X
শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫
২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ফতোয়ায় না!

অফিসে এসে সই করলেন না  সরকারি কর্মীরা

রক্তিম দাশ, কলকাতা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৮আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৮

দফতরে এলেন। সব কাজ করলেন, অথচ হাজিরা খাতায় সই না করে বকেয়া ডিএ না দেওয়ার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা।

বকেয়া ডিএ- এর দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি দফতরে দু’দিনের ডাকা কর্মবিরতির সোমবার ছিল প্রথম দিন। এই কর্মবিরতির বিরুদ্ধে জারি করা নবান্নের ফতোয়াকে উড়িয়ে রীতিমতো চোখে চোখ রেখে এদিন রাজ্যের সর্বত্র প্রতিবাদে অংশ নিলেন বিপুল সরকারি কর্মী।

কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে রাজ্য সরকারি-কর্মচারীদের ৩৫টি সংগঠনের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ সোমবার ও মঙ্গলবার কর্মবিরতির ডাক দেয়। এদিন সকাল থেকে কলকাতাসহ রাজ্যের সর্বত্র কর্মবিরতি শুরু হয়।

সরকারি কর্মীদের এই আন্দোলন নিয়ে নবান্ন কড়া মনোভাব নিলেও, তা উপেক্ষা করেই কর্মবিরতি চলছে। খাদ্য ভবন, নবমহাকরণ, ক্রেতা সুরক্ষা দফতর, পানি সম্পদ উন্নয়ন দফতরেরসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে ডিএ-র দাবিতে কর্মবিরতির সমর্থনে এক জোট হয়ে বিক্ষোভ দেখান কর্মীরা। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন এই কর্মবিরতির প্রতিবাদে নব মহাকরণ, মহাকরণ, খাদ্য ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে টিফিনের সময় মিছিল ও সভা করেন। তারা রাজ্য বাজেটে ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণার জন্য আবার মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এদিন।

কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিভিন্ন দফতরে কর্মবিরতির ছবি দেখা গিয়েছে। তবে এই কর্মবিরতির বিরোধিতাও শোনা গিয়েছে সরকার সমর্থিত কর্মচারিদের মুখে। যদিও ফেডারেশনের তরফে দাবি করা হয়েছে, বিভিন্ন সরকারি দফতরে কাজকর্ম স্বাভাবিক চলছে।

কর্মবিরতির মাঝেই অন্য ছবি দেখা গিয়েছে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে। তৃণমূলের শিক্ষা সেল থেকে ১৮ জন শিক্ষক সরে দাঁড়ান। বানারহাট ব্লকের দুরামারি চন্দ্রকান্ত হাইস্কুলের শিক্ষকরা এদিন স্কুলের শিক্ষা সেলের সভাপতি হাবিবুল ইসলামের হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন। তারা জানান, বকেয়া ডিএ ও স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে কলকাতার শহিদ মিনারে যে আন্দোলন-অনশন চলছে, তারাও তার সমর্থন করেন। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ডাকে বিভিন্ন সরকারি দফতরে এই কর্মবিরতিতে সোমবার স্কুল, সরকারি দফতর, এমনকী আদালতেও ছিল কর্মবিরতি।

টানা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। সোমবারের পাশাপাশি মঙ্গলবারও কর্মবিরতি চলবে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের যে ৩৫টি সংগঠন ছিল, এদিন তাতে যুক্ত হয় আরও তিনটি সংগঠন।

আন্দোলনকারী সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘সরকার যে নির্দেশিকা জারি করেছে, কাজে যোগ না-দিলে চাকরি জীবনে ছেদ পড়বে। সেই নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করেই বহু সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক তাঁদের এই মঞ্চে যোগদান করেছেন। সরকার যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ২০-২১ তারিখ জরুরি কারণ ছাড়া অফিসে না এলে কাজের রেকর্ড থেকে একটা দিন মুছে যাবে। রাজ্য সরকার আসলে ধর্মঘট ও কর্মবিরতি গুলিয়ে ফেলেছে। কর্মবিরতি মানে অফিসে হাজিরা দিয়ে কাজ না করা। আমরা ধর্মঘট করছি না, অফিসে হাজিরা দিয়ে পেন ডাউন রাখছি। শহিদ মিনারে আমাদের অনশন চলছে। তাতেও কাজ না হলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ভাবব।’

এদিন সল্টলেকের ল্যান্ড রিফর্মস এবং টেনেন্সি ট্রাইবুনাল অফিসের সামনেও কর্মচারীদের বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে। ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির ডাকে সোমবার দুপুরে সল্টলেকের ল্যান্ড রিফর্মস এবং টেনেন্সি ট্রাইবুনাল অফিসের কর্মচারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা বুকে ব্যাজ পরে অফিসের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে স্লোগান দেন।

ব্যারাকপুর আদালত চত্বরে বকেয়া ডিএ’র দাবিতেও কর্মবিরতি পালিত হয় সোমবার। সংগ্রামী যৌথমঞ্চের সমর্থকরা জানান, ৪৮ ঘণ্টার এই কর্মবিরতিতে কাজ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে তাঁরা হাঁটবেন।

দুদিনের কর্মবিরতি চলছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত আদালতেও। বারুইপুর মহকুমা আদালতেও কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ মিছিল হয়। যার ফলে অচল হয়ে পড়ে আদালতের কাজকর্ম।

এদিকে আন্দোলনের ভালই প্রভাব পড়ে উত্তর থেকে দক্ষিণের জেলাগুলিতে। কোচবিহার আদালতে আন্দোলনরত কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে।

