X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গীতিকবি-সুরস্রষ্টাদের বৈঠক: সংগীতাঙ্গনে বাজছে ঐক্যের সুর

সুধাময় সরকার
৩০ আগস্ট ২০২০, ১২:৩০আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২০, ১৫:২৩

গীতিকবি ও সুরস্রষ্টাদের বৈঠকের একাংশ

সংগীতাঙ্গনে বিরহ আর বিদ্রোহের সুর বাজছিল দীর্ঘ সময় ধরে। মামলা, জেল, জরিমানা, অভিযোগ আর উৎকণ্ঠা যেন গিলে বসেছে পুরো সংগীতাঙ্গনকে। কপিরাইট আর রয়্যালটি ইস্যুকে ঘিরে হাজারো প্রশ্ন উঠলেও সমাধান কিংবা সমঝোতার পথ খুঁজে পাচ্ছিলো না কেউ।
কারণ, গেল ৫০ বছর ধরেই বাংলাদেশ সংগীতাঙ্গনের উন্নয়নের বড় অন্তরায় ছিল সংশ্লিষ্টদের এক না হতে পারা কিংবা নেতৃত্বের সংকট। সেসব অতিক্রম করে এই করোনাকালে সংগীতাঙ্গনে বাজছে ঐক্যের সুর। সংগীত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই ঐক্যের শুরুটা হলো গীতিকবি সংঘের সূত্র ধরে। একটি গান সৃষ্টির শুরুটা যেমন একজন গীতিকারের হাত ধরে শুরু হয়, তেমনি বাংলাদেশে সংগীতাঙ্গনের ৫০ বছরের অস্থিরতার অবসানও ঘটতে যাচ্ছে এই সংঘটি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। শহীদ মাহমুদ জঙ্গীকে সমন্বয় কমিটির প্রধান করে ২৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি।
এরপর সংগীতাঙ্গনের নানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে গীতিকবি সংঘ বেশ কয়েকটি বৈঠকের আয়োজন করে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল কপিরাইট রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বৈঠক। যে বৈঠকের মাধ্যমে কপিরাইট খসড়া আইনে সংযুক্ত করার জন্য ১০টি প্রস্তাবনা পেশ করে গীতিকবি সংঘ।
গীতিকবি সংঘ সৃষ্টির পর থেকেই দেশের সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে সংঘবদ্ধ হওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়। এরমধ্যে সুরকারদের নিয়ে গঠিত হয়েছে নতুন সংগঠন- মিউজিক কমপোজার্স সোসাইটি, বাংলাদেশ। সভাপতি হিসেবে যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নকীব খান।
সংগীত নিয়ে গীতিকবি সংঘের ধারাবাহিক উদ্যোগ ও যৌক্তিক প্রস্তাবনাকে সাধুবাদ জানায় সুরকারদের সংগঠনটি। তারই রেশ ধরে ২৮ আগস্ট দুটি সংগঠনের নেতারা বসেন যৌথ বৈঠকে। অন্তর্জালে আয়োজিত এই বৈঠকে গীতিকবি সংঘর উদ্যোগ ও প্রস্তাবনাগুলোকে সাধুবাদ জানান মিউজিক কমপোজার্স সোসাইটির নেতারা।

গীতিকবি সংঘ’র আত্মপ্রকাশ

বৈঠকের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় সদ্য প্রয়াত দুই কিংবদন্তি আজাদ রহমান, আলাউদ্দীন আলী ও এন্ড্রু কিশোরকে স্মরণ করে।
বৈঠকে দুটো সংগঠনই এক হয়ে বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের উন্নয়ন এবং সুরস্রষ্টা ও গীতিকবিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে।
গীতিকবি জুলফিকার রাসেলের সঞ্চালনায় এই বৈঠকে অংশ নেন সংঘের প্রধান সমন্বয়ক শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। আরও উপস্থিত ছিলেন সমন্বয় কমিটির সদস্য লিটন অধিকারী রিন্টু, হাসান মতিউর রহমান, গোলাম মোর্শেদ, সালাউদ্দিন সজল, আসিফ ইকবাল, কবির বকুল, প্রীতম আহমেদ, জাহিদ আকবর, সোমেশ্বর অলি ও জয় শাহরিয়ার।
অন্যদিকে মিউজিক কমপোজার্স সোসাইটি, বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে অংশ নেন সভাপতি সভাপতি নকীব খান, মহাসচিব ফরিদ আহমেদ, সহ-সভাপতি ফোয়াদ নাসের বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত আলী ইমন, প্রচার ও তথ্য-প্রযুক্তি সম্পাদক বাপ্পা মজুমদার, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মানাম আহমেদ, আনিসুর রহমান তনু, রিপন খান, পার্থ মজুমদার ও এসআই টুটুল।
বৈঠকে দুটি সংগঠনের নেতাদের মধ্যে সংগীত ও সাংগঠনিক বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়।

গীতিকবি সংঘের মুখোমুখি কপিরাইট রেজিস্ট্রার

এ বৈঠক প্রসঙ্গে গীতিকবি সংঘের প্রধান সমন্বয়ক শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বলেন, ‘এভাবে কখনও এতজন গীতিকবি আর সুরস্রষ্টা একসঙ্গে বসেছেন কিনা, এমন খবর আমার অন্তত জানা নেই। ফলে এটা আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়। আমরা সংঘ করেছি গীতিকবিদের নৈতিক আর আর্থিক অধিকার রক্ষায় চেষ্টা করার জন্য। যে যুদ্ধটা শুরু করেছি, সেটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের যে খুব বেশি লাভ হবে তা নয়। কারণ, আমরা বেশিরভাগই মধ্যবয়স অতিক্রম করে গেছি। আমাদের এই উদ্যোগ আসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।’
জঙ্গী বৈঠকে উপস্থিত সুরস্রষ্টাদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘লিখলেই তো আর সেটা গান হয়ে যায় না। তার জন্য সুর দরকার, কণ্ঠ দরকার। তাই সংগীতের বিকাশ ও সুস্থতার জন্য আমাদের একা এগিয়ে গেলে চলবে না। এগুতে হবে সবাইকে নিয়ে। ফলে যারা সুর করেন, বাজান, তাদের সঙ্গেও কথা বলা দরকার। কণ্ঠশিল্পীদের কোনও প্ল্যাটফর্ম থাকলে তাদের সঙ্গেও আমরা বসতে চাইতাম। আশা করছি সেটিও শিগগিরই হয়ে যাবে। কারণ, এক হওয়া এখন সময়ের দাবি। আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে এই অচলায়তন ভাঙা সম্ভব নয়। আমাদের ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝি হতে পরে। সেগুলো সামলে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।’

আইন সংশোধনে কপিরাইট অফিসে চিঠি দিয়েছে গীতিকবি সংঘ

এদিকে মিউজিক কমপোজার্স সোসাইটি, বাংলাদেশ-এর সভাপতি নকীব খান বলেন, ‘গীতিকবি ও এমসিএসবি-এর মধ্যকার এই বৈঠকটি আসলেই ঐতিহাসিক। আমিও আগে কখনও এমন মিলন দেখিনি। আমরা দুটো সংগঠন যেটার শুরু করেছি। এটা ঠিক, গীতিকবি সংঘ অলরেডি এগিয়ে গেছে তাদের নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। আমরাও শুরু করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একই। পার্থক্য নেই। সবাই দিনশেষে সংগীতের কল্যাণ চাই। যার জন্য দরকার ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমাদের এমসিএসবি’র আরেকটা উদ্দেশ্য হলো মিউজিকের ডেভেলপমেন্ট নিয়েও কাজ করা। আমরা চাই সবাই এক হয়ে এগিয়ে যেতে। আর বিভাজন নয়। আশা করছি কণ্ঠশিল্পীদেরও একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে দ্রুত। একসাথেই আমরা কাজ করবো, সেটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য হোক। আমাদের এক নম্বর কাজ পারস্পরিক আস্থা আর শ্রদ্ধা অর্জন করা। এটা ঠিক থাকলেই আমরা একসঙ্গে নতুন কিছু করতে পারবো।’     
জানা গেছে, কণ্ঠশিল্পীদের নিয়েও একটি প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা আসবে শিগগিরই। ধারণা করা হচ্ছে, গীতিকবি, সুরস্রষ্টা ও কণ্ঠশিল্পীদের মেলবন্ধনে সংগীতে ফিরবে শৃঙ্খলা।

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না