X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
বুসান ডায়েরি-৫

গিনেস রেকর্ডধারী ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং ‘এশিয়ার কান’

জনি হক, বুসান (দক্ষিণ কোরিয়া) থেকে
জনি হক, বুসান (দক্ষিণ কোরিয়া) থেকে
১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০১:১৯আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০১:১৯

বুসান সিনেমা সেন্টার মূল সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে। ঠিক উল্টো পাশে শিনসেগে ডিপার্টমেন্ট স্টোর আরও উঁচু। এটি মূলত দুটি বিশাল আকারের ভবন। একটি থেকে আরেকটিতে যাওয়ার সংযোগ সেতু আছে। ফলে বাইরে না বেরিয়েই ভবন বদলানো যায়‍! এর আয়তন ৩১ লাখ ৬৩ হাজার বর্গফুট। শিনসেগে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, প্রেক্ষাগৃহ, টেসলা গাড়ির শোরুম, বরফ স্কেটিংয়ের রিং, স্পাসহ সব আছে। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ ডিপার্টমেন্ট স্টোর হিসেবে ২০০৯ সালের ২৬ জুন গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছে এটি। ভবনের সামনে বিশ্বরেকর্ডের সেই ফলক চোখে এড়ালো না।

গিনেস রেকর্ডধারী ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং ‘এশিয়ার কান’ শিনসেগের ভেতরে চাকচিক্য আর জৌলুসের অভাব নেই। কিন্তু আমাকে মুগ্ধ করেছে ত্রেভি ফোয়ারা। লটে ত্রেভি প্লাজার সামনে দৃষ্টিনন্দন শ্বেতশুভ্র ভাস্কর্যের জলপ্রপাত। কী নিপুণ কারুকাজ! এ যেন রোমের এক টুকরো নিদর্শন। ইতালির রাজধানী রোমে অবস্থিত পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ত্রেভি ফোয়ারার রেপ্লিকা এটি। ১৭৬২ সালে ত্রেভি ফোয়ারা গড়ে তোলা হয়। বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘রোমান হলিডে’ (১৯৫৩), ‘থ্রি কয়েনস ইন দ্য ফাউন্টেন’ (১৯৫৪), ‘লা দলচে ভিতা’ (১৯৬০), ‘সাবরিনা গোজ টু রোম’ (১৯৯৮), ‘দ্য লিজি ম্যাকগুইয়ার মুভি’তে (২০০৩) এই কৃত্রিম ঝরনা দেখা গেছে। ‘থ্রি কয়েনস ইন দ্য ফাউন্টেন’ ছবির টাইটেল সং অস্কারে সেরা মৌলিক গানের পুরস্কার জিতেছে। গিনেস রেকর্ডধারী ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং ‘এশিয়ার কান’

শিনসেগে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ত্রেভি ফোয়ারার রেপ্লিকা প্রতিদিনই নানান বয়সী মানুষকে আকর্ষণ করে। মেট্রোরেল থেকে নেমে এসেকেলেটরে ওপরে উঠলেই চোখে পড়ে এটি। অনেকে এখানে ছবি তোলেন। কেউ কেউ বসে বই পড়েন। বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিন ব্যস্ততা কিছুটা কম থাকায় অনেকক্ষণ এখানে কাটানো গেলো।

গিনেস রেকর্ডধারী ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং ‘এশিয়ার কান’ বুসান শহরের সেন্টাম সিটি এলাকাটি শপিংয়ের জন্য সুপরিচিত। প্রাডা, গুচিসহ বিশ্বের দামি সব ব্র্যান্ডের শো-রুম এখানে। বুসানে ২০৩০ সালে হবে ওয়ার্ল্ড এক্সপো। বুসান সিনেমা সেন্টারের একপাশে পেঙ্গুইন আকৃতির একটি পুতুলের গায়ে ভালোবাসার প্রতীকে সেই তথ্য লেখা। এর পাশেই দামি একটি গাড়ি নানা রঙে সাজিয়ে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।

গিনেস রেকর্ডধারী ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং ‘এশিয়ার কান’ বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিনে সিনেমাউন্টেন অংশের সামনে রোজকার মতো ভ্রাম্যমাণ খাবারের গাড়িগুলো নেই। লোকজন হাতেগোনা। চারদিক নিস্তেজ। বিআইএফএফ হিলের নিচ তলার ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি বুথ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দোতলার প্রেস সেন্টার দুপুর গড়াতেই বন্ধ। তিন তলার প্রেস রুমে বসে সমাপনী আয়োজনের মহড়া দেখছিলাম। নিউ কারেন্টস বিভাগে বাংলাদেশের পুরস্কার জয়ের খবর জানাজানি হয়ে যাওয়ায় বিদেশি কয়েকজন সাংবাদিকের অভিনন্দনে সিক্ত হলাম। আড়াই বছর আগে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পাওয়ায় দক্ষিণ ফ্রান্সে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের প্রতি এমন কদর দেখেছিলাম। সেই সুখস্মৃতির যেন পুনরাবৃত্তি ঘটলো!

