X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়েব সিরিজ বিতর্ক: ৭৯ ব্যক্তিত্বের অভিমত

সুধাময় সরকার
২০ জুন ২০২০, ২৩:৪৩আপডেট : ২১ জুন ২০২০, ১৩:৪০

গেল ঈদে উন্মুক্ত হওয়া তিনটি ওয়েব সিরিজকে ঘিরে চলছে তুমুল বিতর্ক। বিঞ্জ অ্যাপের প্রযোজনায় নির্মিত এই তিনটি সিরিজের মধ্যে রয়েছে ‘আগষ্ট ১৪’, ‘সদরঘাটের টাইগার’ ও ‘বুমেরাং’। নির্মাণ করেছেন দেশের অন্যতম প্রশংসিত তিন নির্মাতা শিহাব শাহীন, সুমন আনোয়ার ও ওয়াহিদ তারেক।

দেশীয় এই অ্যাপে আরও অনেক কনটেন্ট প্রকাশ পেলেও আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এই তিনটি সিরিজ। মূল অভিযোগ অশ্লীলতা। যার দায়ে দেশের অনেক নির্মাতা-প্রযোজক-শিল্পী দাবি তুলেছেন ওয়েব সিরিজের নামে এসব বন্ধ করা হোক। আবার কেউ বলছেন এটা বৈশ্বিক ডিজিটাল বিনোদনের অন্যতম দাবি। ফলে এটাকে বাদ দেওয়া মানে নিজেদের পিছিয়ে রাখা।
মূলত এসব বিতর্কে অ্যাকটিং মিডিয়া এখন এতটাই উত্তপ্ত, যেখানে করোনা, মহামারি, শুটিংয়ে ফেরা না ফেরা বা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তেমন কোনও আলাপের সুযোগ নেই! সবার মুখে একটাই আলাপ—ওয়েব সিরিজ। আলোচিত তিন ওয়েব সিরিজ
তো অ্যাপ বা ওয়েব সিরিজের পক্ষের শিবিরে দাঁড়িয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে এক হলেন দেশের ১১৮ জন নির্মাতা। ১৯ জুন বিকালে তাদের পক্ষ থেকে বাংলা ট্রিবিউনে প্রেরণ করা হয় ‘বৈশ্বিক ডিজিটাল বিনোদন শিল্প ও আমাদের ভাবনা’ শিরোনামের একটি যৌথ বিবৃতি।
সেই বিবৃতি প্রকাশের পর একই ইস্যুতে ২১ জুন রাতে আরেকটি বিবৃতি এলো দেশের ৭৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের পক্ষ থেকে।
‘বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্ম এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রদর্শিত নাটক সম্পর্কে দেশের বিশিষ্টজনদের অভিমত’ শিরোনামের এই বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরার অনুরোধ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, এতে করে তাদের পুরো বক্তব্য স্পষ্ট হবে সবার কাছে। নিম্নে সেটি তুলে ধরা হলো—

অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেকদিন ধরে কিছু ইউটিউব এবং ওয়েব প্ল্যাটফর্মে অত্যন্ত দায়িত্বহীনতার সাথে কিছু নির্মাতা প্রযোজক, নাট্যকার ও অভিনয়শিল্পী কুরুচিপূর্ণ নাটক পরিবেশন করে আসছে। এই নাটকগুলির মধ্যে কাহিনির প্রয়োজনে নয় একেবারেই বিকৃত রুচিসম্পন্ন নাটক নির্মাণ করে বিবেকবান ও সচেতন দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আমরা এহেন কাজকে তীব্রভাবে ভর্ৎসনা করি, নিন্দা জানাই।

বাংলাদেশের টেলিভিশনের নাটক জন্মলগ্ন থেকেই পারিবারিক বিনোদনমাধ্যম হওয়ায় দর্শকের রুচি ও মূল্যবোধ নির্মাণে ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন আসার পর কিছু প্রতিভাবান নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রী ও কলাকুশলী বাংলাদেশের এই মাধ্যমকে এক নতুন মহিমায় স্থাপন করেছিলো। কিন্তু কিছু কিছু চ্যানেল নাটকের মান এমনভাবে নেমে এসেছে যে বাংলাদেশের নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক দর্শক।
এর মধ্যেও কিছু ব্যতিক্রমী চ্যানেলে পরিচালকগণ কিছু ভালো কাজ করার তাগিদও অনুভব করেছে। যার প্রতিফলন আমরা প্রায়শই চ্যানেলগুলোতে দেখতে পাই। কিন্তু এর মধ্যে আবার অনলাইন প্রচার মাধ্যমগুলিতে অবাধ প্রচারের সুযোগে যৌনতা এবং ভায়োলেন্সকে উপজীব্য করে অশ্লীলতাকে আশ্রয় করেছে। সম্প্রতি সেই সব নাটক ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে প্রদর্শিত হয়ে বাঙালির চিরন্তন সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে আঘাত হানতে শুরু করেছে। এর আগে ভাষাকে বিকৃত করার মাধ্যমে কিছু পরিচালক নাটক নির্মাণ করায় জনরোষে পতিত হয় এবং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় কিছুটা প্রশমিত হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি সম্প্রচার নীতিমালা প্রকাশ করে যেখানে বিষয়গুলো সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে।

ওয়েব সিরিজ বিতর্ক: জোটবদ্ধ ১১৮ নির্মাতা, দিয়েছেন বিবৃতি

আশির দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার প্রবণতার ফলে দর্শক সিনেমা বর্জন করেছিলো। একইভাবে দর্শক যদি আমাদের নাটক বর্জন করতে থাকে তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

প্রযুক্তির উত্তরোত্তর আধুনিকতার ফলে আমরা টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়াই অন্যান্য মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারছি (যেমন ইউটিউব, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম)। আমরা এসবকে নিয়ন্ত্রণ বা বর্জন করার পক্ষপাতী নই। আমরা শিল্পীর স্বাধীনতা ও ভিন্নমতে বিশ্বাসী। কাহিনীর প্রয়োজনে কোনও শিল্পিত উপস্থাপনার খবরদারিত্বে আমরা বিশ্বাস করি না। কিন্তু অপ্রয়োজনে শুধুমাত্র দর্শক টানার মিথ্যা প্রলোভন আমাদের নাটক শুধুই বিনোদনের পণ্য হয়ে দাঁড়াক তাও চাই না।
এটিও উদ্বেগের বিষয় যে, ওয়েব বা এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে নাটক পাইরেসি হয়ে অন্যত্র চলে যায় এবং খণ্ডিতভাবে প্রকাশ হলে বিভ্রান্তি ছড়ায় যা অত্যন্ত বিপদজনক। করোনা পরবর্তী সময়ে শৈল্পিক উপস্থাপনায় নতুন অভিজ্ঞতায় উজ্জীবিত থেকে আমাদের শিল্প এক নতুন অভিধা সৃষ্টি করবে। রাষ্ট্র, আইন, সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নয়, শিল্পীর নিজস্ব অভিব্যক্তি হবে প্রধান বিষয়। শিল্পী কলাকুশলীদের পাশে দাঁড়াবার জন্য আমাদের সংগঠন। শিল্প এবং শিল্পীর ওপর যদি কোনও অন্যায় আঘাত আসে তার পাশে অবশ্যই দাঁড়াবে। এমতাবস্থায় নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, কলাকুশলী- সবাইকে সুস্থ ও শৈল্পিক বিনোদনের প্রক্রিয়ায় আসার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এই বিবৃতি দেওয়া ৭৯ জনের মধ্যে কয়েকজন


উপরোক্ত বিবৃতির পক্ষে একমত হয়েছেন নিম্নের ৭৯ জন ব্যক্তিত্ব। যার বেশিরভাগ অংশ অভিনয় জগতের, সঙ্গে রয়েছেন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, প্রকাশক, কার্টুনিস্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের নামজাদা মানুষ-
সৈয়দ হাসান ইমাম, মুস্তাফা মনোয়ার, মামুনুর রশীদ, আলী যাকের, আবুল হায়াত, দিলারা জামান, ফেরদৌসী মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, এটিএম শাসমুজ্জামান, ড. ইনামুল হক, ম.হামিদ, কে এস ফিরোজ, জুয়েল আইচ, আফজাল হোসেন, আনিসুল হক, নওয়াজীশ আলী খান, আনোয়ার হোসেন বুলু, সানাউল আরেফিন, শর্মিলী আহমেদ, সারা যাকের, লাকী ইনাম, ফাল্গুনী হামিদ, গোলাম কুদ্দুস, হাসান আরিফ, ঝুনা চৌধুরী, কামাল বায়েজিদ, আহসান হাবিব, হারুন অর রশীদ, তারিক আনাম খান, মান্নান হীরা, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ফেরদৌস হাসান, মোহন খান, মাসুম রেজা, সালাহউদ্দিন লাভলু, শহীদুজ্জামান সেলিম, অরুণ চৌধুরী, নাদের চৌধুরী, আজিজুল হাকিম, ফজলুর রহমান বাবু, তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ, গাজী রাকায়েত, ইরেশ যাকের, শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, তানিয়া আহমেদ, ত্রপা মজুমদার, শহীদুল আলম সাচ্চু, তুষার খান, মুশফিকুর রহিম গুলজার, খোরশেদ আলম খসরু, মাজহারুল ইসলাম, শাকুর মজিদ, আহকাম উল্লাহ, আহমেদ গিয়াস, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মোহাম্মদ হোসেন জেমি, মনোয়ার পাঠান, আনজাম মাসুদ, ফারিয়া হোসেন, জিনাত হাকিম, চয়নিকা চৌধুরী, ইন্তেখাব দিনার, এজাজ মুননা, শাহেদ শরীফ খান, দীপা খন্দকার, বৃন্দাবন দাস, পান্থ শাহরিয়ার, বিজরী বরকতউল্লাহ, তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, রিচি সোলায়মান, চঞ্চল চৌধুরী, মীর সাব্বির, এস এ হক অলিক, আহসান হাবিব নাসিম ও সাজু মুনতাসির।

/এমএম/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!