চীনের চিপ তথা সেমিকন্ডাক্টর জাতীয় প্রযুক্তি রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই চীনা শিল্পের অগ্রযাত্রা তো থামেনি, উল্টো এ পদক্ষেপের কারণে কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবনের গতি বেড়েছে। এছাড়া পশ্চিমাদের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে তাদের আগ্রহও বেড়েছে। এতে করে বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর বাজারে চীনের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বখ্যাত চিপ প্রস্তুতকারী কোম্পানি এনভিডিয়া সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, নিষেধাজ্ঞাগুলো আমেরিকার বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকেই দুর্বল করবে।
এনভিডিয়ার ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিসের প্রেসিডেন্ট টিম বাজারিন জানান, ‘এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরিয়ে দেবে। এ ছাড়া, প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতাগুলো প্রকৃতপক্ষে এআই কম্পিউটিং ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করতে পারবে না। অন্য প্রতিযোগীরা কম শক্তিশালী জিপিইউ ব্যবহার করে একই ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।’
এ কাজটাই করছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। উদাহরণ হিসেবে চীনের ডিপসিক এআই চ্যাটবটের কথাও বলা হচ্ছে। এর নির্মাতারা দাবি করছেন, এটি নির্মাণে খরচ হয়েছে তুলনামূলক অনেক কম। কিছু পরীক্ষায় এটি ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি এবং মেটার ল্যামা এআই মডেলকেও ছাড়িয়ে গেছে।
চিপ নিষেধাজ্ঞার জন্যই অনেক চীনা এআই স্টার্টআপ কম জিপিইউ ব্যবহার করেও আরও দক্ষ উপায়ে এআই অ্যাপ্লিকেশন তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলো একটি বড় ক্ষেত্র হিসেবে মনোযোগ দিয়েছে হিউম্যানয়েড রোবটিক্সেও।
দ্য ডিজিটাল ওয়ার বইয়ের লেখক উইনস্টন মা জানান, ‘একসময় মেইড ইন চায়না মানে ছিল বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের নিম্নস্তরের পণ্য। কিন্তু দুই-তিন দশক পর ইলেকট্রনিক্সসহ চীনা পণ্য উৎপাদনের ইকোসিস্টেম এখন বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী।’
আর এতেও চীনের প্রযুক্তি নির্মাতারা দিনে দিনে হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। টেক টাইটানস অব চায়না বইয়ের লেখক রেবেকা ফ্যানিন জানালেন, ‘সহযোগিতার অভাব উদ্ভাবনে পৃথক পথ তৈরি করেছে। উদাহরণ হিসেবে হুয়াওয়ের হারমনি ওএস অপারেটিং সিস্টেমকে বলা যায়, যা সম্পূর্ণ চীনে তৈরি এবং অ্যান্ড্রয়েডের ওপর নির্ভরশীল নয়।’
আগের বাইডেন সরকার নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলেও নতুন ট্রাম্প প্রশাসন ওই নীতি পুনর্মূল্যায়ন করবে কিনা বা একই নীতি বজায় রাখবে কিনা তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে নীতি যেমনই হোক, বিশ্লেষকরা সবাই বলছেন, সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে চীনের অগ্রযাত্রার নিয়ন্ত্রণ এখন আর বাইরের কোনও শক্তির হাতে নেই।
সূত্র: সিএমজি