X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের সঙ্গে পাল্লা দিতেই প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারত?

বিদেশ ডেস্ক
০৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:০৪আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:১৮
image

স্থানীয় প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের বড় সহযোগী হয়ে উঠতে চাইছে ভারত। বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকার মতো দেশগুলোর পাশাপাশি মিয়ানমার ও আফগানিস্তানেও গেছে ভারতের অনুদান-স্বল্প সুদের ঋণ। এই অঞ্চলের আরেক প্রভাবশালী দেশ চীনের দেওয়া ঋণের সঙ্গে পাল্লা দিতেই ভারত প্রতিবেশীদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ঋণ ও অনুদান দেওয়ার বিষয়টি বৃদ্ধি করছে কি না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন যেরকম আগ্রাসী ঋণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, ভারতের উদ্দেশ্য তেমন নয়। তারা প্রতিবেশীদের নির্ধারিত প্রকল্পে সহযোগিতা করে থাকে। তাছাড়া ভারত প্রতিবেশীদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে বোঝাতে চায়, দেশটি সমৃদ্ধ হতে থাকলে প্রতিবেশীরাও তার সুফল ভোগ করবে। চীনের সঙ্গে পাল্লা দিতেই প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারত?

৩০ কোটি ডলারের সালমা বা ‘আফগানিস্তান ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ ড্যাম’ নির্মাণে যেমন ভারতের সহযোগিতা রয়েছে তেমনি বাংলাদেশের রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতেও দেখা গেছে তাদের ভূমিকা। এসব প্রকল্প ভারতের কম সুদে দেওয়া ঋণ বা অনুদানের অর্থে নির্মিত হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে ভারত ৬১ দেশে স্বল্প সুদে ঋণ (লাইন অব ক্রেডিট) দিয়েছে।  এই এক হাজার ১৬০ কোটি ডলার ঋণের ৪৬ শতাংশই গেছে প্রতিবেশীদের কাছে। ২০১৩-১৪ সালের মধ্যে ৪২০ কোটি ডলারের যে অনুদান ভারত দিয়েছে, তা পেয়েছে পাকিস্তান ও মিয়ানমার ছাড়া সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশগুলো।  ২০০৮-২০১৩ সালের মধ্যে এই অনুদানের পরিমাণ ছিল ১৬৭ কোটি ডলার।

ভারতের সহযোগিতায় দেশটির সঙ্গে নেপাল ও বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের বিষয়টি বেগবান হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে ভারতীয় সহযোগিতায়। নেপালের জনকপুর ও ভারতের বিহার রাজ্যের জয়পুরের মধ্যে স্থাপিত রেল লাইন দিয়ে এ বছরের শেষ নাগাদ রেল চলাচল শুরু হতে পারে। ভারত সম্প্রতি মিয়ানমারকে ১৮টি রেলইঞ্জিন দিয়েছে ৬৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সহায়তা তহবিলের অংশ হিসেবে। ভারত ভূমিকা রাখছে আফগানিস্তানের কাবুল নদীর ওপর শাহতুত বাঁধ নির্মাণের প্রকল্পেও। এটি কাবুলের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি প্রকল্প। বাঁধটি নির্মাণ হয়ে গেলে আফগান রাজধানীতে সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত হবে।

বাঁধের মতো বড় প্রকল্প ছাড়াও আফগানিস্তানে আরও বেশ কিছু ছোট ছোট প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়েছে ভারত। ১০ লাখ ডলার বা তার কম অর্থমূল্যের এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে স্কুল, মেয়েদের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্ত। আফগানিস্তানের তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোসহ মোট ৩৪টি প্রদেশেই ভারতের অর্থায়নে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন চলছে। এসব প্রকল্পের জন্য ভারত ২০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে ১২ কোটি ডলার খরচ করা হয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমসের ভাষ্য, বাংলাদেশ ভারতের দেওয়া স্বল সুদের ঋণের (লাইন অব ক্রেডিটের) সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। ভারত বাংলাদেশের জন্য স্বল্প সুদে যে ৭৮৬ কোটি ডলারের ঋণ হ্রাদ করেছিল তার বেশিরভাগটাই দেওয়া হয়েছে গেছে গত চার বছরে। এসব ঋণ গেছে মূলত বন্দর, রেললাইন ও রাস্তা নির্মাণের মতো  অবকাঠামো ও যোগাযোগ খাতের প্রকল্পে। ভারত এখন বাংলাদেশের রূপপুরে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির বিতরণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে।

