অনেক দিন ধরেই আদালতে আসা-যাওয়া করছেন নায়িকা পরীমণি। অন্যদিকে মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল এখন রীতিমতো আইনজীবী। শুটিংয়ের চেয়ে আদালত চত্বরেই তার বেশি সময় কাটে। তবে দু’জনের মধ্যে শুটিং বা আদালত ইস্যুতে তেমন কোনও সংযোগ নেই।
এবার সেই সংযোগটি করে দিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন। মঙ্গলবারের (২৫ জুন) খবর, পরীমণির সঙ্গে তদন্তের বদলের প্রেমের অভিযোগে যাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে।
এমন ঘোষণার পরই ঢাকার দুই তারকা জানালেন দারুণ দুটি প্রতিক্রিয়া। এরমধ্যে পরীমণির প্রতিক্রিয়াটি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। তিনি সোশ্যাল হ্যান্ডেলে পোস্ট দিয়েছেন, ‘বাই বাই রাসেলস ভাইপার। ওয়েলকাম পরীমণি।’
তবে এর পেছনে আর কোনও ব্যাখ্যা দেননি নায়িকা। তিনি ঠিক কাকে রাসেলস ভাইপার হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
তবে একই দিনে পরীমণির পক্ষে আরও একটি ভালো খবর আসে আদালত পাড়া থেকে। হত্যাচেষ্টা, মারধর, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা মামলায় পরীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। অনেকে ভাবছেন, পরীর চোখে রাসেলস ভাইপার নাসির উদ্দিন মাহমুদও হতে পারেন।
খবরে প্রকাশ, পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পিএসসির কাছে আবেদন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বলা দরকার, পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের জেরে প্রথমে সাকলায়েনকে ডিবি থেকে সরিয়ে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে ঝিনাইদহ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়। এবার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো।
এদিকে পরীর ‘রাসেলস ভাইপার’ মন্তব্য নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও মডেল তথা আইনজীবী পিয়া জান্নাতুল বেশ স্পষ্ট করেই বলেছেন সাকলায়েন প্রসঙ্গে তার ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা। মঙ্গলবার (২৫ জুন) এই পুলিশ কর্তার অবসরের খবরে যেন নিজের ভেতরে জমা সব ক্ষোভ আর অভিযোগ উগরে দিলেন।
পিয়া জান্নাতুল নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘এই সেই ব্যক্তি (গোলাম সাকলায়েন), যিনি আব্বার এফআর টাওয়ার মামলায় ডিবি থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। যিনি প্রতারণামূলক এবং জোরপূর্বকভাবে সিআরপিসির ১৬৪ ধারার অধীনে জবানবন্দি নিতে আব্বার সম্মতি নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমি সম্মতি না দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম আব্বাকে। কেননা, এ ঘটনায় মোটেও জড়িত ছিলেন না তিনি। কিন্তু আমি ডিবি অফিসে যাওয়ার আগেই তিনি (গোলাম সাকলায়েন) আব্বার কাছ থেকে লিখিত বক্তব্য নিয়ে আদালতে পরদিন জমা দিয়ে দেন। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং আব্বাকে ও আমাকে চুপ থাকতে বলেন। অথচ তার জানা ছিল না যে, চুপ থাকার জন্য জন্মগ্রহণ করিনি আমি।’
পিয়া আরও বলেন, ‘তিনি (গোলাম সাকলায়েন) যেদিন এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের জন্য জমির মালিক হিসেবে আব্বাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, তখন আব্বা এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। আব্বার বয়স তখন ৭৭ বছরের বেশি। আমার দেখা মতে, এই জনাব গোলাম সাকলায়েন ব্যক্তিটি খুবই তীক্ষ্ণ, প্রতিভাবান ও ধূর্ত। কিন্তু একটি ভুল তার সবকিছু শেষ করে দিলো।’
ভুল মানে, পরীমণির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হয়েও তার সঙ্গে সাকলায়েনের ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ স্থাপন করা।
২০২১ সালের ১৩ জুন উত্তরা বোট ক্লাবে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমণি। পরদিন উত্তরা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। ওই মামলার তদন্তের তদারক কর্মকর্তা ছিলেন গোলাম সাকলায়েন। এরপর পরীমণির সঙ্গে এডিসি গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েনের কিছু ভিডিও প্রকাশ হয়। সেটি নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। যার চূড়ান্ত ফলাফল সাকলায়েনের বাধ্যতামূলক অবসর।
এদিকে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুরে বনানীর ৩২ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। সেই টাওয়ারের জমির মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুক। যার পুত্রবধূ পিয়া জান্নাতুল। যিনি শ্বশুরের আইনজীবী হয়ে আদালতে লড়াই করেন। আর সেই অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন গোলাম সাকলায়েন।