X
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২

স্থানভেদে পাল্টে যাচ্ছে সাপের বিষ, কাজ হচ্ছে না প্রতিষেধকে

রক্তিম দাশ, কলকাতা
২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৩০আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৩০

স্থানভেদে পাল্টে যাচ্ছে সাপের বিষ, তাই কাজ হচ্ছে না ভিন রাজ্য থেকে নিয়ে আসা সাপের কামড়ের একমাত্র প্রতিষেধক পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টি ভেনাম সেরাম (পিভিএস)। পশ্চিমবঙ্গে বাড়ছে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা। এ থেকে বাঁচতে ঘেলে রাজ্যে সেব সাপ রয়েছে সেগুলোর বিষ থেকেই প্রতিষেধক তৈরি করতে হবে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবছরই পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার বন্যার পর ও অক্টোবরে সাপেরা শীতঘুমে যাওয়ার আগে বাড়ে বিষধর সর্পদংশনের ঘটনা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাংশ প্লাবিত হয়েছে। বন্যার জল নামতে শুরু হতেই বাড়ে সাপের উপদ্রব। মাত্র ৮ দিনে ওই জেলায় সাপের কামড় খেয়েছেন ১৫২ জন। পাশাপাশি আড়াইশোরও বেশি বিষধর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ১২০ থেকে ১২৫ ধরনের সাপ থাকলেও মাত্র ৪ ধরনের বিষধর সাপ রয়েছে। কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া ও কালাচ এই চার ধরনের বিষধর সাপ পাওয়া যায় রাজ্যে। প্রথম দুই ধরনের সাপ ফণা-যুক্ত। পরের দুটি ফণা-বিহীন। কেউটে, গোখরো ও কালাচ সাপের বিষ মূলত নিউরোটস্কিক। যা প্রভাব ফেলে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে। আর চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমাটস্কিক। যার ফলে সাপে নিউরোটস্কিক ধরনের বিষধর সাপ কাটার ক্ষেত্রে রোগীর স্নায়ুতন্ত্র অবশ হতে থাকে। চন্দ্রবোড়ার কামড়ের জেরে ঘণ্টা দেড়েক পর থেকেই বিকল হতে শুরু করে রোগীর কিডনি। বিষ রক্তের মাধ্যমে ঘুরতে ঘুরতে কিডনিতে পৌঁছনোর পর কিডনি বিকল করতে শুরু করে। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। তাতে রক্ত আসতে শুরু করে। এভাবে দিন কয়েক পরে রোগী মারা যান। আর নিউরোটস্কিকের ক্ষেত্রে বুকের স্নায়ুও বিকল হয়ে গেলে রোগীদের ভেন্টিলেশনে ভর্তি করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে চিকিৎসা করতে প্রয়োগ করতে হয় প্রতিষেধক পিভিএস।

কিন্তু প্রতিষেধক পর্যাপ্ত হলেও সমস্য অন্যখানে। দেখা যাচ্ছে ২০টি, কখনও ৩০টি পিভিএস প্রয়োগের পরও হয় না কাজ। এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে বিষধর সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা যথেষ্ট। এর মাঝেই চিন্তা বাড়াচ্ছে সাপের চরিত্র বদল।  ভৌগোলিক অবস্থানের পার্থক্যের জেরে তারতম্য হয় সাপের বিষেও। আর তার জেরেই কিছুক্ষেত্রে তৈরি হয় সমস্যা। তামিলনাড়ুর মহাবলীপূরমের ইরুলা সোসাইটিতে একমাত্র কয়েকটি সেন্টারে তৈরি হয় সাপের কামড়ের পর মানুষকে বাঁচানোর প্রতিষেধক পিভিএস। আর সব ধরনের বিষধর সাপের কামড়ের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয় একমাত্র পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনাম।

কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্পদংশন বিভাগের পরামর্শদাতা চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার বলেন, ভৌগোলিক দূরত্বের জেরে অনেক সময়ই দেখা যায় তামিলনাড়ু বা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে সাপে কাটা রোগী যেখানে ১০টি পিভিএসেই সেরে উঠছে, সেখানে রাজ্যে ২০ কখনও ৩০ টি দেওয়ার পরই রোগীর কিডনি বিকল হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গেও বিষ সংগ্রহ কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পশ্চিমবঙ্গের সাপের বিষ দিয়ে পিভিএস তৈরি হবে। 

গত জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা রাজ্যে পিভিএস তৈরি বিষয়টি নিয়ে দাবি তোলেন ভাঙড়ের আইএসএফের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি। তিনি বলেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী এক বছরের রাজ্যে সাপের কামড়ে মারা যায় গড়ে প্রায় ৮৫০ জন। যতজন মানুষকে সাপে কামড়ায় তার মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ হাসপাতালে যায়। ফলে বেসরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যাটা হয়ত আরও অনেক বেশি। হাসপাতালে যাওয়ার পর তাদের যে প্রতিষেধক দেওয়া হয় তা আনা হয় তামিলনাড়ু থেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সেই ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও অনেকক্ষেত্রেই সেটা কার্যকর হয় না। ফলে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ কারণ ভৌগোলিক অবস্থানগত তারতম্য। তামিলনাড়ুর চন্দ্রবোড়া সাপ আর বাঁকুড়ার চন্দ্রবোড়া সাপের বিষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তামিলনাড়ুতে যেহেতু সেখানকার সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি করা হয় এখানে সেটা খুব ভালো ফল দেয় না। এক সময়ে আমাদের রাজ্যেও প্রতিষেধক তৈরি করা হত। কিন্তু এখন তা বন্ধ রয়েছে। আমি স্পিকারের মাধ্যমে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এই রাজ্যেই প্রতিষেধক তৈরি করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আশা করি তিনি ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন।’

জানা গেছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের ‘সীতাপুর নবীন মানুয়া সৃষ্টি ফাউন্ডেশন’ এবং দাসপুরেরই গোমকপোতা গুণধর বিদ্যামন্দির নামের একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সব শিক্ষকও একই দাবি নিয়ে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বুরাই বলেন, ‘আমাদের জেলায় যা সাপের উপদ্রব, তাতে রাজ্যের নিজস্ব এভিএস না থাকলে বহু প্রাণহানি এড়ানো যাচ্ছে না।’

এদিকে স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে হয়ত এ রাজ্যেই আগামী দিনে এভিএস তৈরি করবে কলকাতার কেন্দ্রীয় সংস্থা বেঙ্গল কেমিক্যাল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হবে, এখনই বলা মুশকিল। এর আগে স্থানীয় সাপের বিষ সংগ্রহের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে স্নেক ভেনম কালেকশন সেন্টার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাও কোনও খবর নেই।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
রুশ হামলায় ইউক্রেনের এফ-১৬ পাইলট নিহত
নতুন আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: বিবিসিকে ইরান
একদিকে গাজাবাসীকে এলাকা খালি করার আদেশ, অন্যদিকে যুদ্ধ সমাপ্তির আহ্বান
সর্বশেষ খবর
পিরোজপুরে যুবদলের কমিটি গঠনের তিন দিন পর আরও দুই নেতার পদ স্থগিত
পিরোজপুরে যুবদলের কমিটি গঠনের তিন দিন পর আরও দুই নেতার পদ স্থগিত
রুশ হামলায় ইউক্রেনের এফ-১৬ পাইলট নিহত
রুশ হামলায় ইউক্রেনের এফ-১৬ পাইলট নিহত
জামায়াত কর্মী পরিচয়ে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ, পুলিশ বলছে ‘অভিযোগ নেই’
জামায়াত কর্মী পরিচয়ে মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ, পুলিশ বলছে ‘অভিযোগ নেই’
গোপালগঞ্জে ভ্যান চুরির মীমাংসা করতে বসে উল্টো সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
গোপালগঞ্জে ভ্যান চুরির মীমাংসা করতে বসে উল্টো সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা
এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা
ব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ
ব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার