X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ফাঁস হলো হিলারি শিবিরের হতাশা আর উৎকণ্ঠা

বিদেশ ডেস্ক
২৬ অক্টোবর ২০১৬, ২২:১৩আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ২২:১৪
image

এবার ফাঁস হলো হিলারি শিবিরের হতাশা আর উৎকণ্ঠা পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালিন মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন, আইএসের সঙ্গে পরোক্ষ অস্ত্র বিক্রির সম্পর্ক আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী মনোনয়নে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকে জোর করে হারিয়ে দেওয়ার সঙ্গে এরইমধ্যে জড়িয়ে গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের নাম। এবার সম্ভাব্য ওই আগামি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিপর্যস্ত হওয়ার পরিস্থিতি তুলে এনেছে উইকিলিকস। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সরকারী ইমেইল একাউন্ট থেকে হিলারির বিভিন্ন ব্যক্তিগত ইমেইল ফাঁস হওয়ার ঘটনায় হিলারি এবং তার শিবিরের হতাশা আর উৎকণ্ঠার বিবরণী ফাঁস করেছে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ও গোপনীয়তা বিরোধী বিকল্প সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস।

ধারাবাহিক ফাঁসের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় নজরদারি ও তথ্য গোপনের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিকল্প সংবাদমাধ্যম উইকিলিকস হিলারির নির্বাচনি কর্মকর্তা জন পোডেস্টার বেশকিছু ইমেইল প্রকাশ করে। সেইসব মেইল ব্যাখ্যা করে একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন হাজির করেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। তাদের খবরে হিলারি শিবিরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত উঠে এসেছে। উঠে এসেছে তাদের হতাশা আর উৎকণ্ঠার তথ্য।

হিলারির ব্যক্তিগত আইনজীবী ডেভিড কেন্ডাল, তার পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক কর্মকর্তা শেরিল এবং তার প্রচারণা শিবিরের প্রধান ব্যক্তি জন পডেস্টার মধ্যে যেসব ফাঁসকৃত মেইল আদানপ্রদান হয়েছে সে সব মেইলের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁস করা ইমেইলের তথ্য অনুযায়ী সরকারি সার্ভার ব্যবহার করে হিলারির ব্যক্তিগত মেইল করার ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্য বিতর্ক এড়িয়ে যেতে চাইতেন তার শিবিরের  কর্মকর্তারা। ওইসব ইমেইল বিশ্লেষণ করে ওয়াশিংটন পোস্ট তুলে এনেছে সরকারি সার্ভার ব্যবহার নিয়ে হিলারির অবস্থান, তার দেওয়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর, তাকে নিয়ে তার কর্মকর্তাদের মধ্যকার ভীতি কিংবা হতাশা। এমনকী ওই কর্মকর্তারাও যে পরস্পরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন সে কথাও উঠে এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

হিলারির প্রচারণা শিবিরের চেয়ারম্যান জন পোডেস্টা ২০১৫ সালের মার্চে অভিযোগ করেছিলেন, ‘আমাদের যে বন্ধুরা স্বচ্ছতার কথা বলেন; সেই কেন্ডাল, শেরিল এবং ফিলিপ কিন্তু সামনের দিনগুলোর অবস্থা সম্পর্কে অবগত নয়।।’ এর বিপরীতে পোডেস্তার দীর্ঘদিনের বন্ধু নীরা টেন্ডন প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন তারা এই কাজ ১৮ মাস আগে করেননি? আমার ধারণা, আমি তা জানি। তারা এই বিষয়টির বাইরে থাকতে চেয়েছিলেন।’

হিলারি এবং অন্যান্যদের কর্মকাণ্ডে যেভাবে জনমত জরিপে ডেমোক্র্যাট শিবিবের অবস্থানের অবনতি হচ্ছে, তাও উঠে এসেছে কোনও কোনও ইমেইলে।  উঠে এসেছে পদস্থ উপদেষ্টাদের ভয়, উৎকণ্ঠা আর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।

ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনে মনোনয়ন চাইতে পারেন, এই ভয়ে শঙ্কিত হয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে টেন্ডনকে এক ইমেইলে পোডেস্টা লেখেন, ‘নৌকায় অনেক পানি উঠে গেছে, তা এখন তুলে আনাটা সহজ হবে না।’ তিনি আরও লেখেন, ‘প্রচারণা পূর্ববর্তী সময়ে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার (হিলারি) আচরণ শোধরাতে অনেক কাজ করতে হবে।’ ওই ইমেইলের বিপরীতে টেন্ডন লেখেন, ‘হয়তো আমার থেকে ভালো করে কেউ জানেন না, তার (হিলারি) আচরণ কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।’

এ বিষয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট টেন্ডন, কেন্ডাল, রেইনেজ-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তারা কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।

হিলারি শিবিরের কেউ ইমেইল ফাঁস নিয়ে কোনও কথা না বললেও মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ডেমোক্র্যাট শিবির ও তার নেতাদের ইমেইল হ্যাক করার সঙ্গে রুশ সরকার জড়িত। হিলারির মুখপাত্র গ্লেন কাপলিন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘মার্কিন কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই ফাঁসের সঙ্গে রুশ পদস্থ কর্মকর্তারা জড়িত, অথচ রুশ প্রপাগান্ডায় উইকিলিকস নিয়ে তিনি (ট্রাম্প) উচ্ছ্বসিত।’ হিলারির সহযোগীদের মতে, রাশিয়া আগে থেকে ভুয়া দলিল তৈরি করে আসছে। তারা এই ফাঁস করা ইমেইলগুলো সঠিক কিনা, এ নিয়েও কোনও কথা বলতে চাচ্ছেন না।

পোডেস্টার ইমেইলে উঠে এসেছে হিলারি শিবিরের ভেতরকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কথাও। একে ঐতিহাসিক ঘটনা বলে রায় দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। ফাঁস হওয়া কিছু ইমেইলে দেখা গেছে, হিলারির উপদেষ্টারা প্রার্থীদের মধ্যকার শক্তি ও দুর্বলতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ফাঁস হওয়া মেইল থেকে দেখা যায়, মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশের কয়েক মাস আগেই হিলারির ব্যক্তিগত ইমেইলের বিষয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছিলেন তার উপদেষ্টারা। আর সরকারি সার্ভার ব্যবহারের বিষয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছিলএবং মার্কিন বার্তাসংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এ প্রকাশেরও আগে সরকারি সার্ভার ব্যবহারের বিষয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’তে (অ্যাসোসিয়েট প্রেস) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশেরও বেশ কিছুদিন আগে। ওই সার্ভার থেকে গোপনীয় কোনও তথ্য ফাঁস খয়েছে কিনা, তা তদন্তে নামে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।

হিলারি ক্লিনটন

পোডেস্টার ফাঁস হওয়া ইমেইলগুলোতে দুই কর্মকর্তাকে হিলারির সমর্থনে নিবেদিত দেখা যায়। এদের একজন জন পোডেস্টা। অপরজন তারই বন্ধু নীরা টেন্ডন। এক ইমেইলে নীরা নিজেকে ‘অনুগত সৈনিক’ বলে দাবি কর বলছেন, ‘হিলারির যা দরকার, আমি সবসময় তা-ই করবো।’

গত বছর আগস্টে নীরা এক ইমেইলে পোডেস্তাকে লেখেন, ‘আমি জানি, ইমেইল ফাঁস হওয়ার জন্য আমাদের সমস্যা হবে। আর আমি এ বিষয়ে অবগত।’ তিনি আরও লেখেন, ‘তবে তার দ্বিধা ও দুঃখপ্রকাশের অনুভূতি জাতীয় সাক্ষাৎকারে সঠিকভাবে প্রকাশ না পেলে, আমার ধারণা তা একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে।’

গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি-এর আন্দ্রিয়া মিশেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিলারি বলেন, ‘দুঃখপ্রকাশ করলে তা জনগণকে বিভ্রান্ত করবে।’ মূলত এসব কথা বলে হিলারি ইমেইল ফাঁসের বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

একইদিনে নীরা এক ইমেইলে লেখেন, ‘সবাই চাইছে তিনি (হিলারি) ক্ষমা চেয়ে নিন। আর তার সেটা করা দরকার। ক্ষমা না চাওয়াটা তার দুর্বল চরিত্রের লক্ষণ।’ তিনি মন্তব্য করেন, এটি হিলারির সমালোচিত হওয়ার মতো একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

এর তিনদিন পরও হিলারি ক্ষমা চাননি। নীরা ইমেইলে লেখেন, ‘ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টা রোগ নির্ণয়ের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি কেবল ধারণা করতে পারি, প্রচারণা শিবির কেমন করে এগোচ্ছে। এখানে কি আমি কোনও কাজে লাগতে পারি?’  

পোডেস্তা এর উত্তরে বলেন, ‘তোমার উচিত তাকে (হিলারি) ইমেইল করা। তিনি বলতে পারেন, মার্কিন জনগণের কাছে ক্ষমা না চেয়েই তিনি দুঃখিত। তাকে বলুন ক্ষমা চেয়ে এগিয়ে যেতে, কেন এতেই ঝুঁলে থাকা।’

এর পরেরদিন হিলারি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে। এজন্য আমি দুঃখিত। আমি এর দায়িত্ব নিচ্ছি।’

পডেস্টা এবং নীরার সঙ্গে হিলারি

উইকিলিকস প্রকাশ্যে এনেছে, কেমন করে প্রচারণার একেবারে প্রথম দিক থেকেই কয়েকজন ডেমোক্র্যাট উপদেষ্টা হিলারির আচরণ এবং তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। সেখানেই ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বসংঘাতের ঘটনা দেখা যায়। ০১৫ সালের মার্চে পোডেস্টা এবং নীরা টেন্ডনের মাঝে আদান-প্রদান হওয়া ইমেইলে দেখা যায়, ইমেইল ফাঁসের জন্য তারা দুষছেন মিলসকে। এক ইমেইলে নীরা লেখেন, ‘এটা শেরিল স্পেশ্যাল। আমি জানি আপনি তাকে ভালোবাসেন, কিন্তু এটা তার এক দুর্বলতা। তিনি ওই লোককে (মিলস) না বলতে পারেন না।’ 

মিলস সরাসরি হিলারির প্রচারণা শিবিরের সঙ্গে জড়িত নন। তবে ইমেইলগুলোতে দেখা গেছে, সকল বড় সিদ্ধান্তেই তার মতামত চাওয়া হয়েছে। যদি হিলারি জয়ী হন, তাহলে হোয়াইট হাউসে তার একটি বড় ভূমিকা থাকবে বলে ধারণ করা হয়।

ইমেইলে আরও দেখা যায়, মিলসের বিষয়ে আরও সংশয় প্রকাশ করেন হিলারির প্রচারণা শিবিরের সমন্বয়ক রবি মুক। ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা চেয়ে প্রচারণা চালানোর সময় রবিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন হিলারি।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক এক ইমেইলে পোডেস্তার কাছে অভিযোগ করেন, মিলস তাকে পাশ কাটিয়ে জ্যেষ্ঠ প্রচারণা সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এ প্রসঙ্গে মুক লেখেন, ‘একটি স্বচ্ছ ব্যবস্থা, যাতে আমরা একমত হয়েছিলেম, সেখানে গোপনে বিষয়টি এগিয়ে চলেছে। এই গোপন লোককে আটকাতে হবে। এখন এক চরম সময় চলছে।’  

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট।

/এসএ/বিএ/

সম্পর্কিত
ঝুঁকি নিচ্ছেন নেতানিয়াহুজিম্মি মুক্তি ও রাফাহতে অভিযান নিয়ে বিভক্ত ইসরায়েলিরা
রাফাহতে হামলার আশঙ্কা, ইসরায়েলে অস্ত্রের চালান স্থগিত যুক্তরাষ্ট্রের
হামাসের সংশোধিত প্রস্তাব গাজায় যুদ্ধবিরতি অচলাবস্থা ভাঙতে পারে: যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষ খবর
কদমতলীতে গলায় ফাঁস লেগে দশ বছরের শিশুর মৃত্যু
কদমতলীতে গলায় ফাঁস লেগে দশ বছরের শিশুর মৃত্যু
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব শুরু আজ থেকে
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব শুরু আজ থেকে
আজিজ মোহাম্মদসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ, খালাসের দাবি আসামিপক্ষের
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাআজিজ মোহাম্মদসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ, খালাসের দাবি আসামিপক্ষের
প্রথম জেলা শাখা হিসেবে নোয়াখালীতে উন্মুক্ত লাইব্রেরির যাত্রা শুরু
প্রথম জেলা শাখা হিসেবে নোয়াখালীতে উন্মুক্ত লাইব্রেরির যাত্রা শুরু
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার