মিয়া মোহাম্মদ শাহবাজ শরিফ সোমবার পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ৩৪২ জন সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জনের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। জাতীয় পরিষদে ১৫৫ আসন নিয়ে বৃহত্তম দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সদস্যরা অধিবেশন বয়কট ও পদত্যাগের সিদ্ধান্তের পর ভোটে জয়ী হন তিনি।
১৯৫০ সালে লাহোরে জন্ম শাহবাজ শরিফের। তিনি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সুপ্রিমো ও তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন শাহবাজ
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। প্রথমে ১৯৯৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ শরিফ ভাইদের সৌদি আরবে নির্বাসিত করার আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ২০০৮-২০১৩ এবং ২০১৩-২০১৮ পর্যন্ত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পিটিআই’র শাসনামলে তিনি জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন।
কাজপাগল হিসেবে বিবেচিত শাহবাজ নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর বদলে খাদিম-ই-আলা (প্রধান সেবক) পরিচয় দিতে পছন্দ করেন।
মিয়া মোহাম্মদ শরিফের দ্বিতীয় ছেলে শাহবাজ। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং যৌথভাবে ইত্তেফাক গ্রুপ অব কোম্পানিজের মালিক। ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে
১৯৮৮ সালে প্রথমবার শাহবাজ পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির এমপিএ নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পরিষদের আসনে নির্বাচন করেন এবং এমএনএ হন। তবে ১৯৯৩ সালে আবার প্রাদেশিক পরিষদের আসনে প্রার্থী হন এবং পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলীয় নেতায় পরিণত হন। ১৯৯৬ সালে অ্যাসেম্বলি বিলুপ্ত হলে তার মেয়াদ শেষ হয়।
১৯৯৭ সালের নির্বাচনে জয়ের পর তিনি প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ শাসনের সুযোগ পান। ১৯৯৯ সালে মুশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রায় এক দশক নির্বাসন থেকে ফিরে আবারও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন শাহবাজ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিএমএল-এন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হলে তিনি প্রাদেশিক সরকার গঠন করেন।
আরও পড়ুন: শাহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভায় যারা থাকতে পারেন
২০০৮ সালে শাহবাজ পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির তিনটি আসন এবং জাতীয় পরিষদের একটি আসনে জয়ী হন। পাঞ্জাবের মেট্রো বাস প্রকল্পকে তার বড় অর্জন হিসেবে মনে করা হয়।
তার ছেলে হামজা শাহবাজ শরিফ একজন এমপিএ এবং পাঞ্জাবের ভবিষ্যৎ মুখ্যমন্ত্রী পদে সম্ভাব্য প্রার্থী। পিটিআই’র শাসনামলে তিনি পাঞ্জাম অ্যাসেম্বলিতে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের একাধিক আসনে প্রার্থী হন শাহবাজ। তবে জয়ী হন একটিতে। ওই সময় পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির দুটি আসনেও জয়ী হয়েছিলেন।
ওই নির্বাচনের পর পিএমএল-এন ও বিরোধী দলগুলো প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে শাহবাজকে ঘোষণা করে। কিন্তু তিনি হেরে যান ইমরান খানের কাছে। ওই সময় ইমরান পেয়েছিলেন ১৭৬ ভোট। শাহবাজের ভোট সংখ্যা ছিল ৯৬।