১৭ রোগীকে হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক নার্সকে ৭৬০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি আদালত। অতিমাত্রায় ইনসুলিনের ডোজ প্রয়োগ করে তাদের হত্যা করেছিলেন এই নার্স। ৪১ বছর বয়সী ওই নার্সের নাম হেদার প্রেসডি। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল, এই তিন বছরে অঙ্গরাজ্যটির ৫টি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এই খব জানিয়েছে।
ইঞ্জেকশন পুশ করার জন্য শিফটকে বেছে নিতেন হেদার। এই তিন বছরে ৪৩ বছর থেকে ১০৪ বছর বয়সী মোট ২২ জন রোগীকে প্রাণঘাতী ইনসুলিনের ইঞ্জেকশন দিয়েছেন তিনি। এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজন রোগীর ডায়াবেটিস ছিলো না। তখন এই রোগীদের মধ্যে মাত্র ৫ জনকে বাঁচানো সম্ভব হয়।
দেহে অতিমাত্রায় ইনসুলিন প্রবেশ করানো হলে হাইপোগ্লিকেমিয়া নামক একটি শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। রক্তে শর্করার মাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে গেলে এই সমস্যা দেখা হয়। এসময় শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল বোধ করেন রোগী এবং তার হৃৎস্পন্দন হঠাৎ বেড়ে যায়। শিগগিরই চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য বা তরল গ্রহণ না করতে পারলে রোগী হার্ট অ্যাটাক করেন।
গত বছর মার্চের দিকে পেনসিলভেনিয়ার একটি হাসপাতালে পর পর দুজন রোগীর মৃত্যু হয়। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হেদার প্রেসডিকে সন্দেহ করে। পরে পুলিশি তদন্তের তার সংশ্লিষ্টতার আলামত পাওয়া যায়। তদন্তের এক পর্যায়ে তাকে গ্রেফতার করে বিচার শুরু হয়। বিচারের প্রথম দিন বাদিপক্ষের আইনজীবী হেদারের কাছে জানতে চান, ‘আপনি নিজেকে কি দাবি করছেন, দেষী না নির্দোষ?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি দোষী।’
নিজেকে কেন দোষী দাবি করছেন হেদার সে বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবীকে তিনি সোজাসাপ্টা জাবাব দেন। তিনি বলেন, ‘আমি দোষ করেছি। তাই আমি দোষী।’
তদন্তে জানা গেছে, হেদার তার পরিচিত অধিকাংশ রোগী, সহকর্মী ও অন্যান্য মানুষদের অপছন্দ করতেন এবং মনে মনে তাদের ক্ষতি করতে চাইতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেসেজের মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন হেদার। সেসব মেসেজে রোগীদের ব্যাপারে কথা হতো তাদের।
বিচার চলাকালে হেদারের সম্পর্কে বাদিপক্ষের এক সাক্ষী বলেন, ‘তিনি অসুস্থ কিংবা উন্মাদ নন। তিনি অশুভ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যে রাতে তিনি আমার বাবাকে খুন করেছেন তার পরদিন সকালে তার মুখে আমি শয়তানের ছায়া দেখেছি।’
অভিযোগ প্রমাণের পরপরই হেদারের নার্সিং লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা সহকর্মীদের সবাই হেদারে বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন।
কর্মক্ষেত্রে বেশ নিয়মানুবর্তী ছিলেন হেদার। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পেনসিলভেনিয়ার কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালে কাজ করেছেন তিনি।