X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
ন্যাটোতে সুইডেন-ফিনল্যান্ড

বিরোধিতার পর কেন পিছু হটলো এরদোয়ানের তুরস্ক?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ জুন ২০২২, ১৭:৪৭আপডেট : ২৯ জুন ২০২২, ১৭:৪৭

কয়েক সপ্তাহের বিরোধের অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগদানের ওপর থেকে নিজেদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছে তুরস্ক। মাদ্রিদে ন্যাটো সম্মেলন শুরুর আগে মঙ্গলবার চার ঘণ্টা আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে ৩০ সদস্যের জোটটিতে নতুন দুই দেশকে সদস্য করার পথ সুগম হয়েছে।

শুরুতে কেন বিরোধিতা?

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো সদস্য হওয়ার আবেদনে বিরোধিতা করে জোটের সদস্যদের হতবাক করে দেয় তুরস্ক।

আঙ্কারার দাবি ছিল, নরডিক দেশ দুটিকে তুরস্কে নিষিদ্ধ পিকেকে’র মতো কুর্দি সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তুরস্কের অস্ত্র আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।

তুরস্ক উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, সুইডেন পিকেকে সদস্যদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। তবে স্টকহোম তা অস্বীকার করে।

পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো পরিচালিত হয় সর্ব সম্মতির ভিত্তিতে। এর অর্থ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটো সদস্য করায় আপত্তি জানালে তাদের আর জোটে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হত না। এরদোয়ান বলেছিলেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করবেন না।

পিকেকে কারা?

তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসী’ গ্রুপ বিবেচিত পিকেকে। ১৯৮৪ সাল থেকে গ্রুপটি তুরস্ক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করছে।

তুরস্ক ও সশস্ত্র গ্রুপটির মধ্যে সংঘর্ষের কারণে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। পিকেকে এবং তার অনুগত গ্রুপগুলো তুরস্কের সেনাবাহিনী, নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিকদের ওপর বহু হামলা চালিয়েছে। এছাড়া পিকেকে তাড়িয়ে দিতে নিজ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করছে তুরস্ক।

সিরিয়ার ওয়াইপিজি গ্রুপকে দেওয়া সমর্থনকে পিকেকে’র প্রতি সমর্থন হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক। তারা মনে করে, পিকেকে’র অনুগত গ্রুপ ওয়াইপিজি। তবে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসবিরোধী যুদ্ধে বহু পশ্চিমা দেশ ওয়াইপিজিকে সহায়তা দিয়েছে এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল।

পিকেকে ও ওয়াইপিজি’কে নিশানা বানিয়ে গত কয়েক বছরে সিরিয়া ও ইরাকে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে তুরস্ক।

ন্যাটো ও তুরস্কের সমঝোতা হলো কোন বিষয়ে?

ন্যাটো মহাসচিব জেনারেল জেন্স স্টোলটেনবার্গ জানিয়েছেন, চুক্তির শর্তের মধ্যে রয়েছে সুইডেন সন্দেহভাজন যোদ্ধাদের তুরস্কে প্রত্যর্পণের অনুরোধে সাড়া দেওয়ার কাজ জোরদার করবে এবং তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কঠোর করতে সুইডিশ ও ফিনিশ আইন সংশোধন করা হবে।

স্টোলটেনবার্গ আরও জানান, তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড।

চুক্তিটিকে নিজেদের বিজয় হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, যা দাবি করা হয়েছিল চুক্তিতে তা পেয়েছে তুরস্ক। আর এই চুক্তির ফলে পিকেকে এবং তাদের অনুগতদের বিরুদ্ধে তুরস্কের লড়াইয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করবে নরডিক দেশ দুটি।

তুরস্কের ‘প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করতে’ এবং ‘সন্ত্রাসী অপরাধীদের প্রত্যর্পণের বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ’ নিতে সম্মত হয়েছে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন।

মার্কিন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই চুক্তির সঙ্গে তুরস্ক তাদের দীর্ঘদিনের দাবি মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেনি। এর আগে তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার পর আঙ্কারার কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি স্থগিত করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

মাদ্রিদে রওনা দেওয়ার আগে এরদোয়ান বলেন, তিনি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চাপ দিতে পারেন। সম্মেলনের সময়ে এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতের আশা করছেন বাইডেন।

আপত্তি প্রত্যাহারে ন্যাটো এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রভাব কী?

স্টোলটেনবার্গ জানান, ন্যাটো নেতারা বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে জোটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাবেন।

তবে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দিতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কেননা জোটভুক্ত প্রতিটি দেশেই তাদের যোগদানের বিষয়টি অনুমোদন পেতে হবে।

ইউক্রেনকে ইতোমধ্যে শত শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে ন্যাটো মিত্ররা। স্টোলটেনবার্গ বলেন, আশা করা হচ্ছে ইউক্রেনের জন্য বিস্তৃত একটি সহায়তা প্যাকেজে সম্মত হতে পারে ন্যাটো দেশগুলো।

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো সদস্য হওয়ার জোরালো বিরোধিতা করছে রাশিয়া। তারা এই অন্তর্ভুক্তিকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের দিকে জোটের সম্প্রসারণ হিসেবে দেখছে।

১৯৪৯ সালে ন্যাটো প্রতিষ্ঠার সময়ে এর মূল লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবিলা করা। এখন পর্যন্ত এই জোটটি রাশিয়াকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে।

আল জাজিরা অবলম্বনে।

/জেজে/এএ/
সম্পর্কিত
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষ খবর
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা