে। ইউটিউবের জন্য।  

সামনের স্বপ্ন

আমার গানগুলোর কথা সংগ্রহ করতে চাই। এরমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। ইচ্ছা বই বের করার। নাম দিয়েছি ‘সূর্যদয়ে তুমি’। সরকারের কাছে রাষ্ট্রের কাছে তেমন প্রত্যাশা নেই। একুশে পদক পেয়েছি। স্বাধীনতা পদক যদি পাই- তাহলে নিজের জীবনে আর কোনও অপ্রাপ্তি থাকবে না।

মনিরুজ্জামান মনিরের রাইটার হাউজ এ প্রজন্মের গীতিকবিরা

বললে তো মাইন্ড করবে সবাই। আমার কথা স্পষ্ট- সিনেমার গান হবে সিকোয়েন্স ধরে সরল ভাষায়। এরমধ্যে কিছু সিনেমার গান হিট হয়েছে। বাট আমার, গাজী ভাই বা রফিকউজ্জামানের গান যেভাবে হিট হতো, সেটা তো এখন হয় না। ফলে এই প্রজন্মের গীতিকবিদের প্রচুর শুনতে হবে। রবীন্দ্র, নজরুল, ফোক সব শুনতে হবে। পড়তে হবে। তারচেয়ে বড় বিষয় সিকোয়েন্স যেটা দাবি করবে সেটাই সহজ ভাষায় লিখতে হবে।
আগে আমরা সবাই এক ঘরে বসতাম। সুরকারের বাসায় বা পরিচালকের বাসায় বা প্রযোজকের বাসায়। সবাই বসে আলাপ করে- সবার সামনে বসে লিখতাম। প্রতিটা লাইন শোনাতাম সবাইকে। তারা যদি বলতো হয়নি। আবার লিখতাম। প্রতিটি গান একটা পরীক্ষার মতো ছিলো। কখনও সুরকার হারমোনিয়াম বাজিয়ে লা লা লা করতেন। সেটা শুনে লিখতাম। তখন এসব কঠিন লাগতো না। খুব সহজেই লিখে ফেলতাম। এখন সেসব ভাবলে অবশ্য একটু অবাকই লাগে।

রেকর্ডিংয়ের ফাঁকে ন্যানসি ও মনিরুজ্জামান মনির পেছনে তাকালে...

দুঃখ লাগে। বার বার মনে হয়, ঐ সময়টা যদি ফিরে পেতাম। আবার যদি লিখতে পারতাম। খারাপ লাগে। মাঝে মাঝে ফিল হয়। অবাক লাগে এতগুলো বয়স পার করলাম কোন ফাঁকে। তবুও স্বস্তি- এখনও সুস্থ আছি। বেঁচে আছি। আমার সাথের তো কেউ নেই। বড় একা সময় এখন।

এখনও অপেক্ষায় থাকি সিনেমায় ডাক পাওয়ার। অনুপম রেকর্ডিং থেকে গানের জন্য প্রতি মাসে রয়্যালটি পাই। শিল্পকলার চাকরির সুবাদে পেনশন পাই। অভাব সে অর্থে নাই। ঢাকায় একটা বাড়ি আছে। শুধু সিনেমার জন্য গান লিখতে না পারার অভাবটা কুঁড়ে খাচ্ছে আমায়। এই থাকাটাও না থাকার মতোই।

দোয়া চাই সবার কাছে, যেন বাকি জীবন সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকতে পারি। আলম খানের সঙ্গে মনিরুজ্জামান মনির

ছবি: মামাগ্রাফি ও সংগৃহীত

/কেআই/এমএম/
সম্পর্কিত
অনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
গীতিকবির গল্পঅনেক কিছুই ইচ্ছে করে, কিন্তু করা যায় না: মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
মনিরুজ্জামান মনির: জন্মদিনে জানালেন বই প্রকাশের খবর
মনিরুজ্জামান মনির: জন্মদিনে জানালেন বই প্রকাশের খবর
গানের জন্য একমাত্র পুত্রকে হারানো এবং...
গীতিকবির গল্পগানের জন্য একমাত্র পুত্রকে হারানো এবং...
যে দেশে বৃক্ষ নাই, সেখানে ভেরেণ্ডা গাছই বটবৃক্ষ: নাসির আহমেদ
গীতিকবির গল্পএখন হরিদাস পালই হয়ে গেছে শামসুর রাহমান: নাসির আহমেদ
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
প্রেক্ষাগৃহ থেকে না নামতেই উঠলো পাঠ্যসূচিতে!
গানে গানে সরকারের সমালোচনা, ইরানি গায়কের মৃত্যুদণ্ড
গানে গানে সরকারের সমালোচনা, ইরানি গায়কের মৃত্যুদণ্ড
ঢাকাই নির্বাক ছবির মস্কো জয়, যেমনটা বললেন নির্মাতা
ঢাকাই নির্বাক ছবির মস্কো জয়, যেমনটা বললেন নির্মাতা
ফুরফুরে মেজাজে পান্নু
ফুরফুরে মেজাজে পান্নু