পশ্চিমা দুনিয়ার সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত দেশ জার্মানি থেকে ১২ হাজার মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার চারশ’ সেনা দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে আর বাকিদের ইতালি ও বেলজিয়ামের মতো অন্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোতে মোতায়েন রাখা হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কৌশলগত কারণে ইউরোপে সেনা পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বুধবার (২৯ জুলাই) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, প্রতিরক্ষা ব্যয়ে ন্যাটোর লক্ষ্য পূরণ করতে জার্মানি ব্যর্থ হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিকে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপক বিরোধিতা করছে দেশটির কংগ্রেস। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জার্মান কর্মকর্তারাও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘ দিন ধরেই ইউরোপের ন্যাটো দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে আসছেন। তিনি বলছেন, জোটের ব্যয় নির্বাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ন্যাটো সদস্যদের আর খুব বেশি নির্ভর থাকা উচিত হবে না। এর আগে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় নিজ নিজ দেশের জিডিপি’র দুই শতাংশে উন্নিত করতে সম্মত হয়। তবে জার্মানিসহ অন্য অনেক দেশ এখন পর্যন্ত ওই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
জার্মানি থেকে সেনা সরানোর ঘোষণার কিছুক্ষণ পর হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আর শোষিত হতে চাই না। সেনা কমাচ্ছি কারণ তারা খরচ দিচ্ছে না, ফলাফল খুব স্বাভাবিক।’
তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে কংগ্রেসে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন এই সিদ্ধান্তে শক্তিশালী হবে রাশিয়া। ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর মিট রমনি এই সিদ্ধান্তকে ‘মারাত্মক ভুল’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে এক বন্ধু ও মিত্রের গালে চড় মারা হবে।’ ডেমোক্র্যাট সিনেটর জ্যাক রিড বলেন, ‘এটা মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে... একটা আত্মঘাতী ক্ষত হয়ে থাকবে।’
জার্মানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বলেছেন, এতে ন্যাটো জোট দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। আবার জার্মান অঙ্গরাজ্য বাভারিয়ার প্রধান মার্কাস সোয়েডার যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এটা জার্মান-আমেরিকান সম্পর্কের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।’
জার্মানি থেকে সেনা সরানোর কারণ নিয়ে ট্রাম্পের চেয়ে ভিন্ন স্বরে কথা বলেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার। তিনি দাবি করেন, ওই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনী পুনর্বিন্যাসের একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এস্পার বলেন এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন সরকারের শত শত কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। আর ১২ হাজার সেনা সরিয়ে নেওয়ার ফলে জার্মানিতে মার্কিন সেনা উপস্থিতি ২৫ শতাংশ কমে যাবে বলেও জানান তিনি।