X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি দমনে পশ্চিমবঙ্গ আদৌ আন্তরিক?

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
০২ মে ২০১৭, ২৩:১২আপডেট : ০২ মে ২০১৭, ২৩:১৯

পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় `নবান্ন`
তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে পশ্চিম বাংলা রাজ্য সরকারের পক্ষে কী ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদৌও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব?

ভারত তো বটেই, সরকারিভাবে পশ্চিমবাংলা সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে যেকোনও  ধর্মীয় গোষ্ঠীর জঙ্গিপনার বিরুদ্ধে সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকায় যৌথ সংগ্রাম ও সহযোগিতায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

এর আগে এ প্রশ্নে রাজ্য ও দিল্লির রাজনৈতিক অঙ্গনে একটু রেখে ঢেকে আলোচনা করা হতো। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে অনেক খোলাখুলিভাবে সর্বস্তরে আলোচনা করার চর্চা শুরু হয়েছে। ভারতের প্রচার মাধ্যমেও এ নিয়ে লেখালেখি বেড়েছে।  কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে ভারত সরকারকে একটি বিশেষ বার্তায় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ইসলামিক জঙ্গিদের অবৈধ যাতায়াত ও কার্যক্রমে সতর্ক করা হয়। মাত্র দু’এক বছর আগেও যেখানে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের সংখ্যা মোটামুটিভাবে ৭শ’ থেকে ৮শ’ ছিল, ২০১৬ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজারের এর ওপরে।

বিষয়টি গুরুতর সন্দেহে নেই। এই সংখ্যা বৃদ্ধির একটা বড় কারণ, বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের ধর্মীয় উগ্রতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রাম। কলকাতা শহরেও রাজনীতি সচেতন লোকজন জানে, এ ব্যাপারে ঢাকা কিন্তু সৌদি আরব বা তুরস্কের মতো পরাক্রমশালী পশ্চিমা দেশগুলোর কথাতেও জঙ্গি দমনের ব্যাপারে কোনোরকম সমঝোতা করেনি।

বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জানিয়েছে, এখন জঙ্গিরা ত্রিপুরা ও আসামের মধ্য দিয়ে অনুপ্রবেশ করে পশ্চিমবাংলাতে ঘুরপথে একটু নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে। কিছুদিন গা ঢাকা দেওয়ার পর তারা যথারীতি বেআইনি অস্ত্র ও বোমা তৈরি বা কিনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন জায়গাতে আরও নতুন আশ্রয়স্থল খুঁজে নিচ্ছে, স্থানীয় দুস্কৃতকারী বা জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং বেআইনিভাবে বাংলাদেশে অস্ত্রশস্ত্র পাচার চালিয়ে যাচ্ছে।

ভারত সরকারের একটি হিসাব অনুযায়ী দেখা যায়, গত ছয় মাসে বাংলাদেশের পুলিশি ও অন্যান্য অভিযানে আটক ও মৃতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে। এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশে  আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু থাকত না।  একটি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর  থেকে এখন পর্যন্ত হুজি, জেএমবি ও অন্য গোষ্ঠীর জঙ্গিরা কম করে ২৬টি আক্রমণ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছে, এতে সরাসরিভাবে মারা গেছে বিদেশি ও নারীসহ নানা গোষ্ঠীর ৫০ জঙ্গি।

তবে বাংলাদেশ সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে বহু আক্রমণই অপেক্ষাকৃত সহজ টার্গেট যেমন, ব্লগ লেখক, সামাজিক কর্মী বা সাধারণ পুরোহিতদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। সাধারণত এই ধরনের লোকেরা নিরাপত্তা নিয়ে ঘোরফেরা করেন না, তাই এদের আক্রমণ বা হত্যা করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। আবার এসব ঘটিয়ে প্রচারমাধ্যমের সাহায্যেও যথারীতি আতঙ্ক সৃষ্টি করা যায়।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, বাংলাদেশের দেওয়া তথ্য নিয়ে ভারত সরকার জঙ্গিবিরোধী  অভিযানে কতটা সাহায্য পেয়েছে? উত্তরে বলতে হয়, সব জায়গায় একই রকম সাড়া পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ত্রিপুরা ও আসামে কিন্তু দিল্লির মাধ্যমে  যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য  সংস্থাগুলো ব্যবহার করছে। গত কয়েক সপ্তাহে আসামে কম করেও ৫০ জন জঙ্গি তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ত্রিপুরাতেও বেশ কিছু লোক গ্রেফতার হয়েছে।

তবে পশ্চিমবাংলার কথা আলাদা। ওয়াকিবহাল বিশ্লেষকদের মতে, এখানে প্রথমেই পুলিশের বড়কর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বাংলাদেশের দেওয়া পরিসংখ্যানে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আবার বেশিরভাগ জঙ্গির পশ্চিমবাংলায় আশ্রয় নেওয়ার তথ্যটিও তাদের অপছন্দ, যদিও এ ব্যাপারে রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু ঢাকার দেওয়া তথ্যকেই সমর্থন করেন।