ডিএ-র দাবিতে পুরুলিয়ায় কর্মবিরতির ডাক দেন সরকারি কর্মচারী এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল কোর্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মচারীরা। ব্যানার, পোস্টার হাতে নিয়ে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ডাক দিয়ে আদালতের কর্মচারীরা অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন।

একই সঙ্গে রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতেও কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন কর্মচারীরা। বাঁকুড়া জেলা আদালতেও যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের ডাকে কর্মবিরতি করেন সরকারি কর্মচারীরা। এদিন বাঁকুড়া জেলা আদালতের জজ কোর্টের বারান্দায় বসে স্লোগান দিয়ে সরকারী কর্মচারীদের চলে কর্মবিরতি।

হাজিরা দিয়ে কর্মবিরতি করে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন বাঁকুড়া জেলা আদালতের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মীরা। বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমা আদালতের কর্মীরাও আন্দোলনে শামিল হন। কর্মস্থলে এসে তারা প্রথমে হাজিরা দেন। তারপর কাজ বন্ধ রেখে তারা আদালত চত্বরে অবস্থানে বসেন।

নদিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের ব্যানারে কর্মবিরতির ডাকে মিছিল করলেন সরকারি কর্মচারীরা। ফলে এদিন সরকারি পরিষেবা পেতে আসা মানুষ বঞ্চিত হলেন। একই চিত্র দেখা যায় কল্যাণী মহকুমা শাসকের অফিস এবং কল্যাণী আদালতেও। কর্মীদের একাংশ যৌথ মঞ্চের ব্যানারে মিছিল করেন।

দুদিনের কর্মবিরতি পালন চলছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত আদালতেও। হাওড়ার ডোমজুড়ে বিডিও অফিস থেকে শুরু করে সাঁকরাইলের বিএলআরও অফিসে কর্মচারিরা উপস্থিত থেকে কর্মবিরতি পালন করেন। দুপুর ১টা নাগাদ হাওড়ার আদালত চত্বরে কর্মবিরতি পালন করা হয়।

 

অফিসে এসে সই করলেন না  সরকারি কর্মীরা

 

বর্ধমানের দুর্গাপুরে মহকুমা আদালতেও এদিন কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। ৩৯ শতাংশ হারে ডিএ-র দাবিতে এদিন মিছিলও হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁরা ধর্মঘট করেননি। কর্মবিরতি পালন করছেন। দফতরে সই করেই কর্মবিরতি পালন করতে হয়।

হুগলির চুঁচুড়া, চন্দননগর ও শ্রীরামপুর আদালতের কর্মীদের একাংশও এদিন কর্মবিরতিতে শামিল হন। চুঁচুড়া আদালতে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে স্লোগান দেন সরকারি কর্মীরা।

মেদিনীপুর জজকোর্টে কর্মবিরতি পালন করেন আদালত কর্মচারি সমিতি। বিচারক ও আইনজীবীদের কাজে বাধা না দিয়েই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন।

মুর্শিদাবাদ জেলা আদালতের সরকারি কর্মচারিরা এদিন কর্মবিরতি পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গের আদালত কর্মচারি সমিতির পক্ষ থেকে ডিএ এর দাবিতে কর্মবিরতি পালিত হয়। বর্ধমান আদালতের কর্মীরাও এদিন কর্মবিরতি পালন করেন।

শিলিগুড়িতে সূর্যসেন কলেজে কর্মবিরতিতে অংশ নেন কলেজের অশিক্ষক কর্মী ও অধ্যাপকদের একাংশ। সাবেক প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মুকুলকান্তি ঘোষও কর্মবিরতিতে যোগ দেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, কলকাতায় যেসব কর্মী বকেয়া ডিএ-র জন্য আন্দোলন করছেন, তাদের পাশে দাঁড়াতেই এই কর্মবিরতি। ডিএ’র দাবিতে আন্দোলনে নামেন আলিপুরদুয়ার আদালতের কর্মীরা। সংগ্রামী যৌথমঞ্চের উদ্যোগে টানা ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন সংগ্রামী যৌথমঞ্চের সমর্থকরা।

এদিকে এই আন্দোলনের ফলে আদালতের কাজে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাদের বকেয়া ডিএ না দিলে আরও বড় আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তারা।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ’র দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মীরা। ডিএ’র দাবিতে হাই-কোর্টের দ্বারস্থ হন তারা। কোর্ট তাদের পক্ষে রায় দেয়। সেই রায়কে চ্যালেজ্ঞ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামী ১৫ মার্চ ডিএ মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।

 

/এসপি/
সম্পর্কিত
লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসীদের ধরপাকড়, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ
ইলন মাস্কের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা নেই ট্রাম্পের
খারকিভে রাতভর রুশ হামলায় নিহত ৩, আহত ২২
সর্বশেষ খবর
ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা
ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্রিকেটাররা
জুলাই শহীদদের স্মরণে কোরবানি দিলেন মঈন খান
জুলাই শহীদদের স্মরণে কোরবানি দিলেন মঈন খান
লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসীদের ধরপাকড়, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ
লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসীদের ধরপাকড়, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ
ডিএসসিসির কোরবানির বর্জ্য অপসারণ শুরু
ডিএসসিসির কোরবানির বর্জ্য অপসারণ শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বিমানযোগে ঢাকায় এলো কসাই দল
বিমানযোগে ঢাকায় এলো কসাই দল
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
প্রধান উপদেষ্টার শব্দ চয়ন রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছে: বিএনপি
ডিসেম্বরেই নির্বাচনের দাবিতে অনড়প্রধান উপদেষ্টার শব্দ চয়ন রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছে: বিএনপি
এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
‘এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন’, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় যা বললো ইইউ
‘এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন’, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় যা বললো ইইউ