মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, কোরীয় যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিয়ে কথা রেখেছেন উত্তর কোরীয় নেতা কিং জং উন। এজন্য কিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে আবার শিগগিরই দেখা করার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ১ আগস্ট বুধবার এক টুইটার বার্তায় কিমকে নিয়ে নিজের এই অবস্থানের কথা জানান ট্রাম্প।
১৯৫০-১৯৫৩ সালে সংঘটিত কোরীয় যুদ্ধে ৩৬ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা নিহত হয়। নিখোঁজরাও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে প্রায় ৭,৭০০ মার্কিন সেনার হদিস মেলেনি। এর মধ্যে প্রায় ৫,৩০০ সেনা উত্তর কোরিয়ায় নিখোঁজ হয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়ার সামরিক দলগুলো ৩৩টি উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে মার্কিন সেনাদের ২২৯টি দেহাবশেষ উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে তল্লাশিকারীদের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি দাবি করে ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে এ অভিযান বাতিল করেছিল। ২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাবেক দূত ও নিউ মেক্সিকোর গভর্নর বিল রিচার্ডসন ছয়টি দেহাবশেষের হস্তান্তর নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর চলতি বছর ২০ জুন ট্রাম্প এক সামবেশে দাবি করেন, আবারও ২০০ জনের দেহাবশেষ হস্তান্তর করেছে পিয়ংইয়ং। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর দাবি, সে সময় কোনও দেহাবশেষ ফেরত পাঠায়নি উত্তর কোরিয়া। তবে ১ আগস্ট বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ৫৫ টি দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লেখেন, “কোরীয় যু্দ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের দেহাবশেষ ফেরত পাঠানো শুরু করার মধ্য দিয়ে আমাকে দেওয়া কথা রাখার জন্য চেয়ারম্যান কিম জং-উনকে ধন্যবাদ। আপনার এই ধরনের উদ্যোগে আমি মোটেও বিস্মিত নই। আমাকে সু্ন্দর একটি চিঠি পাঠানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। শিগগিরই আপনাকে দেখার অপেক্ষায় আছি।”ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতাকে ধন্যবাদ জানানোর কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স হাওয়াইয়ে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সেনাদের দেহাবশেষগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। টুইটে সেই অনুষ্ঠানেরও প্রশংসার পর অন্য এক টুইটে কিমকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। কিম জুলাইয়ের মাঝামাঝি ট্রাম্পকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি বৈঠক করার আশা প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবারের টুইটে ট্রাম্প ‘সুন্দর চিঠি’র যে কথা উল্লেখ করেছেন তা সেই চিঠিটিই কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
Thank you to Chairman Kim Jong Un for keeping your word & starting the process of sending home the remains of our great and beloved missing fallen! I am not at all surprised that you took this kind action. Also, thank you for your nice letter - l look forward to seeing you soon!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) August 2, 2018
সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে ট্রাম্প ও কিমের বৈঠকের পরই দেহাবশেষ হস্তান্তরের ব্যাপারে একমত হয় দুই পক্ষ। ১২ জুন সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’ বন্ধ করবেন। এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমরা যেহেতু একটি সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি সেক্ষেত্রে আমি মনে করি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা অযথার্থ।’ মহড়া বন্ধের ঘোষণা দিলেও কোরীয় উপদ্বীপ থেকে এক্ষুণি সেনা প্রত্যাহারের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও জানান ট্রাম্প।
১৯ জুন পেন্টাগন জানিয়েছিল, আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে পূর্বনির্ধারিত সামরিক অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। একইদিন নাম প্রকাশ না করে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, উত্তর কোরিয়া থেকে কোরীয় যুদ্ধে নিহত সেনাদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে ওই কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সেনারা এ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এরপর বুধবার (২০ জুন) ২০০ মার্কিন সেনার দেহাবশেষ হস্তান্তর করে উত্তর কোরিয়া।