X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইএস যেন মরীচিকা, পেছনে ছুটে চলেছে ইউরোপীয় নারীরা

বিদেশ ডেস্ক
১৩ আগস্ট ২০১৬, ২১:৫১আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০১৬, ২১:৫১

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর উত্থানের পরই ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এসব প্রচারণায় আইএস সদস্যদের হলিউডের সিনেমার স্টাইলে উপস্থিতি, যোদ্ধাদের নায়ক সুলভ উপস্থিতি তরুণ প্রজন্মকে বেশ আকৃষ্ট করেছে। আইএসের প্রতি আকৃষ্ট তরুণদের কথা বেশ আলোচিত হলেও কিশোরী ও নারীদের আকৃষ্ট ও যোগ দেওয়ার বিষয়টি খুব একটা আলোচনায় আসেনি। কিন্তু আইএসে যোগ দেওয়া নারীদের সংখ্যা কম নয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আইএসে যোগ দিয়ে ফিরেও এসেছেন। তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে। মোহভঙ্গের পড় ভুগছেন অনেকেই অনুশোচনায়। আইএসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদের সিরিয়া গমনের ঘটনা যেন একেবারে মরীচিকার মতোই।  

গত শতাব্দির শেষ দিকে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আফগানিস্তান কিংবা বসনিয়াতে যুদ্ধ করতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তাদের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বিষয় ছিল। তারা ছিল সবাই পুরুষ। কিন্তু আইএসের উত্থানের পর তা রাতারাতি পাল্টে গেছে। আইএস ব্যাপকভাবে নারী কর্মী ও যোদ্ধাদের সংগ্রহ করছে। এসব নারীদের বেশিরভাগই উঠতি বয়সের। অনলাইনেই তারা আইএসের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে।

নিউ আমেরিকা নামক গবেষণা সংস্থার মতে, সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে পশ্চিমের অন্তত সাড়ে চার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত সাড়ে চারশ নারী রয়েছেন। আইএসে যোগ দেওয়া এসব নারীদের গড় বয়স ২১ বছর। এসব নারীর এক তৃতীয়াংশ আবার ধর্মান্তরিত মুসলমান। অনেকেই টুইটারের মাধ্যমে আইএসের কর্মী সংগ্রহকারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। আবার কারও কারও জঙ্গিদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে অথবা তাদের আত্মীয় কিংবা প্রেমিক সিরিয়া বা ইরাকে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করছে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রিগিট লেবান্স নাকোস, যার অধ্যয়নের বিষয় সন্ত্রাসবাদ, তিনি বলেন, এসব নারীরা সাধারণ কিশোরী। তারা নিজেদের হেয়ার ড্রায়ার সম্পর্কে জানতে চায়। তারা অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী। তারা যেমন আইএসের ভক্ত তেমনি পপ তারকাদেরও।

এসব নারীদের অনেকেই অবিবাহিত। তাদের আর্থসামাজিক পটভূমি, জাতীয়তা আলাদা। তবে তারা আইএসে যোগ দেওয়া পুরুষদের চাইতে উচ্চ শিক্ষিত। পুরুষদের তুলনায় নিহতের সংখ্যা কম এবং দেশে ফেরার পর তারা পুরুষদের চাইতেও ভয়ঙ্কর বলে মনে করছেন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।

খাদিজা, আমিরা ও শামিমা

সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নারী খাদিজা সুলতানার ঘটনা সামনে আসার পর বেরিয়ে আসছে অনেক তথ্য। যা রীতিমতো সবাইকে চমকে দিয়েছে।

পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন স্কুলের শিক্ষার্থী ১৭ বছর বয়সী খাদিজা স্কুলের ছুটি কাটানোর সময় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্য থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যায়। তার সঙ্গে ছিল দুই বন্ধু শামীমা বেগম ও আমীরা আব্বাসি। সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় খাদিজার বয়স ছিল ১৬ বছর। আর শামীমা ও আমীরার বয়স ছিল ১৫ বছর। তুর্কি সিমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে তারা আইএস-এ যোগ দেয় বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বিমান হামলায় খাদিজা নিহত হয়েছে। সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর খাদিজার বিয়ে হয়েছিল এক সোমালি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে। খাদিজা নিহত হওয়ার আগে তার স্বামীও নিহত হয়।

ওই তিন কিশোরীর পরিবারের আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-কে বলেছেন,  আমীরা এবং শামীমারও আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। তবে আমীরার স্বামীও নিহত হয়েছে। তবে ওই দুই কিশোরী জীবিত রয়েছে বলে আকুঞ্জি জানিয়েছেন। তবে নিরাপত্তার খাতিরে তাদের অবস্থান জানাননি তিনি।

২১ বছর বয়সী আকসা মাহমুদ আইএস-এ যোগ দিতে গ্লাসগো থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যায় ২০১৩ সালের নভেম্বরে। সে এর আগে আইএস-এর জঙ্গি হামলার পক্ষে অনলাইনে প্রপাগান্ডা চালাতো আর ব্রিটিশ নারী ও তরুণীদের আইএস-এ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাতো। ধারণা করা হয়, বেথনাল গ্রিন স্কুলের তিন শিক্ষার্থীর আইএস-এ যোগ দেওয়ার পেছনেও তার হাত রয়েছে।

আকসা এক আইএস জঙ্গিকে বিয়ে করেন। তাকে আইএস-এর আল-খানসা ব্রিগেডে উচ্চপদ দেওয়া হয়। ওই নারী ব্রিগেডের কাজ হলো নারী এবং শিশুদের আইএস-এর কথিত শরিয়া অনুযায়ী শাস্তির বিধান করা। শাস্তির মধ্যে রয়েছে নারীদের পুরুষ নিকটাত্মীয় ছাড়া ঘরের বাইরে আসলে গ্রেফতার ও মারধর এবং নম্র আচরণ না করলে দোররা মারা।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে আকসা এবং স্যালি-অ্যান জোনস-এর ওপর আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সিরিয়া যাওয়ার পথে তুরস্কে তিন ব্রিটিশ কিশোরি

কেন্টের বাসিন্দা ৪৭ বছর বয়সী স্যালি-অ্যান জোনস (আইএস-এর দেওয়া নাম উম হোসাইন আল-ব্রিটানি)-এর জন্ম খ্রিস্টান পরিবারে হলেও সে কিশোর বয়সে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। তার ১০ বছর বয়সী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্যালি ২০১৩ সালে সিরিয়ায় পথে পা বাড়ায়। সেখানে আইএস হ্যাকার জুনাইদ হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ড্রোন হামলায় জুনাইদের মৃত্যুর পর স্যালি টুইটারে জানিয়েছিল, সে তার স্বামীর জন্য গর্বিত। মার্কিন ও ব্রিটেন ড্রোন হামলার তালিকায় স্যালির নাম রয়েছে।

২৪ বছর বয়সী ব্রিটিশ তরুণী ডেয়ার আইএস-এ যোগ দেওয়া একেবারে প্রথম দিককার ব্রিটিশ নাগরিক। ২০১২ সালে আইএস-এ নাম লেখাতে সে সিরিয়ায় যায়। সঙ্গে করে তার একমাত্র শিশু ইসাকেও নিয়ে গিয়েছিল।  সিরিয়ায় পৌঁছে তার নতুন নাম হয় মরিয়ম। তখন তার বিয়ে হয় সুইডিশ বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গি আবু বকরের সঙ্গে। পরে আবু বকর নিহত হয়।

প্রকাশিত খবরে জানা যায়, তখন তার গর্ভে ছিল আরেকটি শিশু। কিন্তু ডেয়ার সিরিয়া ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে এবং সেখানেই তার সন্তানকে বড় করে তুলবে বলে জানিয়েছিল। তার এই বক্তব্য আইএর প্রপাগান্ডায় নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। ডেয়ারই আইএস-এর হাতে বন্দি জেমস ফলি-কে জবাই করে হত্যা করেছিল।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার ছেলে চার বছর বয়সী ইসা-কে আইএস-এর এক প্রপাগান্ডা ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে সে আইএস-এর ‘হেড ব্যান্ড’ পরেছিল। ওই ভিডিওতে ইসা বলছিল, ‘আমরা এখানে সব কাফেরদের হত্যা করবো।’

তিন বোন খাদিজা দাউদ (৩০), জোহরা দাউদ (৩৩) এবং সুগরা দাউদ (৩৪) গত গ্রীষ্মে ব্রাডফোর্ড থেকে তাদের নয় সন্তানসহ আইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়ায় পালিয়ে যায়। তাদের পাঁচ মেয়ে এবং চার ছেলের বয়স তিন থেকে পনেরো বছরের মধ্যে।

এমনি করে অনেক ব্রিটিশ নারী মরীচিকার সুখে আইএস-এ যোগ দিতে পাড়ি জমিয়েছে সিরিয়ার পথে। খাদিজার সামনেই ১৭ বছর বয়সী অস্ট্রীয় কিশোরী সামারা কেসিনোভিচকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সামারাকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা খাদিজার ওপর ভীষণ প্রভাব বিস্তার করে বলে খাদিজার পারিবারিক আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি জানিয়েছেন। তিনি বিবিসি নিউজনাইট-কে বলেন, ‘যদি পালাতে গিয়ে আপনি আইএস-এর হাতে ধরা পড়েন, তাহলে তারা আপনাকে শাস্তি দেবে, আর এই শাস্তি ভীষণ বর্বর।’

তাসনিম আকুঞ্জি বলেন, ‘যে সপ্তাহে সে (খাদিজা) আইএস ছেড়ে আসার কথা ভাবছিল, এক অস্ট্রীয় কিশোরী (সামারা কেসিনোভিচ) আইএস এলাকা থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে। তাকে জনসমক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভবত খাদিজা ওই ঘটনায় ভয় পেয়ে সেই ঝুঁকি নিতে চায়নি।’

অস্ট্রীয় কিশোরী সামারা কেসিনোভিচ গত বছর তার দেশ থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে আইএস-এ যোগ দিয়েছিল। মোহভঙ্গ হওয়ায় সে আইএস থেকে পালিয়ে আসতে চেয়েছিল।

খাদিজার আইএস ত্যাগের চেষ্টা অন্যদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। আকুঞ্জি  বলেন, এই হৃদয়বিদারক ঘটনার একটা ইতিবাচক দিক হতে পারে, যারা এখনও সেখানে যেতে আগ্রহী, যুদ্ধ এলাকা সম্পর্কে তারা একটা ধারণা পেতে পারেন। যা থেকে তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, নিউ ইয়র্ক টাইমস।

/এসএ/এএ/

সম্পর্কিত
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
ব্রিটেনের সর্বপ্রথম ক‌নিষ্ঠ কাউন্সিলর বাংলাদেশি ইসমাইল
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস