মিয়ানমারের উপকূলবর্তী অঞ্চলে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় কমপক্ষে ৪২৭ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (২৩ মে) এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, যদি তথ্যগুলো নিশ্চিত হয়, তাহলে এটি হবে চলতি বছরের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ সমুদ্র দুর্ঘটনা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মিয়ানমারের উপকূলের কাছে গত ৯ ও ১০ মে দুটি নৌকাডুবির খবর নিয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ ইউএনএইচসিআর আরও জানায়, তারা এখনও ঘটনাগুলোর সঠিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে।
প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছে, ৯ মে ২৬৭ জন যাত্রীসহ একটি নৌকা ডুবে যায়, যাদের মধ্যে মাত্র ৬৬ জন বেঁচে আছেন। আর ১০ মে ২৪৭ জন যাত্রীসহ আরেকটি নৌকা ডুবে যায়, যেখান থেকে মাত্র ২১ জন প্রাণে বাঁচেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, নৌকা দুটিতে থাকা রোহিঙ্গারা হয়তো বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিশাল শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। অথবা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালাচ্ছিলেন।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়- রোহিঙ্গারা প্রতি বছর জীবন ঝুঁকিতে ফেলে অস্থায়ী নৌযানে করে সমুদ্রপথে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এক্সে দেওয়া পোস্টে ইউএনএইচসিআর হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি এই দুই মর্মান্তিক ঘটনার খবরকে রোহিঙ্গাদের চরম দুর্দশার এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের ক্রমাগত সংকটের একটি নির্মম স্মারক বলে উল্লেখ করেন।
২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এদের মধ্যে অন্তত ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বর্তমানে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। আর যারা রাখাইনে রয়ে গেছেন, তারা অত্যন্ত করুণ অবস্থায় শরণার্থী শিবিরে বন্দি আছেন।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। এরপর রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী- আরাকান আর্মির মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ চলছে।
ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন আশ্রয়দাতা দেশে এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুতদের সহায়তা চালাচ্ছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে মানবিক সংস্থাগুলো বড় ধরনের তহবিল সংকটে পড়েছে।
২০২৫ সালের জন্য সংস্থাটির ৩৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার অনুরোধের মাত্র ৩০ শতাংশ এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।