X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

নোবেলজয়ী ডিলান: বাংলাদেশের মুক্তির মিছিলে হেঁটেছিলেন তিনিও

বাধন অধিকারী
১৩ অক্টোবর ২০১৬, ২০:৪৫আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৬, ১২:৪৪

বব ডিলান। বাংলাদেশের মহান ৭১’এর স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন সাহিত্যে নোবেলজয়ী সংগীত কিংবদন্তি বব ডিলান। যুক্তরাষ্ট্র সেই সময় পাকিস্তানের নারকীয় গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিলেও ব্যক্তি ডিলান রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নিজ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন গানের অস্ত্র। ডিলান তাই বাংলাদেশের বন্ধু। সেই জন্মকালের স্বজন।
এই দেশের জন্ম আর বব ডিলানের আত্মা বাঁধা পড়েছে ঐতিহাসিকতার সুতোয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলেন ডিলান।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া বব ডিলান জীবন্ত কিংবদন্তি।  ১৯৫৯ সালে মিনেসোটার এক কফি হাউজ থেকে সূচনা।  কণ্ঠে তুলে নেওয়া গানকে কখনও অভিমানের, কখনওবা আবার প্রতিরোধের অস্ত্র বানিয়ে ষাটের দশকে তিনি হয়ে ওঠেন যুদ্ধ বিরোধিতার অনন্য প্রতীক। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রেরণাদায়ী গণসঙ্গীতে রূপান্তরিত হয়েছিল ডিলানের গান।
মার্কিন সমাজের অভ্যন্তরে জারি থাকা অন্যায্যতাগুলো উঠে আসে তার কথা-সুর-কণ্ঠে। চলমান ইতিহাসে নিজের সংগীতের দর্শনকে থিতু করেছিলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির মিছিলেও একদিন হেঁটেছিলেন। নোবেল জয়ের পর বাংলাদেশের দৃশ্যপটে ডিলান সেই একাত্তরের স্মৃতিকেই সামনে নিয়ে আসেন। মনে করিয়ে দেন ম্যাডিসন স্কয়ারের ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর কথা।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের পক্ষে নিউ ইয়র্কে আয়োজিত হয় ওই কনসার্ট। যাতে জর্জ হ্যারিসন, রিংগো স্টার, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্যাটারসন, রবিশঙ্করের সঙ্গে ছিলেন ডিলানও।  গেয়েছিলেন ‘আ হার্ড রেইনস আ-গনা ফল’, ‘ব্লোইং ইন দ্য উইন্ড’, ‘জাস্ট লাইক আ ওমেন’সহ কয়েকটি গান।
‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ মঞ্চে ডিলানের কণ্ঠে ‘জাস্ট লাইক আ ওমেন’:


মানবাত্মার বিজয়ধ্বনিই যেন সংগীত হয়ে উঠেছিল ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামের ওই আয়োজনে। পরবর্তীতে এমন আরও অনেক মানবিক আয়োজনের প্রেরণা হয়েছিল ওই কনসার্ট।
পাকিস্তানি বর্বরতা থেকে মুক্তিপ্রত্যাশী এই ভূখন্ডের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে কনসার্টটির প্রভাব ছিলো অপরিসীম। বাংলাদেশের অস্তিত্ব আর পাকিস্তানি গণহত্যার প্রসঙ্গ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার নজরে আনতে সমর্থ হয়েছিল কনসার্টটি। এর আয়োজক হিসেবে  রবি শঙ্কর পরে বলেছিলেন,  ‘এক অসাধারণ আয়োজন ছিল ওই কনসার্টটি। এক দিনের মধ্যেই, গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের নাম জেনেছিলো।’
২০০৫ সালে দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ- এর ডিভিডি-সংক্রান্ত এক প্রকাশনায় ইউএসএ ফান্ড ফর ইউনিসেফের সভাপতি চার্লস জে. লিওনস জানান, কনসার্টের টিকিট থেকে প্রায় আড়াই লাখ ডলার সংগ্রহ হয়েছিল তখন।
‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ মঞ্চে বামে জর্জ হ্যারিসন ডানে বব ডিলান। মানুষের জন্য গান করেছেন ডিলান। লোকসম্পদে খুঁজেছেন সংগীতের মুক্তির বারতা। আর নাগরিক অধিকার এবং যুদ্ধবিরোধিতায় তিনি গড়তে চেয়েছেন ন্যায় আর শান্তির এক বিশ্ব।
সুরের কোনও সীমানা থাকে না। ডিলানের সুর জাতিরাষ্ট্রের কাঁটাতারকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে থাকে মানুষের মুক্তির বারতা হয়ে। তার গান মুক্তিরই আরেক নাম। তাই তো দেশ পেরিয়ে বাংলাদেশের মুক্তির মিছিলও সঙ্গী করতে পারে ডিলানের সুরধারাকে।
ষাটের দশকে ঝড় তোলা ডিলান গেয়েছিলেন, ‘How many roads must a man walk down, Before you call him a man?’ সত্যিকারের মানবীয় পৃথিবীর কল্পনা থেকে আমাদের বাস্তব পৃথিবীর দূরত্ব সেই প্রশ্নটি বারবার সামনে নিয়ে আসে।

ডিলান ও তার গান মানুষ হওয়ার অমসৃণ যাত্রাপথে আমাদের জীবনের প্রেরণা হয়ে থাকে।
বব ডিলানের সাম্প্রতিক ছবি। সূত্র: দ্য ডন অব ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন দ্য ওয়েস্ট নামের বইতে লেখা রবি শঙ্করের প্রবন্ধ ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’, দ্য বাংলাদেশ রিডার: হিস্টরি কালচার অ্যান্ড পলিটিক্স, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া।
/বিএ/এমএম/

*আরও: সঙ্গীতে নতুন কাব্যের মূর্ছনায় নোবেল পেলেন বব ডিলান

সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
সন্ধ্যা নামিলো শ্যাম: গানে ও চিত্রে মুগ্ধতার সমন্বয়
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
রসায়ন পরীক্ষায় ১০ জনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’!
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল