X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়ার সমুদ্রতটে ঢাকার কূটনীতির বাঁকবদল

রঞ্জন বসু, দিল্লি
১৩ অক্টোবর ২০১৬, ০১:০৩আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০১৬, ১৩:১৮

গোয়ার সমুদ্রতটে ঢাকার কূটনীতির বাঁকবদল ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে সার্ক বা দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতার যে প্রায় বিদায় ঘণ্টা বাজতে চলেছে, সেটা কোনও নতুন কথা নয়। কিন্তু আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘বিমস্টেক’ এর হাত ধরে পাকিস্তানকে বাইরে রেখেই এবার বাংলাদেশ যে ভিন্নতর গ্রুপিংয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চলেছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে আগামী রবিবার গোয়ার সমুদ্রতটে।
আগামী রবিবার ১৬ অক্টোবর ভারত গোয়াতে আয়োজন করেছে বিমস্টেক আউটরিচ সামিট, যেখানে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সময়ে গোয়াতে চলবে ‘ব্রিকস’ বা ব্রাজিল-রাশিয়া-ইন্ডিয়া-চায়না-সাউথ আফ্রিকার শীর্ষ সম্মেলন। ওই সব দেশের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি সম্মেলনে থাকবেন শেখ হাসিনাসহ বিমস্টেক-এর সরকার প্রধানরাও।
ব্রিকস সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ ভারতের বিশেষ আমন্ত্রণেই সেখানে আসবেন বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড-বার্মা-শ্রীলঙ্কা-নেপাল-ভুটানের শীর্ষ নেতারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বার্মার বিশেষ রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর অং সান সুচি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তারা সকলেই থাকবেন বিমস্টেক-এর সেই ‘আউটরিচে’।
কিন্তু রবিবার গোয়ার বিখ্যাত ক্যাভেলোসিম বিচের রাজকীয় লীলা হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট রুমে যখন বিমস্টেক-এর এই নেতারা মিলিত হবেন, সেটাকে কেউই একটা আঞ্চলিক জোটের রুটিন বৈঠক বলে উড়িয়ে দিতে পারছেন না। বরং পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এই বৈঠক থেকেই নতুন গতি পাবে দক্ষিণ তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন।
সোজা কথায় গুরুত্ব বাড়বে বিমস্টেক-এর, ক্রমশ ফিকে হয়ে আসবে সার্কের স্বপ্ন। সার্ক ভাবনার জন্মদাতা যে বাংলাদেশ- তাদের জন্য সিদ্ধান্তটা অবশ্যই কঠিন, কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ।

আসলে উনিশ বছর আগে যে বিমস্টেক-এর জন্ম, তা সত্যিকার অর্থে গতি পাচ্ছে এতদিনে এসে। জন্মলগ্নে এই জোটের পুরো নাম ছিল ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া-মায়ানমার-শ্রীলঙ্কা-থাইল্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন’। এই শব্দগুলোর আদ্যক্ষর জুড়েই জোটের নামকরণ করা হয়েছিল বিমস্টেক। আর বিমস্টেকের ‘বি’-টা ছিল অবশ্যই বাংলাদেশ।

পরে নেপাল-ভুটান জোটে ঢোকার পর তার নতুন নাম হলো ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন’। ফলে ছোট নামটা বিমস্টেকই থাকলো। কিন্তু বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে থাকা সবগুলো দেশকে নিয়েই সম্পূর্ণ হলো বৃত্তটা। স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটান যে তাদের সামুদ্রিক বাণিজ্যের জন্য বঙ্গোপসাগরের ওপরেই নির্ভরশীল, সেটা তো সবারই জানা।

আজ এত বছর বাদে এসে সেই বিমস্টেক যে প্রভূত গুরুত্ব পাচ্ছে, তার প্রধান কারণ অদূর ভবিষ্যতে সার্ককে ঘিরে কোনও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। এর আগে গত বছরই যখন পাকিস্তান সার্কে প্রস্তাবিত মোটর ভেহিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্টে বাদ সেধেছিল, তখন তাদের অপেক্ষায় না-থেকে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মিলে নিজেদের মধ্যে সই করে ফেলেছিল ‘বিবিআইএন’ অ্যাগ্রিমেন্ট।

ফলে সেই চুক্তিটা ‘রিজিওনাল’ না-হয়ে ‘সাব রিজিওনাল’ হয়ে দাঁড়ায় ঠিকই, কিন্তু দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে মালবাহী ট্রাক চলাচলের পথ তাতে প্রশস্ত হয়েছিল। এখন বিমস্টেক সেই বিবিআইএন-এর দেখানো পথেই সহযোগিতার বৃত্তকে আরও প্রসারিত করতে চলেছে। শ্রীলঙ্কা-বার্মা-থাইল্যান্ডকেও সেই জোটে এনে এশিয়াতে বড় একটা আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি (ইস্ট) প্রীতি শরণের কথায়, ‘আমরা বিমস্টেককে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছি তার একটা প্রধান কারণ এই সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কোনও ‘ইস্যু’ নেই। তাদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ভালো। কোনও বড় বিরোধ নেই বললেই চলে। এই অঞ্চলে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হারও ৬ শতাংশের বেশি। ফলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বিমস্টেকের অগ্রগতির সম্ভাবনা অপিরসীম।’

যেটা তিনি বলেননি, তা হলো সার্কের দুই বড় সদস্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে অমীমাংসিত ইস্যু আছে বলেই সার্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি, সম্প্রতি ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যেও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বড় ‘ইস্যু’ তৈরি হয়েছে, যার পরিণামে শীর্ষ সম্মেলন বয়কট করার মতো কঠোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে ঢাকা।

কিন্তু এই সপ্তাহ শেষে সেই অতীতকে পেছনে ফেলে রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তাদের আঞ্চলিক কূটনীতির এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছে, এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে থাকা বিমস্টেক-এ সেই নতুন প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে গোয়াতে, আরব সাগরের তীরে, এই যা!

/এপিএইচ/আপ-এএ/

 

সম্পর্কিত
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
আম আদমি পার্টির সাথে জোট, দিল্লি কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগ
ভারতের মণিপুরে আবারও জাতিগত সহিংসতা
সর্বশেষ খবর
প্রধানমন্ত্রী দেশের পথে
প্রধানমন্ত্রী দেশের পথে
সুঁই-সুতোয় ‘স্বপ্ন বুনছেন’ ভোলার আমেনা খানম
সুঁই-সুতোয় ‘স্বপ্ন বুনছেন’ ভোলার আমেনা খানম
ভিজিএফের চাল না পাওয়া উপকারভোগীদের মানববন্ধনে হামলা
ভিজিএফের চাল না পাওয়া উপকারভোগীদের মানববন্ধনে হামলা
রাফাহ শহরে নতুন করে  ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
রাফাহ শহরে নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