পশ্চিমবাংলায় সরকারিভাবে ইসলামি জঙ্গিদের সম্পর্কে এই গা ছাড়া মনোভাব নতুন নয়। বেশ কিছুদিন আগে প্রয়াত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের একজন সেনাসদস্য মোহাম্মদ মোসলেহউদ্দিনকে ধরার ব্যাপারে বাংলাদেশ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের পুলিশ মুর্শিদাবাদ থেকে তাকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়। ধারণা করা হয়, কেউ তাকে গোপনে এ অভিযানের খবর আগেই পাচার করে দিয়েছিল!

এছাড়াও ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড় এলাকাতে বাংলাদেশি জেএমবি কর্মীদের দ্বারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটে, তখন স্বয়ং জেলার এসপি বলেছিলেন, ‘তেমন কিছু নয়, একটি গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটেছে’। অথচ এই বিস্ফোরণে তিনজন  মারা যায়। পরে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এনআইএ (NIA) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। তবে শুরুর দিকে এ তদন্তে তেমন কোনও সহযোগিতা করেনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ। তারপরে বাংলাদেশের পুলিশের সাহায্যে ভারতে তো বটেই দু’দেশ থেকে প্রায় ২৫ জন পুরুষ ও নারীকে গ্রেফতার করা হয়।  
শুধু তাই নয়, খাগড়াগড়ে বাকি যেসব অস্ত্র ও বোমা তৈরি করে রাখা ছিল, রাজ্য সরকারের পুলিশ  কোনও সংস্থাকে কোনোরকম পরীক্ষা করার সুযোগ না দিয়ে সেগুলো তড়িঘড়ি করে নিষ্ক্রিয় করে! পরে  এই নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

এ বিস্ফোরণের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরুতেই বলেছিলেন, ‘এই তদন্তে যেন ধর্মীয় যোগাযোগ না খোঁজা হয়, কোনও নিরীহ ব্যক্তিকে অযথা হয়রানি না করা হয়। আইন আইনের পথে চলবে।’ 
তবে এরপরেই আবার প্রকাশ্য জনসভায় তিনি এও বলেন, ‘আমিও দিল্লিতে ছিলাম, কিভাবে কোন ঘটনাতে সরকারিভাবে কী রং দেওয়ার চেষ্টা হয়, আমি সব জানি…’। আর এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ‘তিনি (মমতা) শুধু তার উর্দুভাষী ভোটারদের কথাই ভাবছেন, রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে নয়।’

সংবাদ মাধ্যমেই প্রকাশিত রাজ্য পুলিশ বিভিন্ন সময় মু্খ্যমন্ত্রীর কাছে এই ধরনের অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে স্পর্শকাতর বিষয়ে, কিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি অন্তত ছয়বার তাদের সমস্যার বেশি গভীরে যেতে নিষেধ করেন।

যাহোক, এখন ভারত সরকার তথা আসাম ও ত্রিপুরা সরকার মোটামুটিভাবে স্বীকার করেছে, খাগড়াগড়ের বিস্ফেরণ ও তার পরের বিশাল সংখ্যক লোকের গ্রেফতার হওয়ার পর এখন জঙ্গিরা তাদের ভারতে আসার রাস্তা পাল্টেছে। তারা আসাম ও ত্রিপুরাতে কিছুদিন আশ্রয় ও বিশ্রাম নিচ্ছে। আসামের হাইলাকান্দিতে তাদের নতুন নেটওয়ার্কের কথাও জানা গেছে।

তবে পশ্চিমবাংলায়  কিভাবে উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে, এমনকি আদৌও কোনও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে কিনা, তাও সরকারিভাবে জানানো হয়নি।

/এসএমএ/টিএন/

 

সম্পর্কিত
আমি মুসলিম ও ইসলামবিরোধী নই: মোদি
লোকসভা নির্বাচন: বিপুল ভোটে জিততে যে পরিকল্পনা মোদি ও বিজেপির
লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফায় ভোট দিলেন মোদি
সর্বশেষ খবর
মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব
মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ প্রস্তাব
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোটের প্রচারণায় সরকারি কর্মচারী
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোটের প্রচারণায় সরকারি কর্মচারী
১৩৯ উপজেলায় ভোট বুধবার, কেন্দ্রে গেলো সরঞ্জাম
১৩৯ উপজেলায় ভোট বুধবার, কেন্দ্রে গেলো সরঞ্জাম
‘প্রমাণ-অপ্রমাণের যাত্রা সুদীর্ঘ, সেখানে জড়িয়ে আছে হাহাকার’
বিচারপ্রার্থীদের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি‘প্রমাণ-অপ্রমাণের যাত্রা সুদীর্ঘ, সেখানে জড়িয়ে আছে হাহাকার’
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা