কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো আজ (২২ জানুয়ারি)। গত বছর এই দিনে রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ বাসায় ৬৩ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি।
আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭০ সাল থেকে আমৃত্যু সংগীতের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ছিলেন। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ থেকে ফেরার পর টানা দেড় দশক শুধু দেশের গান তৈরি করেছেন তিনি।
১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ ছবি দিয়ে শুরু করেন সংগীত পরিচালনার ক্যারিয়ার। এর বাইরে স্বাধীনভাবে গান তৈরি করেছেন অসংখ্য। তার সৃষ্টি গানের সংখ্যা প্রায় চারশ’।
এদিকে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নতুন একটি গান প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন ছেলে সামির ইমতিয়াজ। ‘মাটি আমার ঠিকানা’ শিরোনামের এই গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করে গেছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল নিজেই। গানটি প্রকাশ প্রসঙ্গে সামির বলেন, ‘তিনি বেঁচে থাকতেই গানটিতে গাইড ভয়েস দিয়ে রেখেছিলেন। কিছু দিন আগে বাবার কম্পিউটার খুলে গানটি খুঁজে পাই। শোনার পর মনে হলো গানটি প্রকাশের উপযোগী।’
সামির জানান, ‘মাটি আমার ঠিকানা’ গানের কথা লিখেছেন গাজী তানভীর আহমেদ। গানটি রি-অ্যারেঞ্জ করেছেন রোজেন রহমান।
এদিকে শিগগিরই ঢাকার পূর্বাচলে পানজোড়া বড়বাড়ি এলাকায় সায়রা প্যাভিলিয়ন রিসোর্টে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল স্মরণে একটি মিউজিয়াম চালু করার কথাও জানিয়েছেন সামির ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, ‘বাবার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৫০০০ বর্গফুটের একটি জায়গা দিয়েছেন আমার মা (সুবর্ণা ইমতিয়াজ)। মায়ের ভাবনাটা বেশ চমৎকার মনে হলো। ভাবছি, এখানে বাবার ব্যবহৃত জিনিসপত্র রাখা হবে। এই মিউজিয়াম থেকে বাবার সৃষ্টি করা গান সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মও বাবার সম্পর্কে জানতে পারবে।’
সংগীতে অবদানের জন্য আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পান। প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি গান লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন।
বুলবুলের কথা ও সুরে অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘এই দেশ আমার সুন্দরী রাজকন্যা’, ‘উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘আম্মাজান আম্মাজান’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার’, ‘আমার দুই চোখে দুই নদী’, ‘একাত্তরের মা জননী’, ‘আমি জীবন্ত একটা লাশ, ‘অনেক সাধনার পরে’ প্রভৃতি।