গিনেস রেকর্ডধারী ডিপার্টমেন্ট স্টোর এবং ‘এশিয়ার কান’ কানের সঙ্গে বুসানের বেশকিছু মিল। দুটোই সমুদ্রতীরবর্তী শহর হিসেবে জনপ্রিয়। বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে ‘এশিয়ার কান’। প্রতিবছর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সিনেমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতার কাজ থাকে বুসানে। এবারের আসরের আইকনস বিভাগকে মনে হয়েছে গত মে মাসে অনুষ্ঠিত ৭৬তম কান উৎসবের প্রতিলিপি! এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য– স্বর্ণপাম জয়ী ‘অ্যানাটমি অব অ্যা ফল’ (জাস্টিন ত্রিয়েত, ফ্রান্স), জুরি প্রাইজ পাওয়া ‘ফলেন লিভস’ (আকি কাউরিসমাকি, ফিনল্যান্ড), সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘অ্যাবাউট ড্রাই গ্রাসেস’ (নুরি বিলগে জেলান, তুরস্ক), সেরা পরিচালকের পুরস্কার বিজয়ী ‘দ্য পত-অঁ-ফু’ (ট্র্যান আন হাং, ভিয়েতনাম/ফ্রান্স), সেরা চিত্রনাট্যের পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘মনস্টার’ (কোরি-এদা হিরোকাজু, জাপান), মূল প্রতিযোগিতায় থাকা যুক্তরাজ্যের কেন লোচের ‘দ্য ওল্ড ওক’ ইতালির নান্নি মোরেত্তির ‘অ্যা ব্রাইটার টুমরো’, আলিস রোরওয়াকারের ‘লা কিমেরা’ ও মার্কো বেলোকিওর ‘কিডন্যাপড’, ফ্রান্সের ক্যাথেরিন ব্রেইয়াতের ‘লাস্ট সামার’, চীনের ওয়াং বিং পরিচালিত ‘ইয়ুথ (স্প্রিং)’, স্পেশাল স্ক্রিনিংস হওয়া ক্লেবার মেনডোনসা ফিলোর (ব্রাজিল) ‘পিকচার্স অব গোস্টস’, ভিম ভেন্ডার্সের ‘আনজেল্ম’, কান প্রিমিয়ারে থাকা ভিক্টর এরিসের (স্পেন) ‘ক্লোজ ইউর আইস’, লিসান্ড্রো আলোনসোর ‘ইউরেকা’ এবং ডিরেক্টরস ফোর্টনাইটের সমাপনী ছবি ‘ইন আওয়ার ডে’।

সমাপনী লালগালিচা উৎসবের পর্দা নামার দিনে পেছনের দিনগুলোতে ফিরে তাকালে মধুর লাগে! সমাপনী অনুষ্ঠান শুরুর আগে বিআইএফএফ আউটডোর থিয়েটারে বড় পর্দায় গত ১০ দিনের উল্লেখযোগ্য কিছু মুহূর্ত দেখানো হচ্ছিল। চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সহায়তায় সমাপনী অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র পেয়েছি। প্রবেশপথে যেতেই স্বেচ্ছাসেবীরা নির্ধারিত আসন পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। আমন্ত্রিত প্রত্যেকের নাম চেয়ারে লিখে রাখা। নিজের নাম দেখে চমকে গেলাম! পুরস্কার বিতরণ শেষে কয়েকটি বাসে করে প্যারাডাইস হোটেলে নিয়ে গেলেন আয়োজকেরা। ভেতরে ঢুকতেই এলাহী কাণ্ড! চারদিকে খাবার আর খাবার। আনন্দের ব্যাপার হলো, উৎসবের স্বনামধন্য নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও প্রযোজকেরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খাচ্ছেন আর আড্ডা দিচ্ছেন। বুসান উৎসবের শেষ দিনের এসব অভিজ্ঞতা মনে থাকবে অনেকদিন।

/এমএম/
সম্পর্কিত
থমথমে ঢালিউডে দম দিতে এলো ‘ভাইরাল বেবি’!
থমথমে ঢালিউডে দম দিতে এলো ‘ভাইরাল বেবি’!
ইউরোপীয় হাওয়ায় শুরু হলো টোকিও উৎসব, ফোকাসে বেগম রোকেয়া
ইউরোপীয় হাওয়ায় শুরু হলো টোকিও উৎসব, ফোকাসে বেগম রোকেয়া
শেষবেলায় সাগরপাড়ে, সিউলে চাটগাঁইয়া খাবারের পসরা
বুসান ডায়েরি-৬শেষবেলায় সাগরপাড়ে, সিউলে চাটগাঁইয়া খাবারের পসরা
লালগালিচা থেকে পুরস্কার জয়, বুসানে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি
লালগালিচা থেকে পুরস্কার জয়, বুসানে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
পর্দায় বহাল থাকছে বাদ পড়া ‘ওমর’ ও ‘রাজকুমার’
পর্দায় বহাল থাকছে বাদ পড়া ‘ওমর’ ও ‘রাজকুমার’
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সাংবাদিক হতে চেয়ে অভিনেত্রী!
সাংবাদিক হতে চেয়ে অভিনেত্রী!
মুবিতে মুক্তি দেশি মুভি
মুবিতে মুক্তি দেশি মুভি
মে দিবসে ফুঁসে উঠলেন সিনেমা শ্রমিকরা
মে দিবসে ফুঁসে উঠলেন সিনেমা শ্রমিকরা