X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর সরবরাহের দৌড়ে চীনা কোম্পানিগুলো

বিদেশ ডেস্ক
০৪ এপ্রিল ২০২০, ২১:১৬আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০৬:২০

করোনা মহামারির এই সময়ে দুনিয়াজুড়ে বাড়ছে জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটরের চাহিদা। আক্রান্ত রোগীদের একটু শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করতে এটি সংগ্রহে মরিয়া তাদের স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হঠাৎ করেই বিপুল সংখ্যক চাহিদার জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জরুরি ভিত্তিতে নিয়ম বদল করে নিজ দেশে চীনা ভেন্টিলেটরের প্রবেশাধিকার দিতে বাধ্য হয়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র। অ্যানালিটিক্স সংস্থা গ্লোবালডাটা বলছে, করোনা মহামারির এ সময়ে বিশ্বজুড়ে আরও আট লাখ ৮০ হাজার ভেন্টিলেটরের চাহিদা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে ভেন্টিলেটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। পিছিয়ে নেই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভেন্টিলেটর উৎপাদক দেশ চীন। করোনা মোকাবিলার এই লড়াইয়ে শামিল হয়েছে তারাও। জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর সরবরাহের দৌড়ে চীনা কোম্পানিগুলো

চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম পিপলস ডেইলি জানিয়েছে, দেশটির ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারকরা জীবন রক্ষাকারী এ মেশিনের সরবরাহ আরও সহজলভ্য করতে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে এই করোনা মহামারির সময়ে এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৭৫ হাজার ভেন্টিলেটরের ঘাটতি রয়েছে। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যের সম্মিলিত চাহিদা রয়েছে আরও ৭৪ হাজার ভেন্টিলেটরের।

চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (এমআইআইটি)-এর একজন কর্মকর্তা জু কেমিন। তিনি জানান, তার দেশে ২১টি বড় মাপের ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাধ্যতামূলক সিই মার্কেটিং-এর শর্ত পূরণ করেছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেছেন জু কেমিন। তিনি বলেন, চীনা নির্মাতারা অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার ভেন্টিলেটরের অর্ডার পেয়েছে। বিদেশের বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তারা পুরোদমে কাজ করছে।

এনেস্থেশিয়া ও শ্বাস প্রশ্বাসজনিত চিকিৎসা সরঞ্জাম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেইজিং অয়নড কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের একজন সহকারী লি কাই। তিনি বলেন, ‘উৎপাদন থেকে চালান পর্যন্ত আমাদের নষ্ট করার মতো একটি মিনিটও হাতে নেই। পাঁচ শতাধিক শ্রমিক তাদের কর্মস্থলে ফিরে এসে দিনরাত পরিশ্রম করছে।’ জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর সরবরাহের দৌড়ে চীনা কোম্পানিগুলো

এই প্রতিষ্ঠানটি আগে থেকেই বছরে কয়েক হাজার ভেন্টিলেটর উৎপাদনে সক্ষম ছিল। তবে সম্প্রতি তাদের বিদেশি অর্ডার বেড়েছে। ইতালি, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তারা এক হাজারেরও বেশি ভেন্টিলেটরের অর্ডার পেয়েছে। তারা সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে।

লি কাই বলেন, গত জানুয়ারির শেষ দিক থেকে আমরা একটা দিনও সাপ্তাহিক ছুটি কাটাইনি। ইতোমধ্যেই আমরা বিশ্ববাজারে নিজেদের উৎপাদিত কয়েকশ’ ভেন্টিলেটর সরবরাহ করেছি। সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে আরও কয়েক হাজার পণ্য।

পিপলস ডেইলি বলছে, চীনে করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশটিতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ফের গতি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে জনবল বাড়াচ্ছে ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।

করোনা রোগীর চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর

করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে, কখনও কখনও এমন অবস্থা তৈরি হয় যে রোগী ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারে না। এ সময় রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে রোগীর মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গও অচল হয়ে যেতে পারে। এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভেন্টিলেটর।

এই যন্ত্রটি তখন নাক কিংবা মুখের ভেতর দিয়ে অথবা গলায় ছিদ্র করে লাগানো টিউবের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের কিরে নিয়ে আসে। কম্পিউটারের সাহায্যে এই যন্ত্রটি পরিচালনা করা হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে পরিস্থিতি গুরুতর হলে রোগীর নিউমোনিয়া হয়, ফলে তার ফুসফুসের নিচে অংশ পানি জমে যায় এবং তখন শ্বাস গ্রহণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ভেন্টিলেটর ছাড়া ওই রোগী তখন আর শ্বাস নিতে পারে না। যন্ত্রটি তখন ফুসফুস থেকে পানি ও রোগীর দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে নিয়ে আসে এবং ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে কৃত্রিমভাবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে। জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর সরবরাহের দৌড়ে চীনা কোম্পানিগুলো

রোগী যতক্ষণ পযন্ত স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস গ্রহণ করতে না পারে ততক্ষণ ভেন্টিলেটর লাগানো থাকে। এ সময় তিনি কথা বলতে পারেন না, মুখ দিয়ে কিছু খেতেও পারেন না। সে সময় তাকে টিউবের সাহায্যে খাবার দেওয়া হয়।

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের পাঁচ শতাংশকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা দিতে হয়েছে এবং তাদের অর্ধেক সংখ্যক রোগীকে কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করতে হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, সারা বিশ্বে যত মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবেন তার ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ রোগীকে আইসিইউ-তে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হতে পারে। তাদের অনেকেরই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন হবে এই ভেন্টিলেটরের। সূত্র: পিপলস ডেইলি, বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
লাদাখ সীমান্তে বিরোধচীনের সঙ্গে আলোচনায় আশাবাদী রাজনাথ সিং
আগামী সপ্তাহে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন শি জিনপিং
চীন সফরের পরিকল্পনা করেছেন পুতিন
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচন অর্থ ও সময়ের অপচয় মাত্র: সাইফুল হক
উপজেলা নির্বাচন অর্থ ও সময়ের অপচয় মাত্র: সাইফুল হক
৮ নন্দিত শিল্পীকে নিয়ে আসিফ ইকবালের ‘ঐশ্বর্য’
৮ নন্দিত শিল্পীকে নিয়ে আসিফ ইকবালের ‘ঐশ্বর্য’
ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
মানবাধিকার সমুন্নত রেখে জনগণকে সেবা দিতে আইজিপির নির্দেশ
মানবাধিকার সমুন্নত রেখে জনগণকে সেবা দিতে আইজিপির নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল