X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
দল বদলের হিড়িক

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দায়ী করছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মীরা

রক্তিম দাশ, কলকাতা
২৩ মে ২০২২, ০০:১১আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ০০:১৩

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা ভোটের আগে জেলায় জেলায় শুরু হয় যোগদান মেলা। ‘জয়শ্রী রাম’ বলে পালা বদলের স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নিতে শুরু করেছিলেন বিভিন্ন দলের নেতারা। নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পরাজয়ের পর এবার শুরু হয়েছে উলটো স্রোত। দল বদলকারীরা আবারও ফিরে যাচ্ছেন নিজের ঘরে। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে গেরুয়া শিবিরের এই শোচনীয় অবস্থার জন্য এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেই দায়ী করছেন দলের কর্মী থেকে নেতারা। পুরোনো পোড় খাওয়া নেতা-কর্মীদের বিশ্বাস না করার ফল এখন ভুগতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন কর্মীরা।

ভারতের উনিশের লোকসভা ভোটের আগ মুহূর্তে মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূলের ভাঙন শুরু হয়। লোকসভায় ১৮টি আসন জেতার পর পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিজেপির পক্ষে ওঠা হাওয়ায় গা ভাসিয়ে একের পর এক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সোনালী গুহ, দিবেন্দু বিশ্বাস,সব্যসাচী দত্তর মতো হেভিওয়েটরা তৃণমূল ত্যাগ করতে থাকেন। শুধু তাই নয় বিমানের চার্টাড ফ্লাইট ভাড়া করে কলকাতা থেকে দিল্লি নিয়ে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়।

একুশের ভোটের দামামা বেজে যাওয়ার পর জেলায় জেলায় যোগদান মেলা করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা শিবপ্রকাশ, কৈলাশ বিজয় বর্গীয়,অরবিন্দ মেনন প্রতিদিন বলতেন, ‘এত জন তৃণমূল বিধায়ক-নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।’ শুধু তাই নয় বিজেপি কত আসনে জিতবে তার আগাম ভবিষৎবানীও শুরু করেন তারা। বিধানসভা ভোটের প্রতিটি পর্ব শেষ হওয়ার পরই কৈলাস সাংবাদিক সম্মেলন করে বলতে থাকেন, তারা কত আসনে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু ভোটের ফল বের হওয়ার পর সব আস্ফালনই শুন্য হয়। কেন্দ্রীয় তিন নেতা বঙ্গ বিজেপির নেতা-কর্মীদের ডুবিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়েন।

একুশের মে মাসে রাজ্যে নতুন সরকার গঠন পর থেকেই ঘুরে যায় খেলা। বলতে গেলে মুকুল রায়ের দলবদলের পর থেকেই বিজেপি শিবিরে ভাঙন শুরু হয়েছে। মুকুলের পর আরও তিন বিধায়ক- বিষ্ণুপুরের তন্ময় ঘোষ, বাগদার বিশ্বজিৎ দাস ও কালিয়াগঞ্জের সৌমেন রায় নাম লেখান তৃণমূলে। তবে এই চারজনের ক্ষেত্রেই তৃণমূলে ফেরা ছিল ঘরে ফেরা। চলে যান বাবুল সুপ্রিয়, রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী, বিজেপির সহসভাপতি কংগ্রেস থেকে আসা জয়প্রকাশ মজুমদার। বিজেপিতে যাওয়া পূর্ব বর্ধমানের সাংসদ সুনীল মণ্ডলও দাবি করছেন,  তিনি সবসময় তৃণমূলেই ছিলেন। আর এরপরেই নবতম সংযোজন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। সম্প্রতি তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে ছিলেন, ৭-৮জন বিজেপি বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন। অপরদিকে, রাজ্যের মন্ত্রী তথা হাবড়ার তৃণমূল বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, আগামী এক বছরে মধ্যে বিধানসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা হারাবে বিজেপি।

একুশের বিধানসভা ভোটের পরই বিজেপির প্রবীন নেতা তথাগত রায় দলের কেন্দ্রীয় তিন নেতাকে টার্গেট করে বলেছিলেন,‘দল দালালদের জন্য কোল পেতে দিয়েছিল। গলবস্ত্র হয়ে তাদের এনেছিল। যারা আর্দশের জন্য বিজেপি করত তাদের বলা হয়েছিল, এতবছর ধরে কি করেছেন, আমরা আঠারোটা সিট এনেছি। এখন ভাঁড়ামো করলে হবে? আজকে বিজেপির শোচনীয় পরিণতি এই সবের জন্যই।’ দলবদলকারীদের কোনও রকম পরীক্ষা ছাড়া দলে নেওয়াটা ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহসভাপতি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন,‘ প্রথম ভুল চিটফাণ্ডে জড়িত থাকা মুকুল রায়কে দলে নেওয়া। একুশের ভোটের আগে দলের কোর কমিটির বৈঠকে রণকৌশল ঠিক করা মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়,সব্যসাচী দত্ত, সবশেষ অর্জুন সিংরা আজ তৃণমূলে। কাদের আমরা দলে নিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষ এসব ভালো ভাবে নেননি। এসব কারণেই তারা আমাদের ক্ষমতায় আসা থেকে বঞ্চিত করেছেন।’

এমনিতেই একুশের ভোট পরবর্তীতে বিজেপির সাংগঠনিক রদবদলে পর পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জর্জরিত। তারই মধ্যে একের পর এক দলের টিকিটে জেতা সাংসদ-বিধায়করা দল ছাড়ায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। বিজেপি এক রাজ্য নেতা বলেন,‘এখন ঠেলায় পড়ে বিড়াল গাছে উঠেছে। এতদিন দলবদলকারীদের বিশ্বাস করে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি চালানো হয়েছে ওই কেন্দ্রীয় তিন নেতার নির্দেশে। পুরোনো নেতা-কর্মীদের পাত্তা দেওয়া হয়নি। এখন মুরলিধর সেন লেনের কর্তারা বলছেন, ‘দলের পুরোনো নেতা-কর্মীরা যারা আর্দশবান তারা আমাদের সম্পদ। তারাই দলের চালিকা শক্তি।’

বিজেপির কর্মী সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘ আগামী দিনে বিজেপির হয়ে বুথে বসা ছেলেটাই আমার নেতা। চোখ বন্ধ করে ওকেই বিশ্বাস করব। আর কোনও আয়ারাম-গয়ারাম নেতাকে বিশ্বাস করব না। সে সাংসদ বা মন্ত্রী হোক।’ বিজেপির যুব নেতা দেবাশিষ নাথ বলেন, ‘আমাদের ভরসা বা বিশ্বাসে কিছু হবে না। যখন ফের আমাদের মাথার উপর ওইসব নেতাদের বসিয়ে দেওয়া হবে,তখন তাকে মানতেই হবে। নইলে দল ছেড়ে ঘরে বসে থাকতে হবে।’ বিজেপির প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন,‘ ভোটের আগে আবার এই রকম দলবদলকারীরা যোগ দেবে। তখন আমরা তাদের অনুগামী হব, পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলব। পদ পাওয়ার জন্য তাদের পা চাটব। পুরোনো যোগ্য কার্যকর্তাদের অবহেলা করব।’

/জেজে/
সম্পর্কিত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদ্মশ্রী নিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম