যুক্তরাজ্যে জ্ঞাতি বিয়ে বা আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের আইনি বৈধতা নিয়ে বিতর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটিশ বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি সম্প্রদায় এ ধরনের বিবাহে সবচেয়ে বেশি সমর্থন জানাচ্ছে। বিপরীতে শ্বেতাঙ্গ, ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশদের মধ্যে স্পষ্ট বিরোধিতা দেখা গেছে।
জরিপ অনুযায়ী, ব্রিটিশ বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের ৩৯ শতাংশ বিশ্বাস করেন জ্ঞাতি বিবাহ বৈধ হওয়া উচিত। বিপরীতে, শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের মধ্যে এই সমর্থন মাত্র ৮ শতাংশ, ভারতীয় ব্রিটিশদের মধ্যে ৯ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশদের মধ্যে ৬ শতাংশ।
যদিও জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ এই প্রথার বিরোধিতা করেছেন, তবু এই হার অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। শ্বেতাঙ্গ ও ভারতীয় ব্রিটিশদের ৭৭ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশদের ৮২ শতাংশ জ্ঞাতি বিবাহকে বেআইনি করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে জ্ঞাতি বিবাহ বৈধ, তবে ভাই বোন বা সৎভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ। দেশটিতে জ্ঞাতি দম্পতিদের জন্য জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে তাদের সন্তানদের সম্ভাব্য জেনেটিক ঝুঁকি সম্পর্কে জানানো হয়। চিকিৎসকদের মতে, জ্ঞাতি বিবাহের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুদের জেনেটিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সাধারণ শিশুদের তুলনায় দ্বিগুণ।
আইনি সংস্কার নিয়ে বিতর্ক
রক্ষণশীল এমপি রিচার্ড হোল্ডেন জ্ঞাতি বিবাহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এ নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকের মতে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
স্বতন্ত্র এমপি ইকবাল মোহাম্মদ সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে উন্নত জেনেটিক পরীক্ষার সুযোগ বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডমিনিক উইলকিনসনও একই মত পোষণ করেন। তিনি বলেছেন, সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো রোগের বাহক চিহ্নিত করে সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বাস্তবসম্মত ও নৈতিক।
ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের জনসংখ্যা ও জন্মহার
২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১, যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২২ সালে ব্রিটিশ বাংলাদেশি নারীরা ৭ হাজার ৭ শিশুর জন্ম দিয়েছেন, যা যুক্তরাজ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। এ সম্প্রদায়ের গড় বয়স ২৭ বছর, যা শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের (৪৩ বছর) তুলনায় অনেক কম। এটিই তাদের উচ্চ জন্মহারের একটি কারণ বলে মনে করা হয়।
ভৌগোলিক বিভাজন
জরিপে দেখা গেছে, জ্ঞাতি বিবাহে সর্বোচ্চ সমর্থন লন্ডনে (১৫ শতাংশ), এরপর উত্তর ইংল্যান্ড (১২) এবং মিডল্যান্ডসে (১০)। দক্ষিণ ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে এই হার যথাক্রমে ৬ ও ৭ শতাংশ।
ব্র্যাডফোর্ডে পাকিস্তানি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন তিনটি ওয়ার্ড রয়েছে যেখানে ৪৬ শতাংশ মায়ের স্বামী তাদের চাচাতো ভাই। তবে গত এক দশকে জ্ঞাতি বিবাহের হার হ্রাস পেয়েছে।
আঞ্চলিকভাবে, পাকিস্তানে জ্ঞাতি বিবাহের হার ৬৫ শতাংশ, সৌদি আরবে ৫০, আফগানিস্তানে ৪০, ইরানে ৩০ এবং মিসর ও তুরস্কে ২০ শতাংশ।
ঐতিহাসিকভাবে, ব্রিটিশ রাজপরিবারেও জ্ঞাতি বিবাহ প্রচলিত ছিল, যা সম্পদ ও জমির মালিকানা রক্ষার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
জ্ঞাতি বিবাহ নিয়ে বিতর্ক চললেও যুক্তরাজ্যে এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করা হয় না। স্থানীয় কাউন্সিলগুলো এই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক তথ্য রাখে না। তবে ব্র্যাডফোর্ডের মতো কিছু অঞ্চলে পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ধরনের বিবাহের হার বেশি। বিশ্বব্যাপী পাকিস্তানে জ্ঞাতি বিবাহের হার সর্বোচ্চ (৬৫ শতাংশ), এরপর সৌদি আরব (৫০ শতাংশ) ও আফগানিস্তানে (৪০ শতাংশ)।