X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পর পাকিস্তানে কী ঘটবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৪ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৮আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩৭

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পার্লামেন্টে নিম্নকক্ষ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করার পর নতুন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছেন। আইন অনুসারে, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। তবে দেশটি সাংবিধানিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের থাকায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানে আগামী দিনগুলোর সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

নতুন তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী কে?

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং বিরোধী নেতা রাজা রিয়াজ আহমা তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সিনেটর আনোয়ার উল-হক কাকারের নাম ঘোষণা করেছেন। দলটি মার্চের শেষের দিকে ইমরান খানের পক্ষ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করা জোটের মিত্র।

পাকিস্তানের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার প্রদেশ বেলুচিস্তানের স্বল্প পরিচিত সিনেটর পরবর্তী ভোট না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হবেন। মন্ত্রণালয় পরিচালনার জন্য একটি মন্ত্রিসভা বেছে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হবে তাকে।

প্রেসিডেন্ট আলভি কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীকে অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত শরিফ প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। শরিফ ও বিরোধীদলীয় নেতা তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের প্রধানের জন্য নেতা নির্বাচন করেছেন।

নির্বাচন কি পেছানো হবে?

তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কিন্তু বিদায়ী সরকার মেয়াদের শেষ দিনে একটি নতুন আদমশুমারি অনুমোদন করায় নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নতুন নির্বাচনি সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।

কমিশনের একজন সাবেক কর্মকর্তার মতে, ২৪১ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশে শত শত কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক নির্বাচনি আসনের জন্য নতুন সীমানা নির্ধারণে ছয় মাস বা তার চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনকে ঘোষণা করতে হবে সীমানা পুনঃনির্ধারণ শেষ করতে কত সময় লাগবে। নির্বাচনি এলাকা নিয়ে প্রার্থীরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। এসবের ভিত্তিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী?

পাকিস্তানের রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায় পর্দার আড়ালে সেনাবাহিনীর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। দেশটির ৭৬ বছরের ইতিহাসে সেনাবাহিনী সরাসরি তিন দশকের বেশি শাসন করেছে। দেশটির রাজনীতিতে প্রচণ্ড প্রভাবশালী সেনাবাহিনী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি সাংবিধানিক মেয়াদ ছাড়িয়ে যায় তাহলে একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া দীর্ঘ সময় থাকলে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে তার নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করার সুযোগ দেবে।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কারা?

পরবর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে, ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই),শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।

পিটিআই আশা করছে, ইমরান খানকে কারাগারে এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করায় সমর্থকদের সহানুভূতি ও ক্ষোভ বাড়বে এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের জয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। কিন্তু সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্রমাগত অচলাবস্থার মধ্যে  পিটিআইয়ের সম্ভাবনা যতটা মনে হচ্ছে ততটা নাও হতে পারে।

বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ভাই এবং বিদায়ী জোট সরকারের নেতৃত্বে থাকা পিএমএল-এন এর সাবেক প্রধান নেতা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নির্বাসন থেকে দেশে ফিরতে চাইছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সাজা এখনও বহাল থাকায় শাহবাজ ক্ষমতায় ফেরার পথে এগিয়ে রয়েছেন।

আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হলেন, ৩৪ বছরের বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি পিপিপির তরুণ চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে। বিদায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথমবার মন্ত্রী হিসেবে তিনি স্থানীয়ভাবে ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক রাজধানীতে আলোচনায় ছিলেন।  ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে অনেকেই বিবেচনা করেন।

নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে একটি ঋণ সহযোগিতায় খেলাপি হওয়া এড়ানোর পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা প্রধান চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক সংস্কারের ফলে ইতোমধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের হার বেড়ে গেছে।

ইমরান খানের কারাদণ্ড ও রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাকে গ্রেফতারের পর বড় কোনও সহিংসতা হয়নি। কিন্তু মে মাসে তাকে গ্রেফতারের পর সমর্থকরা তাণ্ডব চালিয়েছিল। ফলে তাকে কারাবন্দি রাখা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

সাংবিধানিক ইস্যুতে হস্তক্ষেপের ইতিহাস থাকা সক্রিয় সুপ্রিম কোর্ট থাকায় ৯০ দিনের বেশি নির্বাচন বিলম্বিত হলে আইনি প্রশ্নও দেখা দিতে পারে।

নির্বাচনে কি ভূমিকা রাখবেন ইমরান খান?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী নেতা ইমরান খানের এই প্রক্রিয়ায় কোনও ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ তার দলের সদস্যরা গত বছর অনাস্থা ভোটে তাকে অপসারণের প্রতিবাদে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।

আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর মাঝে ইমরান খান, ছবি: রয়টার্স

এখন বিরোধী দলে রয়েছেন তার দলের ভিন্নমতধারীরা। যাদের মধ্যে রয়েছেন রাজা রিয়াজ আহমেদ। ইমরান খান তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন এবং তাকে পাঁচ  বছরের  জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। তিনি কোনও অন্যায় করার কথা অস্বীকার করে আসছেন।

সূত্র: আল জাজিরা

/এএ/
সম্পর্কিত
কঙ্গোর বাস্তুচ্যুত শিবিরে হামলা, নিহত ৯
প্রতিদিন মা হারাচ্ছে ৩৭ ফিলিস্তিনি শিশু
গাজায় পানিশূন্যতায় ভুগছেন দেড় লক্ষাধিক অন্তঃসত্ত্বা নারী
সর্বশেষ খবর
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
১২ বছর পর মুম্বাইয়ের মাঠে কলকাতার জয়
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা