চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার নিজেই। তিনি জানান, পরীমণির এক বছরের কন্যাশিশুকে খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর ভাটারা থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন পিংকি আক্তার। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ছি ছি’ পড়ে যায়। সবাই পরীমণিকে একপ্রকার ধুয়ে দেন। এমনকি দেশের গণমাধ্যমেও এ নিয়ে খবরের শিরোনাম হন এই নায়িকা। তবে বিতর্কিত এ ঘটনাটি নিয়ে রাতেই ফেসবুকে লাইভে আসেন পরীমণি। তিনি জানান, তার হাতে সব প্রমাণ আছে। কিন্তু তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় আনতে চাইছেন না। সেই সঙ্গে মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ করারও আহ্বান জানান পরীমণি।
ফেসবুক লাইভের একদম শুরুতেই পরীমণি বলেন, ‘আপনারা আমার বিগত জীবনযাপন দেখলেই বুঝবেন, কোনও আত্মীয়স্বজন নিয়ে আমার জীবনযাপন না। বরং আমার পুরো পরিবারটাই হলো আমার স্টাফদের নিয়ে। বিশেষ দিবসে তাদের নিয়ে লেখালেখি করতাম। মাদার্স ডে, ফাদার্স ডে যাই বলেন না কেন, আমি তাদের নিয়েই থাকি। সেখানে একজন আমার গৃহকর্মী, যে এক মাসও হয়নি আসার, সে দাবি করতেই পারে (গৃহকর্মী হিসেবে), তবে আমি বলবো সে আমার গৃহকর্মী না।’ এমনকি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আইনিভাবে মোকাবিলা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার হাতে সব প্রমাণ আছে, কিন্তু দিতে চাচ্ছি না কেন জানেন, কারণ আমি আইনের ওপর শ্রদ্ধাশীল।
শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে তাকে নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে আসা খবরে বিরক্ত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
পরী অভিযোগ করেছেন, তিনি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছেন। এই নায়িকা বলেন, ‘আমরা কি একটু ওয়েট করতে পারতাম না? যারা মিডিয়াকর্মী ছিলাম। তারা আমাকে যেভাবে টর্চারটা করলো, যেভাবে ফলাও করে ওই নিউজটা করা হলো, যেভাবে তার ইন্টারভিউ করা হলো, তার মানে কি আমরা মিডিয়াকর্মী হয়ে তাকে প্রিভিলেজ (বেশি সুবিধা) দিচ্ছি না? যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে জিডি করলেই সাথে সাথে এটা জাস্টিফাই হয়ে যাবে? এতে আমি ছোট হয়েছি বা বড় হয়েছি তা না, আমি যদি অন্যায় করি ডেফিনেটলি আমার শাস্তি পাওয়া উচিত। যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে, কিন্তু সেটা প্রমাণিত হওয়ার আগেই আপনি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেবেন?’
এমনকি দেশের একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমের নিউজ লাইভে দেখিয়ে পরী বলে, “একতরফা করবেন না, করলে সবদিক থেকেই করবেন। প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করেন, আমার বাসার নিচে আসতে হবে না। আমি নিজেই আপনাদের কাছে যাবো। আমি আপনাদের কয়বার নক দিয়েছি, ওই মেয়ে যে আপনাদের নক দিয়েছে? আপনাদের নাম্বার ও কীভাবে পেলো? নাকি আপনাদেরই গরজ। নাকি হাতে ‘এস’ লেখার বিষয়ে আপনাদের বলদ-ফলদ বলেছিলাম বলে আপনাদের গায়ে লাগলো? তো বলদের প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছেন?” এরপর বেশ খানিকটা উত্তেজিত হয়ে পরী বলেন, ‘আপনারা আইন, সংসার, জীবন— সবকিছুর ঊর্ধ্বে যেতে চান। হিসাব কিন্তু একদিন আপনাদের দিতেই হবে। মিলিয়ে নিয়েন।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন পরীমনির গৃহকর্মী। অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার। পরীমনির এক বছরের মেয়ে সন্তানকে খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে তাকে মারধর করা হয়েছে বলে জানান তিনি। মারধরের ফলে অজ্ঞান হয়ে যান পিংকি এবং পরবর্তীতে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশকে ডাকেন। পিংকরির এক কাজিন ও পুলিশ পরীমণির বাসার সামনে উপস্থিত হন। ঘটনার পর পরীমণি বৃষ্টিকে নির্দেশ দেন পিংকিকে বাসার নিচে নামিয়ে দিতে। নিচে নামার পর পিংকি রিকশা নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন।