X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
কংগ্রেসের কর্ণাটক জয়

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ একাধিক বিরোধী নেতার

রক্তিম দাশ, কলকাতা
১৫ মে ২০২৩, ২৩:৩০আপডেট : ১৫ মে ২০২৩, ২৩:৩২

কংগ্রেসকে দিয়ে ঠিক হচ্ছে না, এই আওয়াজ তুলে অকংগ্রেসী-অবিজেপি জোট গড়ে চব্বিশে দিল্লির মসনদে বসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন মমতা, অখিলেশ, নীতিশরা–সেই বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দিলো কর্ণাটকের নির্বাচন। দক্ষিণের এই রাজ্যে কংগ্রেসের বিপুল জয় মোদি বিরোধী অকংগ্রেসী জোটে জল ঢেলে দিল। আপাতত দৃষ্টিতে এই ভোটে গেরুয়া শিবিরের পরাজয় ঘটলেও আসন্ন নির্বাচনে কর্ণাটকের এই ফল অকংগ্রেসী বিরোধী শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করে দিলো। যা আখেরে লাভ দিতে পারে বিজেপিকে। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগেও এরকম উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতায় ব্রিগেডে মমতার ডাকা সভায় বিরোধী দলের নেতারা বিজেপিকে হারাতে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। জোটের নাম দেওয়া হয়েছিল ফেডারেল ফ্রন্ট। শুধু তাই নয়, মমতা সেই সময় চন্দ্রবাবু নাইডুর অন্ধ্রপ্রদেশে প্রচার করতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন চলার পর এই জোটের অবস্থা খারাপ বুঝতে পেরে জোট শরিকরা নিজেদের রাজপাট বাঁচাতে জোট ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন। যার ফল হয়েছিল বিজেপির বিপুল বিজয়। উলটো পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের কাছ থেকে ১৯ আসন ছিনিয়ে নিয়ে বিজেপি প্রধান বিরোধী দলের আসনে উঠে এসেছিল।

কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বের হওয়ার আগে কয়েকটি রাজ্যে কংগ্রেসের বিধানসভা ভোটের ফলাফল অকংগ্রেসী-অবিজেপি জোটের সম্ভাবনাকে ফের সামনে এনেছিল। আবারও তার মুখ্য উদ্যোক্তা ছিলেন তৃণমূলনেত্রী। এ নিয়ে তিনি সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশের সঙ্গে বৈঠক করে এই জোটের বিষয়টিকে আরও উসকে দিয়েছিলেন।

বিজেপিবিরোধী জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কয়েকদিন আগেই নবান্নে এসে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ও আরজেডি সুপ্রিমো তেজস্বী যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এই জোটের সলতে পাকিয়ে গিয়েছেন। এরপরই নীতিশ চলে গিয়েছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টানায়েককে জোটের পক্ষে ম্যানেজ করতে। কিন্তু তার শত অনুরোধে চিড়ে ভিজেনি। নবীন জোটে নেই বলে জানিয়ে পত্রপাঠ বিদেয় করে দিয়েছিলেন নীতিশকে। এই জোটে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ভূমিকা কী তাও পরিষ্কার নয়।

কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা মলিক্কার্জুন খাড়গে বিরোধী দলগুলোর বৈঠক ডাকলেও তাতে শামিল হয়নি তৃণমূল। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, ‘বিরোধী দলগুলোর ওপর কংগ্রেসের দাদাগিরি তারা মেনে নেবেন না।’

এই অবস্থায় বিজেপিবিরোধী জোটের নেতৃত্ব নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে। সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি, কর্ণাটকের জেডিএসের মতো কিছু আঞ্চলিক দল মমতার নেতৃত্বে জোটের কথা বলেন।

প্রশ্ন উঠছিল এই জোটের নেতৃত্বে কে দেবেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ স্বপ্ন বহুদিনের। একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে রুখে দিয়ে এই স্বপ্নে আরও হাওয়া লেগেছে। তৃণমূল সাংসদ, মন্ত্রী থেকে নেতা-কর্মীরাও বলছেন মমতাই প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রধান দাবিদার। কিন্তু চব্বিশের লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসন জিতলেও সম্প্রতি গোয়া, ত্রিপুরা আর মেঘালয়ের বিধানসভা ভোটের পর সর্বভারতীয় দলের তকমা হারানো তৃণমূলের সুপ্রিমোর এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

জাতীয় স্তরের নানা সমীক্ষায় বার বার দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে নরেন্দ্র মোদির ধারে কাছে কেউ নেই। বিরোধী হিসেবে একটু হলেও সেই দৌড়ে রয়েছেন কেজরিওয়াল। পঞ্জাবে বিধানসভা জেতার পর, দুই রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টি সুপ্রিমো সে আশা করতেই পারেন। জেডিইউ-র নীতিশ কুমার শোনা যায় আগামীতে প্রধানমন্ত্রীত্বের লক্ষ্যেই বিজেপির হাত ছেড়েছেন। তিনিও দাবিদার। তেজস্বী নীতিশকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছেন আরজিডি এই জোটের বড় দল হওয়া সত্ত্বেও। তিনি বা ছাড়বেন কেন? মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার যতই অসুস্থ হন না কেন, তিনি এই জোটের সবচেয়ে প্রবীণ নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। দক্ষিণের ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন মুখে কিছু না বললেও তারও নেতৃত্বের শখ জাগাটা অস্বাভাবিক নয়। আর তেলেঙ্গানার টিআরএসের চন্দ্রশেখর রাও দলের নাম পরিবর্তন করে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সমিতি করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রীত্বের স্বপ্নকে সামনে রেখে। সব মিলিয়ে এই জোটের সবাই চান প্রধানমন্ত্রী হতে! তাই ফের উনিশের মতো তারা মমতাকে ফেলে পালাবেন না তো, নিজেদের গদি বাঁচাতে? এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর। তৃণমূলসহ সব বিরোধীদলই এই ইস্যুতে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ায়। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাহুলের তোলা অভিযোগ নিয়েও বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয় সব বিরোধী দল। বরাবরই বিজেপিকে হারাতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী ওপর মমতা জোর দিচ্ছেন। তা আদৌ কতটা সম্ভব? পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল একা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে? সিপিএম এই ফরমুলা মানবে? কেরালায় মানবে? কখনোই নয়। কংগ্রেস-বামেরা গাঁটছড়া বেঁধে লড়বে এটা পরিষ্কার। তাহলে বাংলায় ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছেই।

কারণ, পশ্চিমবঙ্গে সাগরদিঘির উপনির্বাচনের পরে মমতা ঘোষণা করেছেন, তিনি কারও সঙ্গে জোট বাঁধবেন না, একাই লড়বেন। তাহলে কী হবে? আবার পাঞ্জাব, দিল্লিতে আম আদমি পার্টি-কংগ্রেস কি আসন ছাড়বে? দক্ষিণের বেশ কয়েকটি রাজ্যেও একই পরিস্থিতি দেখা দেবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স

কর্ণাটকে কংগ্রেস জেতার পরই কোণঠাসা হস্ত শিবির ফের চাঙ্গা। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে, এই জয়ের ক্রেডিট নিতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল আর বামেদের। বামেরা উৎসাহের চোটে মিছিল করে ফেলেছেন কলকাতায়। যদিও কর্ণাটকের ভোটে সিপিএম ও সিপিআইয়ের সব প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছে। সিপিএম পেয়েছে ০.০৬ শতাংশ আর সিপিআই পেয়েছে ০.০২ শতাংশ ভোট! অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, ‘তাদের তোলা, নো ভোট বিজেপি স্লোগান কাজে লেগেছে কর্ণাটকে। বিজেপিবিরোধী যেখানে শক্তিশালী, তাদের সামনে রেখে বিকল্প জোটের ফরমুলা এখানে কাজে লেগেছে।’

অকংগ্রেসী জোটে জল ঢেলে দিয়ে কংগ্রেসের সম্পাদক ভামশি চাঁদ রেড্ডি রীতিমতো হুমকি সুরে বলেছেন, ‘কর্ণাটকের ফল তৃণমূল এবং আম আদমিসহ অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলোর কাছে একটি কঠোর বার্তা। চব্বিশের বৃহত্তর রাজনৈতিক লড়াইয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে তারা আসতে বাধ্য হবে।’

অধীর চৌধুরীর তীব্র কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘তৃণমূল অনেক বলেছিল, এই রাহুল গান্ধীকে দিয়ে হবে না কিছু। বারবার বলেছে দিদিকে দিয়েই হবে। আর এই হবে করতে করতেই দিদি জাতীয় দল থেকে আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছেন। অন্যদিকে কংগ্রেসকে দিয়ে হবে না করতে করতে, আমরা এই আঞ্চলিক দলকে গ্রামীণ দলে পরিণত করে দেব। পশ্চিমবঙ্গে আগামী দিনে তৃণমূল দলটা বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যাবে।’

দিনের শেষে মনে হচ্ছে, আগামীর বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে দিল্লির মসনদ দখলের যে স্বপ্ন আঞ্চলিক নেতা-নেত্রীরা দেখছিলেন সেটা চব্বিশে অধরাই থেকে যাচ্ছে। আবার অবিজেপি জোটে ক্ষমতার প্রশ্নে আপাতত গেলেও আঞ্চলিক-দলগুলো পিছন থেকে শেষ মুহূর্তে ছুরি মারবে না কংগ্রেসকে, এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ উদাহরণ ভারতের রাজনীতিতে বার বার ঘটেছে। সেক্ষেত্রে ফের মোদি ফিরছেন এটা একপ্রকার নিশ্চিত।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বশেষ খবর
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত