X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইরফানের জন্য জোলি-নাটালির শ্রদ্ধা

বিনোদন ডেস্ক
৩০ এপ্রিল ২০২০, ১৯:২০আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৩৫

ইরফানের জন্য জোলি-নাটালির শ্রদ্ধা ভারতীয় অভিনেতা ইরফান খানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও নাটালি পোর্টম্যান। ২৯ এপ্রিল ৫৩ বছর বয়সে পৃথিবীকে চিরবিদায় জানিয়েছেন তিনি।

২০০৮ সালে ১১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির সংকলন ‘নিউ ইয়র্ক, আই লাভ ইউ’র একটি অংশে মীরা নায়ারের পরিচালনায় ইরফানের সঙ্গে অভিনয় করেন নাটালি পোর্টম্যান। ৩৮ বছর বয়সী এই তারকা ইনস্টাগ্রামে ইরফানের সঙ্গে তোলা একটি ছবি শেয়ার করেছেন। এতে তাকে কনের সাদা গাউনে ও ইরফানকে বরের সাজে দেখা যাচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘ইরফান খানের প্রিয়জনদের জন্য ভালোবাসা পাঠালাম।’

২০০৭ সালে ‘অ্যা মাইটি হার্ট’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন ইরফান খান ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ভারতের বেসরকারি সংবাদমাধ্যম ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিসকে (আইএএনএস) ৪৪ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী সমবেদনা জানিয়ে বলেন, ‘অ্যা মাইটি হার্টের সেটে ইরফান খানের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সহশিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন উদার। তাই প্রতিটি দৃশ্যে তার সঙ্গে কাজ করে আনন্দ পেয়েছি। অভিনয়ের প্রতি তাঁর একাগ্রতার কথা মনে পড়ে, একইসঙ্গে তার হাসি ভোলার নয়। আমি তার পরিবার, বন্ধু-স্বজন এবং ভারতসহ বিশ্বজুড়ে তাঁর কাজের প্রশংসাকারীদের সমবেদনা জানাই।’

ব্রিটিশ নির্মাতা মাইকেল উইন্টারবটমের পরিচালনায় ‘অ্যা মাইটি হার্ট’ তৈরি হয়েছিল ম্যারিয়েন পার্লের স্মৃতিগ্রন্থ অবলম্বনে। তার স্বামী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লকে পাকিস্তানে অপহরণের পর শিরচ্ছেদ করা হয়। এ ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে ছবিটিতে। এতে ম্যারিয়েন পার্ল চরিত্রে জোলি ও করাচি পুলিশ প্রধান জিশান কাজমির ভূমিকায় ছিলেন ইরফান। করাচির দৃশ্যগুলোর শুটিং হয়েছে ভারতের পুনেতে। ‘অ্যা মাইটি হার্ট’ ২০০৭ সালের কান উৎসবে আউট অব কম্পিটিশনে নির্বাচিত হয়।

ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা ইরফান খান বলিউড ও হলিউডে সাফল্যের সঙ্গে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিলেন। ভারতের প্রথিতযশা ও মেধাবী নির্মাতাদের ছবিতে দেখা গেছে তাকে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে দারুণ কয়েকজন নির্মাতার সঙ্গে কাজ করে সফল হয়েছেন তিনি। তারাও এই কিংবদন্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, শোক প্রকাশ করেছেন।

ইরফান খানকে চমৎকার একজন অভিনেতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আটটি অস্কারজয়ী ছবি ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’-এর পরিচালক ড্যানি বয়েল। শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি বলেন, “ইরফান ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা এবং ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ নির্মাণকালীন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ছবিটিতে তার চরিত্রটি অত বড় ছিল না। চিত্রনাট্যে মোটেও এটি চোখে পড়বে বলে মনে হয়নি। কিন্তু ইরফান নিজের উৎকর্ষ, স্বাভাবিকতা, আকর্ষণ, বুদ্ধিমত্তা ও প্রশান্তির সঙ্গে ফুটিয়ে চরিত্রটিকে সম্ভাবনাময় করে তোলেন।”

