X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে তিন তালাক নিষিদ্ধে ৫ বিচারপতির কার কী মত

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি
২২ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৫৭আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৫৭

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দেশটির মুসলিম সমাজে প্রচলিত তিন তালাক প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করেছে, এই খবর ইতোমধ্যে জানাজানি হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মের পাঁচ বিচারপতিকে দিয়ে এই মামলার শুনানি করিয়ে তা বিতর্কহীন করে তোলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রায় নিয়ে সেই বিচারপতিরাও দু’ভাগ হয়ে গেলেন। এটাই এই রায়ের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক।

ভারতে তিন তালাক নিষিদ্ধে ৫ বিচারপতির কার কী মত সুপ্রিম কোর্টের ওই সাংবিধানিক বেঞ্চে যে শিখ ও মুসলিম বিচারপতি ছিলেন, তারা দু’জন মনে করেছেন তিন তালাকের মতো বিষয় মুসলিম সমাজের নিজস্ব রীতি। এক্ষেত্রে কেবল সামাজিক সংস্কার বা আইন করেই পরিবর্তন আনা যেতে পারে।

অন্যদিকে বেঞ্চের খ্রিস্টান, পার্সি ও হিন্দু ধর্মের তিন বিচারপতি রায় দিয়েছেন তিন তালাকের মৌলিক ভাবনাটাই ভারতের সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী। তাই সোজা কথায় এই প্রথা বেআইনি। বেঞ্চের খ্রিস্টান বিচারপতি তো আরেক ধাপ এগিয়ে কোরানের একটার পর একটা আয়াত উদ্ধৃত করে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, তিনি নিশ্চিত যে ‘কোরান কিছুতেই তিন তালাকে সায় দেয় না। আর যে জিনিস কোরান-বিরোধী, সেটা ইসলামবিরোধী বটেই।’

আসলে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতের সুপ্রিম কোর্টে কোনও মামলার শুনানি হচ্ছে আর তাতে বিচারপতিদের ধর্ম কী, তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে এমন কোনও দৃষ্টান্ত কখনোই ছিল না। কিন্তু তিন তালাকের বিরুদ্ধে করা সাতটি পিটিশন সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণের পর বিচারপতিদের ধর্মও নজরে চলে আসে। কারণ বিষয়টি ভারতের মুসলিম ধর্মাবলম্বী ১৮ কোটি মানুষের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

এ কারণেই সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেয়– যে সাংবিধানিক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে তাতে সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সেই অনুযায়ী বেঞ্চটি গঠন করা হয় এভাবে: প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিং কেহের (শিখ), বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ (খ্রিস্টান), বিচারপতি রোহিন্টন ফলি নরিম্যান (পার্সি), বিচারপতি এস আবদুল নাজির (মুসলিম) এবং বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত (হিন্দু)।

তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন– তিন তালাকের সঙ্গে যেখানে মেয়েদের সমানাধিকারের প্রশ্নটি জড়িত, সেখানে বেঞ্চে কেন একজন নারী বিচারপতিকেও রাখা হলো না? অবশ্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এখন ২৭ জন বিচারপতির মধ্যে মাত্র একজনই নারী, তিনি জাস্টিস আর ভানুমতী। তবে ওই বেঞ্চে তার ঠাঁই হয়নি।

চলতি বছরের মে মাসে টানা এক সপ্তাহ ধরে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চটি তিন তালাক নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনে। আর প্রধান বিচারপতি জাস্টিস কেহের অবসরে যাওয়ার মাত্র পাঁচ দিন আগে মঙ্গলবার তারা রায় ঘোষণা করলেন।

অনেকেই ভেবেছিলেন এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় শেষ পর্যন্ত সর্বসম্মত হবে। বিভিন্ন ধর্মের বিচারপতিরা শুনানির শেষে একমত হয়ে একটাই রায় দেবেন এবং তা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক বার্তা দেবে। মূলত সেটাই ছিল নানান ধর্মের বিচারপতিদের নিয়ে বেঞ্চ গঠনের পেছনে অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেলো তিন তালাকের বৈধতা নির্ধারণের প্রশ্নে তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেলেন। তাদের মধ্যে তিন বিচারপতি এ প্রথা নিষিদ্ধের পক্ষে, বাকি দু’জন অবস্থান নিলেন অন্যদিকে।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও বিতর্কিত বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের মতো কেউ কেউ রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এদিন সরাসরি বলে বসলেন, ‘তিন তালাক নিয়ে যদি বিচারপতিরা সবাই একমত হয়ে সর্বসম্মত রায় দিতেন, তাহলে অনেক ভালো হতো।’

বেঞ্চে যে দু’জন বিচারপতি দুটি সংখ্যালঘু শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেছেন, সেই শিখ বিচারপতি কেহের ও মুসলিম বিচারপতি আব্দুল নাজিরই যে তিন তালাককে মুসলিমদের ধর্মীয় রীতির ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে মেনে নিয়েছেন, সেটিও আকারে-ইঙ্গিতে মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিজেপির জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ অনেক নেতা।

ফলে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট তিন তালাক বিষয়ে ভারত হয়তো একটি ঐতিহাসিক রায় পেলো, কিন্তু রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে বিচারপতিদের মধ্যে ধর্মীয় ভিত্তিতে সুস্পষ্ট বিভাজনের কারণে এতে বিতর্কের রেশ ঠিকই থেকে গেলো।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
লাদাখ সীমান্তে বিরোধচীনের সঙ্গে আলোচনায় আশাবাদী রাজনাথ সিং
নিজ্জার হত্যায় তিন ভারতীয়কে গ্রেফতারের কড়া প্রতিক্রিয়া জানালো ভারত
জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক সেনা নিহত
সর্বশেষ খবর
জয়পুরহাটে সড়কে প্রাণ গেলো দুই ধানকাটা শ্রমিকের
জয়পুরহাটে সড়কে প্রাণ গেলো দুই ধানকাটা শ্রমিকের
রাজধানীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টি
রাজধানীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টি
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার
এমপি স্ত্রীকে হারিয়ে ৬ ভোটে স্কুল কমিটির সভাপতি বদি
এমপি স্ত্রীকে হারিয়ে ৬ ভোটে স্কুল কমিটির সভাপতি বদি
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী