গত বছরের ঠিক এই দিনে (৯ এপ্রিল) একই স্থানে বেশ জমকালো আয়োজনে শুরু হয়েছিল দেশের প্রথম গানের উৎসব ‘গান মেলা’। এটি আয়োজন করেছিল অডিও-ভিডিও প্রযোজকদের সংগঠন মিউজিক ইন্ডাসট্রিজ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইবি)। যে মেলায় দেশের প্রায় সর্বস্তরের সংগীত সংশ্লিষ্টরা এক হয়েছিলেন, মেতেছিলেন গান-গল্প-ভাবনায়।
সংগীত নিয়ে এমন আয়োজনে সন্তুষ্ট ছিলেন মেলার ভেন্যু শিল্পকলা একাডেমির কর্তারাও। অন্যদিকে আয়োজকরা কথা দিয়েছিলেন, প্রতি বছর একই তারিখে একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে এই মেলা। উদ্দেশ্য একটাই, দেশীয় সংগীতের বিকাশ এবং সংশ্লিষ্টদের মেলবন্ধন সৃষ্টি করা।
না, তেমনটা আর হচ্ছে কই? এক বছরের মাথায় একই দিনে সেই উদ্দেশ্যে ‘সন্দেহ’ দেখা দিয়েছে। তৈরি হলো সংগীতের নতুন দল-বদলের গল্প। এবারও শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গান সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একই আদলে একটি মেলা হচ্ছে। তবে এটির নাম খানিক বদলে রাখা হয়েছে ‘সংগীত মেলা’। আর আয়োজনে থাকছে ‘সম্মিলিত সংগীতশিল্পী সোসাইটি’ নামের একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম। যার আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন আগের আয়োজক প্রতিষ্ঠান এমআইবির অন্যতম সদস্য গীতিকার-সুরকার হাসান মতিউর রহমান!
শনিবার দুপুরে বেইলি রোডের ক্যাফে থার্টি থ্রি রেস্তোরাঁয় তিনি সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ২৩ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে তাদের এই মেলা। প্রত্যেক দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ‘সংগীত মেলা ২০১৬’। ৮ দিনের এই আয়োজনে বাংলা গানের বিভিন্ন অঙ্গনে অবদান রাখার জন্য ২৫জন গুণীশিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। প্রকাশনা উৎসব হবে শতাধিক অ্যালবামের। মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হবে ২টি সেমিনার এবং ৪টি ওয়ার্কশপ।
আর এই মেলার উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম।
এদিকে গেল বছর সফল ‘গান মেলা’র পর চলতি বছর ‘সংগীত মেলা’ নামের এ আয়োজন প্রসঙ্গে সংগীতাঙ্গনে তৈরি হয়েছে ধুম্রজাল এবং ক্ষোভ। এ বিষয়ে এমআইবির সভাপতি ও লেজার ভিশনের চেয়ারম্যান একেএম আরিফুর রহমান বলেন, ‘‘জানি না কোন অপশক্তি এমন একটি সুস্থধারার আয়োজনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। যে-ই এমন কাজ করুক, সে দেশের এবং দেশীয় সংগীতের ভালো চায় না। এটুকু নিশ্চিত করেই বলতে পারি। তবে একটু বিলম্ব হলেও এবারও আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সফল ‘গান মেলা’ করবোই।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘গত বছর উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের কথা দিয়েছিলাম ‘এমআইবি গান মেলা’ প্রতিবছর শিল্পকলা একাডেমির মাঠে হবে এবং একাডেমির মহাপরিচালক প্রতিবছর এপ্রিলের শুরু থেকে মাঠ বরাদ্দের ব্যাপারে আমাদের সম্মতি প্রদান করেন। সে হিসেবে এবারও মাঠ বরাদ্দের জন্য মহাপরিচালকের বরাবর আবেদন করি। কিন্তু কী এক অজ্ঞাত কারণে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। বাধ্য হয়ে আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের বরাবর আবেদন করি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মন্ত্রী মহোদয়ও বিষয়টা এড়িয়ে গেছেন। পরবর্তীতে বহু যোগাযোগ করেও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের কোনও সাড়া মেলেনি!’
এদিকে ‘গান মেলা’ আয়োজনকে স্থগিত করে ‘সংগীত মেলা’র এমন উদ্যোগে মূলত দেশীয় সংগীতই কোণঠাসা হচ্ছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের প্রধান সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ভূমিকাও। এমনটাই বলছেন বেশিরভাগ গানপ্রিয় সমালোচক।
/এমএম/