X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন

ধনীদের লোভের আগুনে পুড়েছে চকবাজারের বাসিন্দারা

বিদেশ ডেস্ক
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:০৯আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৫:২৬
image

চকবাজারে আগুন থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ ট্র্যাজেডির নেপথ্যে ধনীদের লোভকেই প্রধান কারণ হিসেবে শনাক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস। চুড়িহাট্টায় ২০ ফেব্রুয়ারির (বুধবার) আগুনে পুড়ে এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। এ সংক্রান্ত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, দারিদ্র্য আর ঘনবসতি নয়, পুরান ঢাকার আবাসিক ভবনে মজুত করে রাখা অনুমোদনবিহীন রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থই এই বিপুল পরিমাণ প্রাণহানির জন্য দায়ী। মুনাফার স্বার্থে ধনী ব্যবসায়ীরা কখনও ঘুষ দিয়ে, কখনও আবার গোপনে আইন ভঙ্গ করে  প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের মতো দ্রব্য আবাসিক ভবনে রেখে দেয়। অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, চকবাজারের বাসিন্দারা ধনীদের ওই লোভের আগুনেই পুড়ে মরেছেন।
ধনীদের লোভের আগুনে পুড়েছে চকবাজারের বাসিন্দারা

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে দশটার পর যখন চকবাজারে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে তখন সংশ্লিষ্ট রাস্তাটিতে তিল ধারণের স্থান ছিল না। চারিদিকে মানুষ, গাড়ি, মোটরসাইকেল। প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে ক্রমান্বয়ে অন্যান্য গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হতে থাকে। একব পর্যায়ে একটি হোটেলে রান্নার গ্যাস রাখা সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়। পাশেই একটি ছোট দোকানে অনুমোদনবিহীনভাবে রাখা ছিল রাসায়নিক। মুহূর্তেই সেখানে ধরে যায় আগুন। দোকানের পাশের একটি আবাসিক ভবনে রাখা ছিল বডি স্প্রের হাজার হাজার বোতল। বিস্ফোরিত হতে শুরু করে সেগুলোও। এভাবেই হু হু করে  আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা ট্রিবিউনের নিজস্ব অনুসন্ধান থেকেও জানা গেছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া ৫টি ভবনের গোডাউনেই কেমিক্যাল ছিল। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ আবাসিক এলাকায় বেআইনিভাবে রাখা ওইসব দাহ্য পদার্থকে সেলফ্ মেইড এক্সপ্লোসিভ (নিজ থেকেই বিস্ফোরকে পরিণত হওয়া) আখ্যা দিয়েছেন। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ আখ্যা দিলেও তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এই দারিদ্র্য কিংবা অতিরিক্ত জনসংখ্যা দিয়ে চকবাজারের আগুনের সামগ্রিক পটভূমি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব না। ঢাকার একজন স্থপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন,  ‘এটা দারিদ্র্যের ব্যাপার নয়, লোভের পরিণতি। যারা আবাসিক ভবনগুলোতে রাসায়নিক পণ্য মজুত রাখে, তারা আসলে অনেক ধনী। তাদের গাড়ি আছে। সুন্দর বাড়ি আছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা বিদেশে পড়াশোনা করে।’

প্রতিবেদনে ৮ বছর আগের প্রায় একই ধারার একটি আগুন ট্রাজেডি তুলে ধরা হয়েছে। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে একটি ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল এক আবাসিক ভবনে। অনুমোদন ছাড়াই ওই ভবনের নিচতলায় রাসায়নিক দ্রব্য রাখা হয়েছিল। এবারের মতো ওই সময়েও সেখানে  ফায়ার সার্ভিস পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছিল অপ্রশস্ত রাস্তায় বিপুল যানজটের কারণে। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ওই ঘটনার পর সরকারি কর্মকর্তারা বিল্ডিং কোড মেনে চলার বিষয়ে শক্ত অবস্থান নেওয়ার অঙ্গীকার করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।  

আইন বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আবাসিক ভবনগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। নজরদারির অভাব কিংবা দুর্নীতির কারণে এ সংক্রান্ত নীতিমালা অকার্যকর। ধনী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে বা তাদের ব্যবসার বিষয়ে তথ্য গোপন করে পার পেয়ে যায়। তাদের লোভের আগুনে পোড়ে নিরীহ পথচারী থেকে শুরু করে দরিদ্র রিকশাচালক- নিম্ন বেতনের দোকান কর্মচারীরা। স্থপতি নাজিম উদ্দিন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘সরকারের উচিত ছিল এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তবে তা হয়ে ওঠেনি।’

বৃহস্পতিবার ভোরে যখন ফায়ার ব্রিগেড আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ততক্ষণে চকবাজার পুড়ে ছাই। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, আগুনের কুণ্ডলী যেন রাস্তা- সাইকেল-রিকশা-গাড়ি-মানুষকে ঘিরে ধরছিল ক্রমশঃ। ক্রমাগত মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছিলেন গাড়ির চালক, মোটরসাইকেল আরোহী, রিকশার যাত্রী-চালক, পথচারী। রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে ছিল আগুনে পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া রঙ ওঠা গাড়ির অবশেষ, কালচে ধাতব খণ্ডাংশ আর  ভেঙে পড়া ভবনের দেয়াল। সেসবের মধ্য দিয়ে ফায়ার ব্রিগেড কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা মৃতদেহগুলোকে একে একে সাদা ব্যাগে ভরে নিয়ে যান। পরিস্থিতিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস তুলনা করেছে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’র

ভুক্তভোগীদের একজন মোহাম্মদ রাকিব নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, একজন রিকশাচালককে ছুটে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখেছেন তিনি। তবে রাকিবের চোখের সামনেই আগুনের কুণ্ডলী ঘিরে ধরে তাকে। জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ওই রিকশাচালক।

/এএমএ/বিএ/
সম্পর্কিত
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাইয়ের অভিষেক পরবর্তী চীনা সামরিক মহড়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে তাইওয়ান
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
সর্বশেষ খবর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা