X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়ার দাস বাজারে বিক্রি হচ্ছেন আফ্রিকার বিপন্ন শরণার্থীরা

শাহেরীন আরাফাত
১২ এপ্রিল ২০১৭, ১২:১৭আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৫৮
image

লিবিয়ার দাস বাজার ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে দাস যুগের অবসান হয়েছে। তবে অবসান হয়নি দাসত্বের। প্রগতি কিংবা অগ্রগতির আলো পৌঁছায়নি; এমন স্থানগুলোতে এখনও জারি আছে দাস যুগের বাস্তবতা। লিবিয়ার দাস বাজার তেমনই এক অন্ধকার দাসত্বের পীঠস্থান যেন। আফ্রিকান শরণার্থীদেরকে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে ওই ‘দাস বাজারে’ তোালা হয়। মানুষ পণ্য হয়। সম্পন্ন হয় তাদের বেচাকেনা। তারপর কিনে নেওয়া আরসব পণ্যের মতো করেই ব্যবহার করা হয় তাদের। 
লিবিয়ার দাস বাজারের বিক্রি হওয়ার পর ওই দাসত্বের কবল থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিরা জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনকে (আইওএম) এসব কথা জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাদের বিপন্ন জীবন বাস্তবতা।

মঙ্গলবার আইওএম জানায়, তারা বেশ কয়েকজন পশ্চিম আফ্রিকান শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে। ওই ভুক্তভোগীরা জানান, লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সাবহায় বহু শরণার্থীকে নিয়ে এসে গ্যারেজ বা পার্কিং করার স্থানে দাস বাজারে বিক্রি করা হয়।

লিবিয়ায় আইওএম-এর প্রধান ওসমান বেলবেইসি জানিয়েছেন, ওই শরণার্থীদের দুই থেকে তিন মাসের জন্য ২০০ থেকে ৫০০ ডলারে বিক্রি করা হয়। পরে আবারও তাদের হাত বদল হয়। কর্মসামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে তাদের দাম নির্ধারণ করা হয়। মুক্তিপণের অর্থ না দিতে পারলে, তাদের জোরপূর্বক শ্রম ও যৌন ব্যবসায় কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

তিনি আরও জানান, ‘ওই বাজারে শরণার্থীদের পণ্য হিসেবে বিক্রি করা হয়। সেখানকার চোরাচালানিদের কাছে মানুষের কেনা-বেচা এক সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। লিবিয়ায় তারা ক্রমেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।’

সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাহারা অঞ্চলের কয়েক শতাধিক তরুণকে তথাকথিত দাস বাজার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

সেনেগালের এক অভিবাসী জানিয়েছেন, দক্ষিণ লিবিয়ার শহর সাবহাতে এমনই একটি দাস বাজারে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। এর আগে তাকে শতাধিক অভিবাসীসহ একটি খাঁচার ভেতরে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। বন্দী অভিবাসীদেরকে মুক্তিপণের জন্য তাদের স্বজনদের কাছে ফোন করার কথা বলতো অপহরণকারীরা। তাদেরকে যে নির্যাতন করা হচ্ছে সেটি শোনানোর জন্য ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সময়, অনেক অভিবাসীকে প্রহার করতো অপহরণকারীরা।

তিনি জানান, ওই শরণার্থীদের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাতে হতো। সেখানে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্য ছিল একেবারেই কম। যারা মুক্তিপণের অর্থ দিতে পারতো না, হয় তাদেরকে মেরে ফেলা হতো, নয়তো অনাহারে রাখা হতো।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, নারীদেরকে লিবিয়ার ধনীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হতো। তাদেরকে যৌনদাসী হিসেবে জীবনযাপনে বাধ্য করা হতো।

আইওএম জানিয়েছে, নাইজেরিয়া, সেনেগাল ও গাম্বিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে বন্দি করা হয়। তারা অপুষ্টিতে ভোগে কঠোর শ্রম ও যোউন নির্যাতনের শিকারই শুরু হন না। তাদের হত্যাও করা হয়। গত বছর একই মাসে অন্তত ১৪ জন বন্দি শরণার্থী নিহত হয়েছিল বলে জানিয়েছে আইওএম।

উল্লেখ্য, আফ্রিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার মূল পথ লিবিয়া ওপর দিয়ে যায়। গত তিন বছরে এ পথে গড়ে দেড় লাখ মানুষ ইউরোপে পারি জমিয়েছে।

চলতি বছরে ২৬ হাজার ৮৮৬ জন শরণার্থী এ পথে ইতালি দিয়েছেন। যা গত বছরের তুলনায় সাত হাজার বেশি।
সূত্র: গার্ডিয়ান, আলজাজিরা

/বিএ/

সম্পর্কিত
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
ক্যানারি দ্বীপে নৌকাডুবি, ৫০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলে বৃষ্টিপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, এখনও নিখোঁজ অনেকে
ব্রাজিলে বৃষ্টিপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, এখনও নিখোঁজ অনেকে
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৬ মে, ২০২৪)
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?