সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে নতুন কাব্যিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন প্রখ্যাত মার্কিন সঙ্গীত শিল্পী ও গীতিকার বব ডিলান। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় (স্থানীয় সময় বেলা ১টায়) সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে সুইডিশ একাডেমিতে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে জানানো হয়েছে, ১৯৯৩ সালের পর এই প্রথমবারের মতো সাহিত্যে নোবেল পেলেন কোনও একজন মার্কিনি।
সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব অ্যধাপক সারা দানিউস এই পুরস্কার ঘোষণা করেন। সে সময় নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুমহান মার্কিন সঙ্গীতের ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক মূর্ছনা তৈরি করে তিনি এই পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। ১৯০১ সালে শুরু হয়ে এ নিয়ে ১০৯ বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। ১১৩ তম ব্যক্তি হিসেবে এই পুরস্কার জিতে নেন তিনি।
রবার্ট অ্যালেন জিমার নামের এই গায়ক-গীতিকার, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রকর ইংরেজ কবি ডিলন টমাসের কাছ থেকে বব ডিলান নামটি ধার করেন। ডিলানকে বলা হয় রক গানের বিদ্রোহী রাজা। গত পঞ্চাশ বছর ধরে জীবনের জন্য গান গেয়ে যাচ্ছেন তিনি। কেবল সঙ্গীতজ্ঞ নন তিনি, একইসাথে ছিলেন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ডিলানের গানের কথা মূলত রাজনীতি, সমাজ, দর্শন ও সাহিত্যিক প্রভাব সম্বলিত। এই শিল্পী, গীতিকার খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছান গত ষটকের ষাটের দশকে। হাতে গিটার আর গলায় ঝোলানো হারমোনিকা হয়ে ওঠে তার ট্রেডমার্ক। সে সময় তার ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ আর ‘দ্য টাইমস দে আর আ-চেইঞ্জিং’ এর মত গানগুলো পরিণত হয়েছিল যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের গণসঙ্গীতে।
নিজস্ব সঙ্গীত ধারা প্রসারের পাশাপাশি তিনি আমেরিকার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষন অনুভব করেছেন। ফোক রকের কথা বললেই বব ডিলানের নামটা চলে আসে । তিনি আমেরিকান লোকগীতি ও কান্ট্রি, ব্লুজ থেকে রক অ্যান্ড রোল, ইংরেজ, স্কটিশ, আইরিশ লোকগীতি, এমনকি জ্যাজ, ব্রডওয়ে, হার্ড রক এবং গসপেলও গেয়েছেন। বব ডিলান তো আসলে একজন কবি। যিনি তার কবিতাকে গিটারের আশ্রয়ে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।
বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণার পর নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ সম্পর্কে সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব অ্যধাপক সারা দানিউসের একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়।
এরআগে সাহিত্যে গত বছর ২০১৫ সালে নোবেল পুরস্কার পান বেলারুশের লেখক ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ। ১১২তম লেখক এবং ১৪তম নারী হিসেবে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সোয়েতলানার ‘বহুস্বরের’ গদ্যকে সুইডিশ অ্যাকাডেমি অভিহিত করেছিল ‘সমকালীন যাতনা আর সাহসিকতার সৌধ’ হিসেবে।
উল্লেখ্য, নোবেল পুরস্কারের মধ্যে সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা ক্ষেত্রে অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। ঘোষণার আগে কয়েকদিন ধরে চলে জল্পনা-কল্পনা, কে পাচ্ছেন এবারের সাহিত্যে নোবেল। ফলে দুনিয়াব্যাপী লেখক-পাঠকরা অনেকটা অনুমানের ওপর নির্ভর করে অনেকের নাম বলে থাকেন। শেষ পর্যন্ত সুইডিশ নোবেল অ্যাকাডেমির মনোনীত নির্বাচকদের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন বিজয়ী।
সাধারণত বৃহস্পতিবারই এ পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ।
১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল তার মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে তার উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এই বিপুল অর্থ দিয়েই শুরু হয় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান। পরে তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।
পুরস্কার ঘোষণার আগেই মৃত্যু বরণ করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল। আইনসভার অনুমোদন শেষে তার উইল অনুযায়ী নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। তাদের ওপর দায়িত্ব বর্তায় আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা এবং নোবেল পুরস্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। আর বিজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব সুইডিশ একাডেমি আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়।
/এফইউ/বিএ/