X
বুধবার, ২১ মে ২০২৫
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গোরখোদকের মুখোমুখি অভিনেতা

বিনোদন রিপোর্ট
২০ মে ২০২৫, ১৯:২৯আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ১৯:৩৬

কিশোরগঞ্জের গোরখোদক মনু মিয়া, এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৭টি কবর খুঁড়েছেন। তিনি অসুস্থ হয়ে  হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী ঘোড়াটিকে কে বা কারা মেরে ফেলেছে।

এই খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ছোট পর্দার অভিনেতা খায়রুল বাশার মনু মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অবশেষে তিনি মনু মিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেছেন।

তারা মুখোমুখি বসে কাটিয়েছেন লম্বা সময়। মনু মিয়ার জীবনবোধ, অবলা প্রাণীর প্রতি তার অসীম মমতা বাশারকে বিমোহিত করেছে। সেখান থেকে ফিরে এসে এই অভিনেতা এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন বিস্তারিত...

২০ মে দেওয়া এই পোস্টের শুরুতেই খায়রুল বাশার লিখেছেন, ‘মুক্তার মালা গলায় দিয়ে ঘুরে কপাল পুড়া! না কিনে উপায় কি, কিনতে চাইলে ঘোড়া?’

এরপর তিনি লিখেন, ‘মনু চাচা দোয়া ছাড়া কিছু চান না আপনাদের কাছে। উনি আপনাদের জন্য দোয়া করেন যেন আপনারা ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন।’ মনু মিয়ার সঙ্গে খায়রুল বাশার বাশার লিখেছেন, “মনু চাচা বললেন, ঘোড়ার জন্য তার কষ্ট নাই। কষ্ট নাই কারা তার ঘোড়াকে হত্যা করেছে তা নিয়েও। মনু চাচা মনে করেন তার ঘোড়ার সাথে তার যাত্রা এ পর্যন্তই রাখছেন আল্লাহ। ঘোড়াটার কপালে আল্লাহ সময় সীমা এই রাখছিলেন। বললেন, ‘সে মারা গেছে তো চোখে দেখি নাই তাই কষ্ট যেটুক হবার তাও হচ্ছে না।’ আসলে আর কতটা অভিনয় করলে সন্তানের প্রতি মায়া আড়াল করতে পারবেন; মনু চাচা ভেবে পাচ্ছেন না!”

তিনি লিখেছেন, ‘আবার জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি ফিরে ওকে ছাড়া শূন্য শূন্য লাগবে না? বললেন, ১০ মণ খড় আর ১০ মন কুড়া কিনেছিলেন ওর জন্য। অল্প খাইয়ে ঢাকায় এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। এই খড় কুড়া ওর রিজিকে থাকলো না, তার আগেই সে চলে গেলো! বাড়ি ফিরে এই খড় কুড়া দেখে কষ্ট হবে। বাড়ি ফিরে যে ঘোড়াটার জন্য কষ্ট হবে, এই ভেবেই মনু চাচার চোখ ভিজে উঠলো! আমি একটু থামলাম। ভাবলাম কত আর শক্ত থাকা যায়! মায়া তো মনু চাচার আছে। মনু চাচার অসুস্থতা বলতে ডায়বেটিস আর কোমর ব্যথা। কথাবার্তায় যা বুঝলাম খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম করেন খুব। ফজরের নামাজ পড়ে বেরিয়ে পড়েন উনার দায়িত্বে, জোহরের নামজ শেষে দাফন শেষ হয়, তারপর বাড়ি ফিরতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা বা রাত। সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবার খাওয়া হয় না। এমনটা প্রায়ই ঘটে। কারণ মৃত ব্যক্তির বাড়িতে উনি কখনও কিছু খান না। কবর খোঁড়া কাজে উনি কোনদিন কারো থেকে এক পয়সা নেন নাই। নিঃস্বার্থভাবে নিরলসভাবে উনি মানুষের প্রতি উনার মহৎ দায়িত্বটাকেই এগিয়ে রেখেছেন!’

এরপর বাশার লিখেছেন, “জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই ঘোড়াটা কতদিন ছিলো আপনার সাথে? উনি বললেন, মুক্তির সময় থেকে উনি ঘোড়ায় চড়েন। ৭১-এ বয়স কত ছিলো জিজ্ঞেস করলে বললেন, ‘মুক্তিদের বয়সের সমানই।’ ১৩-১৪? হেসে বললেন, ‘বয়স তখন ১৭-১৮ই হবে মনে হয়।’ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলাম, এই কাজ কবে থেকে করেন? উনিও হেসে বললেন, ‘তখন বাবাজি তোমরা জন্মও নাই।” মনু মিয়ার সঙ্গে খায়রুল বাশার এই অভিনেতা এরপর লিখেছেন, ‘মানুষের বাইক-সাইকেলের শখ থাকে। আমি যতটা বুঝলাম উনার শখ ছিলো হাতেম তাঈ হওয়া। মানুষের প্রয়োজনে ঘোড়ার পিঠে চড়ে, মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া। উনি উনার সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে মহৎ কাজটিই করে গেছেন আজীবন। উনি সুস্থ হয়ে আবার উনার শখের কাজে ফিরতে চান দ্রুত। আপনাদের দোয়ায় নিশ্চয়ই আল্লাহ উনাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলবেন। উনি কারো কাছে ঘোড়া চান না, দোয়া চান। উনার কারো প্রতি অভিযোগ-অনুযোগ নেই। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে প্রয়োজনে ৭ টা ঘোড়া কিনতে পারবেন বলেছেন। যা হবার হয়ে গেছে, আল্লাহ যা নির্ধারণ করতে চান তাই হবে। উনি মনে করেন সবই নসিব।’

একদম শেষে মনু মিয়া সম্পর্কে বাশার লিখেছেন, ‘কতটা কদর বুঝি আমরা এমন মানুষদের! কী প্রতিদান পেল এই মানুষটা? হাঁটছি আর ভাবছি...মুক্তার মালা গলায় দিয়ে ঘুরে কপাল পুড়া! না কিনে উপায় কি, কিনতে চাইলে ঘোড়া? মনু মিয়ার ঘোড়া তার জীবন দিয়ে আমাদের সাথে এক নায়কের পরিচয় করিয়ে দিলো! আমাদের শেখা উচিত এই সমাজের মানবিক আদর্শ, সম্মান এবং গর্ব! আমাদের মনু মিয়া।’

/সিবি/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
গোরখোদকের মুখোমুখি অভিনেতা
গোরখোদকের মুখোমুখি অভিনেতা
‘জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু সময় পার করেছি এই দুইটা দিন’
‘জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু সময় পার করেছি এই দুইটা দিন’
ইরফান সাজ্জাদ বললেন, আপুটা জোস!
ইরফান সাজ্জাদ বললেন, আপুটা জোস!
আসিফ নজরুল ও ফারুকীকে যে অনুরোধ করলেন জায়েদ খান
আসিফ নজরুল ও ফারুকীকে যে অনুরোধ করলেন জায়েদ খান
কানে জাহ্নবী, সঙ্গে কথিত প্রেমিকও!
কানে জাহ্নবী, সঙ্গে কথিত প্রেমিকও!