আগামী ১৫ মে মুক্তি পাচ্ছেন মালয়েশিয়ার সদ্য ক্ষমতাসীন জোটের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। একইদিন তাকে পূর্ণাঙ্গ রাজকীয় ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। শনিবার আনোয়ার ইব্রাহিমের কন্যা নুরুল ইজ্জাহ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, তার বাবার মুক্তির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
এর আগে সদ্য শপথ নেওয়া প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদও তার উত্তরসূরী আনোয়ার ইব্রাহিমের অনতিবিলম্বে মুক্তির কথা জানান। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সুলতান তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরেক সংবাদ সম্মেলনে মাহাথির বলেন, রাজা আভাস দিয়েছেন তিনি শিগগিরই আনোয়ার ইব্রাহিমকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক। আমরা তার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমার ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু করবো। ক্ষমা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তি পাবেন আনোয়ার।
বিরোধী জোটের নেতৃত্ব নেওয়ার সময় মাহাথির চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, জোট ক্ষমতায় এলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। তবে এর দুই বছরের মধ্যে আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তি নিশ্চিত করে তার কাছে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন তিনি।
আনোয়ার ইব্রাহিম ও মাহাথির মোহাম্মদ এক সময় ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। কিন্তু মতপার্থক্যের জেরে ১৯৯৮ সালে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আনোয়ার ইব্রাহিমকে সরিয়ে দেন মাহাথির। এরপর কথিত সমকামিতার অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে রাজনৈতিক পালাবদলের ধারাবাহিকতায় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে হটাতে তারা আবার মিত্রে পরিণত হন।
গত শুক্রবার বন্দি অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের শপথ অনুষ্ঠান দেখেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। রাজার কাছ থেকে ক্ষমা ও কারাগার থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কোনও সরকারি দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন না তিনি।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি এতোদিনের শত্রু আনোয়ারকে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে আখ্যায়িত করেন মাহাথির। তিনি বলেন, আনোয়ার আমাকে কৃতজ্ঞতার বাঁধনে বেঁধেছেন। মাহাথিরের ভাষায়, ‘আমাকে গ্রহণ করা তার জন্য সহজ ছিল না। আনোয়ার ও তার পরিবার ২০ বছর ধরে অনেক ভুগেছে। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।’
আটক হওয়ার সময় মাহাথির-পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে ভাবা হতো আনোয়ারকে। নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে এই রাজনীতিক বলেন, তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিতেই এসব মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে নাজিব রাজাকের সরকারও তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনে। কারণ এর বছরখানেক আগে সাধারণ নির্বাচনে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আনোয়ারের নেতৃত্বের বিরোধী জোট অপ্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছিল। সর্বশেষ এবারের নির্বাচনে নিজে কারাগারে থাকলেও মাহাথিরকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটাতে সক্ষম হন এই রাজনীতিক। ৬১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বিএন জোটকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে তার পিএইচ জোট।
