অভিনেতা আলী যাকের। অভিনয়ে যার শুরু হয়েছিল বিখ্যাত ‘কবর’ নাটক দিয়ে, মঞ্চে। আজ (২৭ নভেম্বর) ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে শুরুর ঠিকানাতেই ফিরে গেলেন এই বহুমাত্রিক অভিনেতা। হেরে গেলেন করোনাভাইরাসের কাছে। রেখে গেছেন তার অসংখ্য কর্ম ও সৃষ্টি।
১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিকের। বয়স হলো ৭৬ বছর।
১৯৭২ সালে তিনি আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন। যার প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে। ১৯৭২ সালের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। ওই দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন, যার প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ওয়াপদা মিলনায়তনে।
১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা।
আলী যাকের এরপর টিভি নাটকে ব্যস্ত হন। পান অসীম জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ নাটকে তার চরিত্রগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে আকাশছোঁয়া। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। তবে মঞ্চের সঙ্গে তার সংযুক্তি ছিল আমৃত্যু। ছিলেন দারুণ সঞ্চালকও। দীর্ঘ সময় তিনি এই কাজটি সফলতার সঙ্গে করেছেন চ্যানেল আই ও বাংলাভিশনের পর্দায়।
আলী যাকের অভিনয়ের পাশাপাশি দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্বও বটে। বাংলাদেশের শীর্ষ বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি-এর কর্ণধার ছিলেন তিনি।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে আলী যাকের জানিয়েছেন, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশি নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা এসব কাজে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ওই দলে যোগ দেন সারা যাকের, যাকে শুরুতে চোখেই পড়েনি আলী যাকেরের! একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে চরিত্রটার জন্য তাকে তৈরি করার এবং খুব দ্রুত চরিত্রটির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যান আলী যাকের।
১৯৭৭ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।
আলী যাকের অভিনীত উল্লেখযোগ্য কাজের তালিকা:
- চলচ্চিত্র
আগামী
নদীর নাম মধুমতী
লালসালু
রাবেয়া
টেলিভিশন
- ধারাবাহিক নাটক
বহুব্রীহি
আজ রবিবার
- একক নাটক
একদিন হঠাৎ
নীতু তোমাকে ভালোবাসি
পাথর সময়
অচিনবৃক্ষ
আইসক্রিম
পাণ্ডুলিপি
গণি মিয়ার পাথর
- মঞ্চ নাটক
কবর
বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ
বাকি ইতিহাস
বিদগ্ধ রমণীকুল
তৈল সংকট
এই নিষিদ্ধ পল্লীতে
দেওয়ান গাজীর কিস্সা
সৎ মানুষের খোঁজে
অচলায়তন
কোপেনিকের ক্যাপ্টেন
ম্যাকবেথ
টেমপেস্ট
নূরলদীনের সারাজীবন
কবর দিয়ে দাও
গ্যালিলিও
কাঁঠাল বাগান আরও:
নন্দিত অভিনেতা আলী যাকের আর নেই
আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী