X
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
১৪ আষাঢ় ১৪৩২

রোহিঙ্গা নিপীড়নের নতুন ভিডিওতে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ

বিদেশ ডেস্ক
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৫১আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৫৩

মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার তা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার গ্রুপ ফর্টিফাই রাইটস। মানবাধিকার গ্রুপটির দাবি, এই ফুটেজে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দায়ী করার মতো প্রমাণ রয়েছে। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, মিয়ানমার সেনা সদস্যরা রাখাইনের একদল বেসামরিক স্থানীয় বাসিন্দার কাছে কিভাবে রোহিঙ্গা গ্রাম খালি করে ফেলা হবে তা ব্যাখ্যা করছেন। এতে বিতাড়নের মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ করা যাবে বলে জানিয়েছে ফর্টিফাই রাইটস।

গ্রুপটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ বলেছেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বরাবর দাবি করে আসছে তারা রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দেয়নি। আর এই ফুটেজে দেখা গেছে একজন সেনা সদস্য বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছেন যে, রোহিঙ্গাদের গ্রাম থেকে বের করে দিতে কর্তৃপক্ষ বল প্রয়োগ করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি এটা আইসিসির প্রসিকিউর ও অন্য যারা বেসামরিকদের ওপর সেনাবাহিনীর অবাধ হামলার বিচার চায় তারা ব্যবহার করবেন।

আট মিনিট ৪০ সেকেন্ডের প্রকৃত ভিডিওটি প্রথমবার অনলাইনে প্রকাশ পায় ২০১৭ সালের ২৮ আগস্ট। এর তিন দিন আগেই নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর উত্তর রাখাইনে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই অভিযানের কারণে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হয় সাত লাখ রোহিঙ্গা।

গত ৬ সেপ্টেম্বর এক ঐতিহাসিক রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসি প্রাক বিচারিক তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অমানবিক অপরাধের বিচার শুরুর পক্ষে রায় দেয়। ১৮ সেপ্টেম্বর আইসিসির প্রসিকিউটর ফাতহু বেনসুদা জানান তার কার্যালয় এসব অভিযোগ তদন্তের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। ওইদিনই জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা সমর্থিত ওই মিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধে গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ভিডিওতে যে সেনা সদস্যকে দেখা গেছে তার পরিচয় জানা যায়নি। তবে সেনা পোশাক পরিহিত ওই সেনাকে অস্ত্র বহন করে বার্মিজ ভাষায় স্থানীয় রাখাইন জনগোষ্ঠীর একটি দলের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। ভিডিওর মান দুর্বল হওয়ায় সেনা সদস্যের পোশাকে তার সামরিক র‍্যাংক চিহ্ন ও ইউনিটের পরিচয় বোঝা যায়নি।

ওই ভিডিওতে উত্তর রাখাইনের রাথেডাউং উপশহরের কাইউক-সার তাইং ও নাউঙ ইয়ো গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্দেশে কথা বলতে দেখা গেছে।  নাউঙ ইয়ো গ্রামের বাসিন্দাদের নাতালা গ্রামগুলোর বাসিন্দা হিসেবে অভিহিত করছিলেন ওই সেনা সদস্য।

নাতালা গ্রামকে মডেল গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের সরিয়ে সেখানে বার্মিজ নৃতাত্ত্বিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আবাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। নাতালা গ্রামগুলো সাধারণভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাসভূমি।

ভিডিওতে সেনা সদস্যকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমরা তাদের ওপর দ্রুত ও গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চালাতে যাচ্ছি। তা নিয়ে ভয়ের কোনও কারণ নেই। আমরা এখান থেকে চলে যাওয়ার পরই তাদের গ্রাম খালি করে ফেলা হবে।  তিনি বলে চলেন, আমাদের আদিবাসী গ্রামগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের পালানোর পথ আটকে রাখবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা, তাতে তারা আমাদের আদিবাসী গ্রামের দিকে ঢুকে পড়তে পারবে না।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের প্রতি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে শ্রোতাদের উদ্দেশে বলেন, তারা পুরো দেশ দখল করে নেবে। এসব লোক উচ্চ হারে সন্তান জন্ম দেয় তাদের জনসংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। সেকারণে তারা আমাদের এখানকার আদিবাসী সংখ্যালঘুদের হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

গত জুলাইতে প্রকাশিত ১৬০ পাতার প্রতিবেদনে ফর্টিফাই গ্রুপ বেসামরিক রোহিঙ্গাদের অপহরণ, গলা কাটা, হাজার হাজার মানুষের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে। মিয়ানমার সেনা সদস্য, পুলিশ ও স্থানীয় অরোহিঙ্গা বাসিন্দারা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এসব নিপীড়ন শুরু করে বলে উঠে আসে ওই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনা সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, নবজাতক শিশু হত্যা ছাড়াও বিচার বহির্ভূতভাবে রোহিঙ্গা পুরুষদের আটক করার পাশাপাশি কয়েক শত রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। ফর্টিফাই গ্রুপ ২২ জন সামরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাকে সম্ভাব্য বিচারের মুখোমুখি করতে চিহ্নিত করে। এছাড়াও গ্রুপটি সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার হরণের তথ্যও নথিভুক্ত করে। এতে তাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক মানুষ হত্যা ও হুমকির তথ্য উঠে আসে।

সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে’ সেনা সসদ্যদের সঙ্গে স্থানীয় বেসামরিক নাগরিকেরাও যোগ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, সেনা সদস্যরা শিশুসহ অরোহিঙ্গা বাসিন্দাদের রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালাতে উস্কে দিচ্ছেন।  ভিডিওতে ওই সেনা সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘যখন আমরা এরকম কাজ করব তখন এসব গ্রামের বাসিন্দাদের সহায়তা আমাদের দরকার। সাহস দেখাতে লাঠি, তলোয়ার ধরুন। এমনকি বয়স্ক আর তরুণ শিশুরাও তাদের হারাতে পারবে।

ফর্টিফাই গ্রুপসহ অন্যরা মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সম্ভাব্য সব চেষ্টা চালাতে হবে। এর মধ্যে নতুন প্রক্রিয়া তৈরি করে বিচারের জন্য প্রমাণ সংগ্রহ ও তা সংরক্ষণ করতে হবে।  নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও অজুহাত চলতে পারে না। দ্রুত মিয়ানমারকে আইসিসির সামনে হাজির করা উচিত।

/জেজে/এএ/
সম্পর্কিত
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পাট-বস্ত্র-সুতার পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা
বৈশ্বিক অনুদান কমায় রোহিঙ্গা শিশুদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে
বিয়ের অনুষ্ঠানে ৪০ হাজার ডলার চুরি, এক বছরের কারাদণ্ড
সর্বশেষ খবর
ইউপি সদস্য ও তার ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা
ইউপি সদস্য ও তার ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা
হ্যাজেলউডের বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধসিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়
হ্যাজেলউডের বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধসিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ আজ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ আজ
চুক্তি চাইলে ট্রাম্পকে খামেনির প্রতি অসম্মানজনক ভাষা বন্ধ করতে হবে: ইরান
চুক্তি চাইলে ট্রাম্পকে খামেনির প্রতি অসম্মানজনক ভাষা বন্ধ করতে হবে: ইরান
সর্বাধিক পঠিত
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
খিলক্ষেতে মণ্ডপ উচ্ছেদ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
খিলক্ষেতে মণ্ডপ উচ্ছেদ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত