X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
বুসান ডায়েরি-৪

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো!

জনি হক, বুসান (দক্ষিণ কোরিয়া) থেকে
জনি হক, বুসান (দক্ষিণ কোরিয়া) থেকে
১২ অক্টোবর ২০২৩, ২০:২৩আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ২০:২৪

বুসান সিনেমা সেন্টারের ডাবল কোন ভবনের নিচতলা যেন বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (বিআইএফএফ) স্মৃতির মণিমালা। এর একটি অংশে উৎসবটির ২৫টি অফিসিয়াল পোস্টার ফ্রেমে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালে। আরেক পাশে দুটি ডিজিটাল পর্দায় উৎসবটির সব পোস্টার দেখার অপশন রয়েছে। 

ডাবল কোনের পাশেই বিআইএফএফ হিলের তৃতীয় তলায় প্রেস সেন্টারের প্রবেশপথের দুই পাশে ২৮টি পোস্টার ফ্রেমে সাজানো। ১৯৯৬ সালের পোস্টারটি চোখে পড়ে শুরুতে। এতে সর্বশেষ সংযোজন ২০২৩ সালের পোস্টার। সবই এই শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের স্মারক। এরমধ্যে ১৫টির নাম পুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (পিআইএফএফ)। বাকি ১৩টির নাম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (বিআইএফএফ)। প্রশ্ন আসতেই পারে, পুসান এবং বুসান কি আলাদা উৎসব? উত্তর হলো– না। স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল জাগতে পারে ভেবে যে, তাহলে নামের এই ভিন্নতা কেন।

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো! ২৩ বছর আগের কথা। তখনও দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরের নাম ছিল পুসান। কোরিয়ান বর্ণমালায় রোমানাইজেশন পদ্ধতি সংশোধনের মাধ্যমে ২০০০ সালে দেশটির সরকার এটি পরিবর্তন করে। ব্র্যান্ডিংয়ের কথা ভেবে চলচ্চিত্র উৎসবটির নামও পুসান থেকে হয়ে গেছে বুসান।

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো! ১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয় নয় দিনের প্রথম পুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (পিআইএফএফ)। ২০১০ সাল পর্যন্ত এই নামেই প্রতিবছর উৎসব হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে এর নামকরণ হয় বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (বিআইএফএফ)। সেই বছরের ৬ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর বুসান সিনেমা সেন্টারে ছিল ১৬তম আসর। এর এক মাসেরও কম সময় আগে বুসান সিনেমা সেন্টারের উদ্বোধন হয়। উৎসবটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কিম ডং-হো অবসর নেওয়ার পর ১৬তম আসর থেকে একই দায়িত্ব পালন শুরু করেন লি ইয়ং-কোয়ান।

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো! বুসান উৎসব এশিয়ান চলচ্চিত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হিসেবে স্বীকৃত। ২৮ বছর ধরে আয়োজিত বার্ষিক উৎসবটি শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্যে সীমিত থাকেনি, সেই সঙ্গে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চলচ্চিত্র নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিয়ে এশিয়ান চলচ্চিত্র শিল্পের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ফলে বুসান শহরটি হয়ে উঠেছে এশিয়ান চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র।

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো! বুসান সিনেমা সেন্টারের ঠিক উল্টো দিকে মূল সড়ক পেরোলেই এপিইসি নারু পার্ক। সুইয়ং নদীর তীরে এটি অবস্থিত। এখানে অনেক গাছ-গাছালি। পার্কে বসার জন্য অনেক টেবিল। অনেকে এখানে বসে বই পড়েন। কেউ কেউ প্রিয়জনকে নিয়ে গল্প করে সময় কাটান। হাঁটা ও জগিংয়ের জন্য আছে পরিপাটি পথ। ভেতরে দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি ভাস্কর্য। পার্কের প্রবেশপথে সড়কের ধারে হালকা ও গাঢ় সবুজ, হলুদ আর সাদা রঙের প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বানানো একটি শিল্পকর্ম। রাতে এটি আলোকিত হয়ে উঠলে চোখ আটকে থাকে!