যোগ করে ড্যানি বয়েল আরও বলেন, ‘ফক্স সার্চলাইটের পিটার রাইসের মন কেড়েছিলেন ইরফান। ছবিটির অংশীদার হওয়ার আগে ইরফানকে চুক্তিবদ্ধ করতে বলেন তিনি। তার কথা ছিল, ‘উপযুক্ত চরিত্র থাকুক আর না থাকুক, যেভাবেই হোক তাকে নাও।’ এরপর পিটার রাইস ছবিটির স্বত্ব কিনলেন। ইরফান আছেন বলেই তার আগ্রহ জন্মেছিল। এরপর অস্কারে ব্যাপক প্রচারণা চালালেন। বাকিটা ইতিহাস। ধন্যবাদ পিটার রাইস, ধন্যবাদ ইরফান খান।’

‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’-এর অভিনেত্রী ফ্রিডা পিন্টো ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি শেয়ার করেছেন। ২০০৯ সালের স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডসে এটি তোলা। এতে ইরফানের সঙ্গে তিনি ছাড়াও ছিলেন অনিল কাপুর ও দেব প্যাটেল।

ফ্রিডা লিখেছেন, ‘একটি শূন্যস্থান কখনও পূরণ হবে না কারণ ইরফান খানের মতো আর কেউ নেই। অভিনেতা নন, একজন সহকর্মী হিসেবে তিনি আমাকে দেখেছেন। অভিনেতা হিসেবে স্মরণীয় প্রতিভা, স্বাভাবিকতা ও উৎকর্ষের মাধ্যমে মানবিকতার চিত্র তুলে ধরতে দেখে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জন্মায় আমার মাঝে। পরে আমার ক্যারিয়ারে এগুলো অনুকরণ করতে চেয়েছিলাম। কী ভাগ্যবাতী আমি, তাকে রোল মডেল হিসেবে প্রথম ছবিতেই পেয়েছিলাম।’

ফ্রিডা লিখেছেন, ‘শান্ত তবে নীরব নয়. প্রত্যেক সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর কাছে তাঁর প্রতিক্রিয়া খুব অর্থবহ ছিল এবং কখনোই হাস্যরসের কমতি ছিল না। তিনি ভারতকে উঁচু স্তরের প্রতিভা দিয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিশ্বের প্রতিটি মঞ্চে, প্রতিটি লালগালিচায় মাটির মানুষের মতো ছিলেন। যারা তাঁর প্রতিভা সম্পর্কে জানেন তারা ঠিকই জানেন, এমন অভিনেতা আর আসবে না। আর যারা তার ছবি দেখেননি তারা নিজেদের বঞ্চিত করবেন না। ইরফান খানের কাজ একবার দেখলে চিরকাল স্মৃতিতে থেকে যাবে।’

ইরফানের সেরা কয়েকটি ছবির নাম উল্লেখ করেছেন ফ্রিডা— ওয়ারিয়র, দ্য নেমসেক, পিকু, মকবুল, লাইফ অব পাই, দ্য লাঞ্চবক্স, পান সিং তোমর ও স্লামডগ মিলিয়নিয়ার। ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ছবিতে ইরফান খানের সঙ্গে ব্রাইস ডালাস হাওয়ার্ড

২০১৫ সালে ‘জুরাসিক পার্ক’ সিরিজের ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ছবিতে মাসরানি চরিত্রে অভিনয় করেন ইরফান। এতে মূল নায়ক ছিলেন ক্রিস প্রাট। ‘গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি’র এই তারকা টুইটারে লিখেছেন, ‘পর্দার কিংবদন্তি ইরফান খানের চলে যাওয়ার কথা শুনে খুব দুঃখ পেয়েছি। তিনি ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা ও দারুণ মানুষ। তার কথা মনে পড়বে।’

‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ছবির শুটিংয়ের প্রথম ও শেষ দিন ইরফানের সঙ্গে তোলা দুটি স্থিরচিত্র টুইটারে শেয়ার করেছেন অভিনেত্রী ব্রাইস ডালাস হাওয়ার্ড। তিনি লিখেছেন, ‘ইরফান, আপনি অতি চমৎকার একজন মানুষ। আমরা সবাই আপনাকে খুব মিস করবো। শুটিংয়ের প্রথম ও শেষ দিন আপনার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য সবসময় ভালোবাসা থাকবে।’

‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ছবির পরিচালক কলিন ট্রেভরো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘ইরফান খানকে হারিয়ে খুব দুঃখ হচ্ছে। তিনি এমন একজন দার্শনিক মানুষ ছিলেন যিনি পৃথিবীর সবকিছুতে সৌন্দর্য খুঁজে পেতেন, এমনকি কষ্টেও। আমাদের শেষ বার্তা আদান-প্রদানে তিনি আমাকে দিনের অন্ধকারে নিজেদের অস্তিত্বের অপূর্ব দিকগুলো মনে রাখতে বলেছিলেন।’

অস্কারের আয়োজক অ্যাকাডেমি মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস টুইটারে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছে, ‘বলিউড সিনেমার একটি মূল ভিত্তি ছিলেন তিনি। স্লামডগ মিলিয়নেয়ার, লাইফ অব পাই এবং দ্য নেমসেক-এর মতো ছবিতে তার অসাধারণ প্রতিভা দেখিয়েছেন তিনি। বিশ্ব সিনেমায় নিজের ছাপ রেখে গেছেন ইরফান খান। লাখো লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা তিনি। তাকে সবার মনে পড়বে।’

গোল্ডেন গ্লোবস কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে শোক জানিয়ে লিখেছে, ‘গোল্ডেন গ্লোব মনোনীত ‘সালাম বোম্বে’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় ইরফান খানের। লাইফ অব পাই, দ্য লাঞ্চবক্স, পাজল, জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ও গোল্ডেন গ্লোবজয়ী স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবির জন্য আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে তিনি পরিচিত। এ কঠিন সময়ে তার পরিবার ও বন্ধুদের সমবেদনা জানাই আমরা।’ ‘ইনফারনো’ ছবির অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস ও পরিচালক রন হাওয়ার্ডের সঙ্গে ইরফান খান

‘দা ভিঞ্চি কোড’ গ্রন্থের লেখক ড্যান ব্রাউন, ‘দ্য নেমসেক’-এর সহশিল্পী ক্যাল পেন, অস্কার মনোনীত নারী নির্মাতা অ্যাভা ডুভারনে, ‘বিগ ব্যাং থিওরি’ সিরিজের ব্র্রিটিশ-ভারতীয় অভিনেতা কুনাল নায়ার, ‘স্টার ওয়ারস’ সিরিজের অভিনেতা রিজ আহমেদ, ইরফানের ‘ওয়ারিয়র’ ছবির নির্মাতা আসিফ কাপাডিয়া, ‘দ্য অফিস’ সিরিজের অভিনেত্রী মিন্ডি ক্যালিং শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ইরফানের জীবদ্দশায় তার প্রশংসা করেছিলেন ‘ইনফারনো’র সহশিল্পী টম হ্যাঙ্কস আর ‘হাল্ক’ তারকা মার্ক রাফেলো।

২০১৮ সাল থেকে নিওরোএন্ডোক্রাইন টিউমারের সঙ্গে লড়েছেন ইরফান। কোলন সংক্রমণের কারণে ২৯ এপ্রিল মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধিরুবাই আম্বানি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বুধবার বিকালে ভারসোভা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। স্ত্রী সুতাপা সিকদার ও দুই ছেলে বাবিল ও আয়ানকে রেখে গেছেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বলিউডের প্রায় সব তারকা।

/জেএইচ/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
অবশেষে মুক্তির বার্তা
অবশেষে মুক্তির বার্তা
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফেরালেন ক্যাটরিনা!
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া