X
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫
২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

১০ বিদ্রোহী হত্যার ঘটনায় ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে আতঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০২ জুন ২০২৫, ১৯:১৮আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ২১:৪৭

ভারত-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী তামু জেলায় একটি অস্থায়ী কাঠের চিতার সামনে পড়ে আছে ১০টি পচে যাওয়া মৃতদেহ। বেশিরভাগের পরনে রক্তমাখা যুদ্ধবেশ। কাঠ, পুরনো টায়ার ও দাহ্য পদার্থ দিয়ে দ্রুত প্রস্তুত করা হচ্ছে গণদাহ। মৃতরা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি ঐক্য সরকারের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠী পিকেপি সদস্য, যাদের তিনজন কিশোর বয়সী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানে ১৪ মে এদের প্রাণহানি ঘটে। ভারতের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, যুদ্ধসামগ্রীসহ বিদ্রোহী কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহভাজনদের গুলি করে হত্যা করেছে তারা। কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে মিয়ানমারের নির্বাসিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। তাদের দাবি, এসব বিদ্রোহীকে ভারতীয় সেনারা গ্রেফতার করে, নির্যাতন চালিয়ে পরে গুলি করে হত্যা করেছে।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই ভারতীয় সীমান্তে আত্মগোপনে ছিল সশস্ত্র বিদ্রোহীরা এতদিন ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে ‘অলিখিত সহাবস্থানে’ ছিল। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডে সেই ভারসাম্য ভেঙে পড়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে হাজার হাজার মিয়ানমারীয় শরণার্থীদের মধ্যে, যারা ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

তামু অঞ্চলে বিদ্রোহীদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজনকারী থিদা (ছদ্মনাম) বলেন, আমরা সবাই আতঙ্কে আছি। চার বছরে এমনটা কখনও হয়নি। এবার যেহেতু ঘটেছে, সামনে আরও হতে পারে—এই আশঙ্কাই আমাদের গ্রাস করছে।

ভারতের সেনাবাহিনী প্রথমে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি চালানো হয়, তখন বিদ্রোহীরা গুলি ছোড়ে এবং জবাবে ১০ জন নিহত হয়। পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, একটি টহলদল হামলার শিকার হলে প্রতিক্রিয়ায় বিদ্রোহীদের হত্যা করা হয়।

কিন্তু দু’দিন পর নতুন বিবৃতিতে বলা হয়, নিহতরা ভারতীয় সীমান্তে বেস্টনী নির্মাণের কাজে নিযুক্তদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়েছিল।

নয়াদিল্লির একজন সাবেক সরকারি উপদেষ্টা বলেন, এটি কি আগাম গোয়েন্দা অভিযানে করা হামলা, নাকি তাৎক্ষণিক আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ?—দুটি ব্যাখ্যা একসঙ্গে সত্য হতে পারে না।

তামুর স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যখন মরদেহ নিতে গিয়েছিলাম, তখন আসাম রাইফেলস আমাদের কিছু কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। বলা হয়, না করলে মরদেহগুলো ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। এই কাগজগুলোতে সীমান্ত বেড়া নির্মাণে সম্মতি এবং সংঘর্ষের তথ্য লেখা ছিল বলে দাবি করেন তিনি।

মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার বারবার ভারতকে অনুরোধ করেছে সীমান্ত বেড়া নির্মাণ বন্ধ করতে এবং আলোচনায় বসতে। কিন্তু দিল্লি গত বছর থেকেই তা জোরদার করেছে। এই বেস্টনী ঐতিহ্যগতভাবে উন্মুক্তভাবে চলাচল করা জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।

থিদা বলেন, আমরা ভারতকে বন্ধু ভাবতাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ভারতীয় বাহিনী যে কোনও সময় আবার এমন কিছু করে বসতে পারে।

মিয়ানমার ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ওপর গবেষণা করা বিশ্লেষক অংশুমান চৌধুরী বলেন, তামুর এই হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে অপ্রত্যাশিত ও অস্বাভাবিক। এর ফলে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বিদ্যমান ভারসাম্য ভেঙে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, ভারতের সীমান্ত বেড়া নির্মাণ ঐতিহাসিকভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য বিরূপ। কারণ এ অঞ্চলজুড়ে জাতিগোষ্ঠীগুলো একে অপরের আত্মীয়-পরিজন—বেড়া মানে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করা।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত বছর বলেছিলেন, সীমান্ত বেস্টনী ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপে উত্তর-পূর্ব ভারতের ভঙ্গুর জনপদগুলোতে নতুন অস্থিরতা ছড়াতে পারে।

নির্বাসিত সরকার ও স্থানীয়রা স্পষ্ট করে বলছেন, তারা ভারতকে কোনোভাবে প্রতিরোধ করতে পারবে না। থিদা বলেন, আমরা তো নিজেদের দেশেই বিদ্রোহী, ভারতীয় সেনার মতো শক্তিশালী বাহিনীকে কীভাবে ঠেকাবো?

সবচেয়ে বেশি কষ্ট কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাশগুলোর কী অবস্থা ছিল জানেন? পোকারা শরীরের ভেতর ঢুকে পড়েছিল। অন্তত আমাদের মৃতদের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত ছিল।

সূত্র: আল-জাজিরা

/এএ/
সম্পর্কিত
ইরাবতীর প্রতিবেদনরাখাইনে নতুন বাস্তবতা: আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগে বাংলাদেশ ও ভারত
ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শীর্ষ জেনারেল মনোনীত
যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনার মধ্যে ট্রাম্প-শি ফোনালাপ
সর্বশেষ খবর
ভাষণ দিতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা, জোরালো হচ্ছে নির্বাচনের আলোচনা
ভাষণ দিতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা, জোরালো হচ্ছে নির্বাচনের আলোচনা
কালুরঘাট ব্রিজে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে গাড়ি, নিহত ৩
কালুরঘাট ব্রিজে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে গাড়ি, নিহত ৩
‘নীলচক্র’ সিনেমার ‘ধোঁকা’, বাড়তি চমক বালাম
‘নীলচক্র’ সিনেমার ‘ধোঁকা’, বাড়তি চমক বালাম
যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার ৩৮৪
যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার ৩৮৪
সর্বাধিক পঠিত
একীভূত হচ্ছে ৫ ইসলামি ব্যাংক: আসছে নতুন বৃহৎ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক
একীভূত হচ্ছে ৫ ইসলামি ব্যাংক: আসছে নতুন বৃহৎ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক
ভাষণ দিতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা, জোরালো হচ্ছে নির্বাচনের আলোচনা
ভাষণ দিতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা, জোরালো হচ্ছে নির্বাচনের আলোচনা
সৌভাগ্যবান ‘দম্পতি’ ইয়াশ-তটিনী!
সৌভাগ্যবান ‘দম্পতি’ ইয়াশ-তটিনী!
১২ দেশের নাগরিকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
১২ দেশের নাগরিকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
রাজশাহীতে এবার আমের দাম কম, ক্রেতা নেই
রাজশাহীতে এবার আমের দাম কম, ক্রেতা নেই