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো! বুসান সিনেমা সেন্টারের সিনে মাউন্টেন অংশের সামনে রুপালি বিশাল লম্বা একটি ভাস্কর্য। সোজাসুজি দেখলে মনে হয় একজন নারীর অবয়ব। কিন্তু যেকোনও এক পাশে গেলে দেখা যায়, ঈগল পাখি ডানা মেলেছে! ভাস্কর্যের দিক থেকে আরেক পাশে দৃষ্টি সরালে টিভি-রেডিও চ্যানেল কেএনএন-এর বহুতল কার্যালয় চোখে পড়ে। এখানে বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের কয়েকটি আলোচনা অনুষ্ঠান ছিল।

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো! সিনে মাউন্টেনের আরেক পাশে ‘থিয়েটার ইজ নট ডেড’ বুথ। এখানে টি-শার্ট, কেডস, মোবাইল ফোনের কাভার, চাবির রিংসহ উৎসবের বার্তা সংবলিত বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ দোকানটির সামনে লাল রঙে ইংরেজি চার অক্ষর বিআইএফএফ-এর একটি শিল্পকর্ম এবং বিআইএফএফ-এর কাটআউট রাখা। অনেকে এগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। তবে একসঙ্গে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েন না। একজনের ছবি তোলা হলে অন্যজন সামনে গিয়ে দাঁড়ান। মাঝে মধ্যে দেখা যায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই।

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো! বুসান শহর নিয়ম মেনে চলে। এখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভাবনীয়। কোথাও ময়লা-আবর্জনা নেই। মূল সড়ক এতটাই ঝকঝকে যে, দেখলে মনে হবে একটু আগেই বুঝি ধোয়ামোছা করা হয়েছে! অনেকাংশে শহরের সৌন্দর্যবর্ধন করছে ফুলের আবেশ। ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে এগোলে আশেপাশে ফুল চোখে পড়বেই! বুসান সিনেমা সেন্টারের বিআইএফএফ হিলের বহির্ভাগে সড়কের ধারে নানান রঙের ফুল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এবারের উৎসবে দুটি প্রতিযোগিতায় থাকা বাংলাদেশের তিনটি ছবির বিলবোর্ডের পাশ ঘেঁষে ফুল চোখে পড়ে।

পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো! বুসান দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শিল্প এলাকা। এখনকার বাসিন্দা এখন ৩৬ লাখ। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের পর এটাই দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল শহর। জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো ক্রিয়েটিভ সিটিস নেটওয়ার্কে ২০১৪ সালে ‘সিটি অব ফিল্ম’ তথা চলচ্চিত্রের শহর হিসেবে বুসান এবং ব্রাজিলের সান্তোসকে যুক্ত করা হয়েছে। ২০০২ সালের জুনে ১৭তম ফিফা বিশ্বকাপে ফ্রান্স বনাম উরুগুয়ে এবং দক্ষিণ কোরিয়া বনাম পোল্যান্ডের ম্যাচ দুটি হয়েছে বুসানে। পুসান কীভাবে বুসান হয়ে গেলো!

/এমএম/
সম্পর্কিত
থমথমে ঢালিউডে দম দিতে এলো ‘ভাইরাল বেবি’!
থমথমে ঢালিউডে দম দিতে এলো ‘ভাইরাল বেবি’!
ইউরোপীয় হাওয়ায় শুরু হলো টোকিও উৎসব, ফোকাসে বেগম রোকেয়া
ইউরোপীয় হাওয়ায় শুরু হলো টোকিও উৎসব, ফোকাসে বেগম রোকেয়া
শেষবেলায় সাগরপাড়ে, সিউলে চাটগাঁইয়া খাবারের পসরা
বুসান ডায়েরি-৬শেষবেলায় সাগরপাড়ে, সিউলে চাটগাঁইয়া খাবারের পসরা
গিনেস রেকর্ডধারী ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং ‘এশিয়ার কান’
বুসান ডায়েরি-৫গিনেস রেকর্ডধারী ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং ‘এশিয়ার কান’
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সাংবাদিক হতে চেয়ে অভিনেত্রী!
সাংবাদিক হতে চেয়ে অভিনেত্রী!
মুবিতে মুক্তি দেশি মুভি
মুবিতে মুক্তি দেশি মুভি
মে দিবসে ফুঁসে উঠলেন সিনেমা শ্রমিকরা
মে দিবসে ফুঁসে উঠলেন সিনেমা শ্রমিকরা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা