সৌন্দর্য যখন করপোরেট ইন্ড্রাস্ট্রির পণ্য, তখন তা ছকবদ্ধ ও একমুখী না হয়ে পারে না। করপোরেট সৌন্দর্যের ইন্ডাস্ট্রিগুলো আমাদের শিখিয়েছে, ফর্সা মানেই সুন্দর। দুনিয়াজুড়েই তাই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য। দুনিয়াজুড়েই ফর্সার জয়জয়কার।
ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়। সেখানে এখন ফর্সা রঙের ব্যাপক চাহিদা। পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে টেলিভিশনে পণ্যের বিজ্ঞাপন পর্যন্ত সর্বত্রই ফর্সা রঙের মাহাত্ম্য প্রচার, সবখানেই ফর্সার জয়জয়কার। কোন মেয়ের গায়ের রং কালো হলে তাকে গড়পরতা হিসেবেও বিবেচনা করা হয় না, সুন্দরী হিসেবে তো দূরের কথা।
তবে ইতিহাসে নজর ফেরালে দেখা যায়, প্রাচীন ভারতে সৌন্দর্যের ধারণা এমন ছিল না। সেই সময়ের মানুষ ত্বকের কালো রংকেই সুন্দর বিবেচনা করতো। শুধু নারীর ক্ষেত্রে নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকেই সুন্দর বলে ধরে নেওয়া হতো ত্বক শ্যামবর্ণ হলে।
হিস্টোরাম নামের ইতিহাসভিত্তিক এক ওয়েবসাইটে উঠে এসেছে এইসব তথ্য।
প্রাচীন ভারতের বাস্তবতায় হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের গায়ের রং ছিল কালো, এ ছাড়াও হিন্দু অবতার ও রাজা রামকেও কালো ও সুপুরুষ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। একই রকমভাবে পুরাণের দ্রৌপদীকে অসাধারণ সুন্দরী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। সৌন্দর্যের দিক থেকে তার কাছাকাছিও কেউ ছিলেন না। কিন্তু তিনি ছিলেন শ্যামবর্ণা।
আরও পড়ুন: মমতার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শেখ হাসিনা
প্রাচীন ভারত অভিযানে এসেছিলেন যে সব অভিযাত্রী, তারাও ভারতীয় সৌন্দর্যের কথা লিখে গিয়েছেন। মার্কো পোলো তার ভ্রমণকাহিনীতে লিখেছেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, এখানে কালো মানুষকে সম্মানিত ও সুন্দর বলে বিবেচনা করা হয়। শুধু তাই নয়, ভারতীয়দের দেবদেবীরা সবাই কালো, অপদেবতারা সব তুষারশুভ্র।’
পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, ডাচ ও ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যায় ভারতীয়দের সৌন্দর্যের ধারণা। কালো মানুষদের কুৎসিত ভাবতে শুরু করে ভারতের মানুষ। ভারতের সংস্কৃতিকে ‘আদিম’ বলে অভিহিত করা ও কালো মানুষকে অসুন্দর বলে বিবেচনা করার পেছনে ব্রিটিশদের প্ররোচনা রয়েছে। ব্রিটিশরা শ্বেতাঙ্গ ও শাসক হওয়ায় তারাই সৌন্দর্যের আদর্শ মান তৈরি করেন, আর এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ণবৈষম্য শুরু হয়। সূত্র: উইকিপিডিয়া, হিস্টোরাম
/ইউআর/বিএ/