সংগীতের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তিন দশকের। কণ্ঠশিল্পী বা ভোকাল হিসেবে যুক্ত ছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)-এর সঙ্গে। ফিডব্যাকের তত্ত্বাবধানে ফোয়াদ নাসের বাবুর নেতৃত্বে নিজ কণ্ঠে রেকর্ড করেছিলেন ১৩টি গান। পরিকল্পনা ছিলো প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশের। ভোকাল আর্টিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন বলিউডের বাপ্পি লাহিড়ির ব্যান্ডে। নিজের জন্য গানও তৈরি করেছেন বাপ্পির সুরে। এরপর কণ্ঠে তোলার জন্য গান নিয়েছেন নচিকেতার কাছ থেকে। দ্বৈত গান গেয়েছেন ফাহমিদার নবীর সঙ্গে। এমন অনেক অসাধারণ সব গানের গল্প রয়েছে মাহতাব আজামীর জীবনে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, যার একটি গানও প্রকাশ হয়নি!
অথচ গত তিন দশক ধরে গানটাকে কণ্ঠে ও গিটারে লালন করে চলেছেন প্রার্থনার মতো করে, দেশে ও বিদেশে।
অতঃপর এই ঈদে দীর্ঘ অপ্রকাশের জীবনে প্রকাশ হলো মাহতাবের কণ্ঠে প্রথম মৌলিক গান। নাম ‘মন হারিয়ে’। হায়দার ইকবালের কথা, সুর, সংগীতে মিষ্টি ও শীতল সুরের এই গানটি ঈদ উৎসব উপলক্ষ করে উন্মুক্ত হলো মাল্টি ভিটামিন এন্টারটেইনমেন্ট নামের ইউটিউব চ্যানেলে।
মাহতাব আজামীর সঙ্গে মডেল সাবরিনকে দাঁড় করিয়ে গানটির দৃষ্টিনন্দন ভিডিও নির্মাণ করেছে প্রেক্ষাগৃহ।
‘মন হারিয়ে’ প্রকাশ অথবা অবশেষে গান প্রকাশ প্রসঙ্গে মাহতাব আজামী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা ঠিক, অবশেষে গান প্রকাশ হলো আমার। বাধা যেহেতু কেটে গেছে, আশা করছি এখন থেকে নিয়মিত প্রকাশ করতে পারবো। কারণ, গানটি প্রকাশের পর যেমন উৎসাহ পাচ্ছি চারপাশ থেকে, আরও গান প্রকাশের তাগিদ অনুভব করছি।’
শিল্পী জানালেন তার আরেকটি ভাবনার কথা। ‘মন হারিয়ে’ গানটি থেকে উপার্জিত সকল অর্থ তিনি ব্যয় করবেন অসহায় শিশুদের কল্যাণে।
মন হারিয়ে:
কিন্তু প্রথম গান প্রকাশে কেন তিন দশকের পথ পাড়ি দিতে হলো মাহতাব আজামীকে? কথায় কথায় বললেন অনেক কথা। যার অনেকটাজুড়েই রয়েছে মান-অভিমানের গল্প। বললেন, ‘‘আসলে এসব আর বলতেও ইচ্ছে হয় না আর। নানা কারণেই আসলে বহুবার গান প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েও হয়নি। যেমন ব্যান্ডে থাকতে আমার প্রথম একক অ্যালবামের জন্য ১৩টি গান রেকর্ড করেছিলাম ফিডব্যাকের বাবু ভাইয়ের নেতৃত্বে। এটা ৯০ দশকের শেষ দিকে। কিন্তু প্রকাশ আর হলো না। এরপর গানগুলো সব হারিয়ে গেলো। এরমধ্যে দেশ ছেড়ে আমাকে থিতু হতে হলো যুক্তরাষ্ট্রে। এখানে এসেও থেমে যাইনি। যুক্ত হই কিংবদন্তি বাপ্পি লাহিড়ীর ব্যান্ডে। তার কাছ থেকেও গাওয়ার জন্য একটি সুর নিয়েছি। গানটি লেখা জুলফিকার রাসেলের। এরমধ্যে বাপ্পিদা মারা গেলেন। এখন তার ছেলেসহ প্ল্যান করছি গানটিকে হিন্দিতে করে ট্রিবিউট করার। এরপর কলকাতা গিয়ে নচিকেতার সুর-সংগীতেও গান করেছি। গান করেছি ফাহমিদা নবীর সঙ্গেও। সেটাও প্রায় বছরে কয়েক হয়ে গেলো। আমি ৩০ বছর ধরে আসলে গানই করছি। গানের সঙ্গেই আছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও না কোনও কারণে আটকে যাই। সব ছাপিয়ে অতঃপর ‘মন হারিয়ে’ গানটি প্রকাশ করতে পারলাম। আপাতত এটাই আনন্দ। এবার হয়তো জমানো গানগুলো নিয়মিত ছাড়ার উৎসাহ আর সাহস পাবো।’’
২০০৭ সাল থেকে মাহতাব আজামী যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস-এ বসবাস করছেন স্থায়ীভাবে।