কিন্তু ভারত যে অর্থই বিনিয়োগ করুক না কেন প্রতিবেশী দেশগুলোতে, চীনের ঢালা অর্থে তুলনায় তা নিতান্তই স্বল্প। বেইজিং সহায়তা ও ঋণের আসল পরিমাণ সাধারণত প্রকাশ্যে ঘোষণা করে না। তবে ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চীন ২০১২-২০১৮ সালের মধ্যে ৮০৬ কোটি ডলার মিয়ানমারে, চার হাজার ৩০০ কোটি ডলার বাংলাদেশে, দুই হাজার কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায়, পাঁচশ ৪৫ কোটি ডলার নেপালে এবং ৪২ কোটি ডলার আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করেছে।

চীনের দেওয়া ঋণ সহায়তা নিয়ে আশঙ্কা কাজ করে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। উদাহরণ হিসেবে তাদের সামনে আসে শ্রীলঙ্কার হাম্বান্টোটা সমুদ্র বন্দরের পরিণতি। চীনের ঋণে নির্মিত বন্দরটি এবং তার আশেপাশের  এক হাজার ৫০০ একর জমি ৯৯ বছরের জন্য চীনকে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা, যাতে ১০০ কোটি ডলারের চীনা ঋণের বোঝা থেকে তারা রেহাই পেতে পারে।

অন্যদিকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, ভারত যেসবব প্রকল্পে সহযোগিতা করে সেগুলো কোনওভাবেই ঋণগ্রহীতা দেশের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয় না। স্থানীয় সরকারগুলো যে সব উন্নয়নমূলক প্রকল্প তাদের প্রয়োজন বলে ঠিক করে সেসব প্রকল্পেই যুক্ত হয় ভারত। ‘তক্ষশীলা ইন্সটিটিউটের’ পরিচালক নিতীন পাই মন্তব্য করেছেন, এভাবে প্রতিবেশীদের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ভারত বোঝাতে চায়, দেশটি যত সমৃদ্ধ হবে তত তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সমৃদ্ধির সুফল ভাগাভাগি করে নেবে।

তার ভাষ্য, ‘চীনের সঙ্গে ঋণ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। তারা যে অর্থ খরচ করে তার ওপর তাদের সরকারের আদৌ কোনও নিয়ন্ত্রণ বা জবাবদিহিতা নেই। ভারতের শক্তি তার তৃণমূল পর্যায় ছড়িয়ে থাকা গণতন্ত্র এবং বহুত্ববাদ; একনায়কত্ব নয়।’

/এএমএ/
সম্পর্কিত
নিজ্জার হত্যা: কানাডার আদালতে হাজির অভিযুক্ত তিন ভারতীয়
কাঁটাতার পেরিয়ে ভোট দিলেন তারা
আমি মুসলিম ও ইসলামবিরোধী নই: মোদি
সর্বশেষ খবর
নগদ মেগা ক্যাম্পেইনের উপহার পেলেন ২১ বিজয়ী
নগদ মেগা ক্যাম্পেইনের উপহার পেলেন ২১ বিজয়ী
৬ মাস বন্ধ থাকবে কমলাপুর-টিটি পাড়া সড়ক, বিকল্প ব্যবহারের অনুরোধ
এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণ৬ মাস বন্ধ থাকবে কমলাপুর-টিটি পাড়া সড়ক, বিকল্প ব্যবহারের অনুরোধ
দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ
দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ
ভোটকেন্দ্র থেকে টাকাসহ ইউপি চেয়ারম্যান আটক
ভোটকেন্দ্র থেকে টাকাসহ ইউপি চেয়ারম্যান আটক
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
গ্রাম আদালত বিল পাস, জরিমানা বাড়লো চার গুণ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা