ভারতের চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিজেপির থেকে বিপুলভাবে এগিয়ে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের শহুরে এলাকায় তৃণমূলের দাপট কমলো ভোটের নিরিখে। গ্রামীণ এলাকায় পিছিয়ে থাকলেও শহরের ভোটে বিজেপি টেক্কা দিয়েছে তৃণমূলকে!
রাজ্যের ১২১টি পৌরসভার মধ্যে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ৬৯টি পৌরসভা এলাকায়। ৫১টিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যের ১২১টি পৌরসভায় ভোট হয়েছিল। ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছিল, ১২০টি পৌরসভাই জিতেছে তৃণমূল। বিজেপি ও কংগ্রেস একটিও পৌরসভা দখল করতে পারেনি।
কিন্তু এই লোকসভা ভোটে দেখা যাচ্ছে, সেই হিসাব উলটে গিয়েছে। বালুরঘাট থেকে ঘাটাল, খড়গপুর থেকে বাঁশবেড়িয়া-পুর এলাকায় পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। অধিকাংশ ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। শিলিগুঁড়ি, আসানসোল, বিধাননগরের অধিকাংশ এলাকায় এগিয়ে বিজেপি। আবার হাওড়া, কলকাতায় এগিয়ে তৃণমূল।
কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৫টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। দুটি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে সিপিএম।
কলকাতা পৌরসভা এলাকার তথ্য অনুযায়ী, এবারে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৯টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। এর মধ্যে ৪৫ জনই শাসক দলের কাউন্সিলর। রয়েছেন পাঁচ মেয়র পারিষদ সদস্যও। দক্ষিণ কলকাতার ৮৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে এবারে ২১টিতে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে এর মধ্যে ৮১টি ওয়ার্ড দখলে রেখেছিল তারা। কলকাতা উত্তরের ৬০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৮টি ওয়ার্ডে জোড়াফুল শিবির পিছিয়ে পড়েছে।
গত লোকসভা ভোটে আসানসোল আসনটি জিতেছিল বিজেপি। তার পরে সেখানকার সংসদ সদস্য বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগ দেন এবং এমপি পদ থেকে ইস্তফা দেন। উপনির্বাচনে জেতেন শত্রুঘ্ন সিনহা। এবারও তিনিই জিতেছেন। কিন্তু আসানসোল পৌর এলাকায় বিপুল ভোটে পিছিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। আসানসোলের বিস্তীর্ণ এলাকায় অবাঙালি হিন্দু ভোট গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। ১০৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭০টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
আবার রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ঝাড়গ্রাম শহরে তাঁর নিজের ওয়ার্ডে দলকে লিড দিতে পারেননি। বিজেপির প্রার্থী ডা. প্রণত টুডুকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮ ভোটে হারিয়ে ঝাড়গ্রাম আসনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী কালীপদ সোরেন।
গ্রামীণ এলাকায় তৃণমূলের সমর্থন বজায় থাকলেও কেন শহর এলাকায় তৃণমূল পিছিয়ে পড়েছে! এ নিয়ে গেরুয়া শিবিরের দাবি, গ্রামাঞ্চলে ভোটারদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভোটারদের বাধা দেওয়া হয়েছে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। তা যদি না হতো, তাহলে বাংলায় সর্বত্র একই ফল দেখা যেত লোকসভা ভোটে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গ্রামীণ এলাকাগুলোতে তৃণমূলের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রভাব থাকলেও তা শহর অঞ্চলে সেভাবে কাজ করেনি। বরং নিয়োগ দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি, চাকরি বাতিলের মতো ঘটনার প্রভাব পড়েছে শহরের ভোটারদের একটা বড় অংশের মধ্যে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির আবেদনও এখানে কাজ করেছে। যে কারণে পৌর এলাকায় তৃণমূলের সমর্থন আলগা হয়ে গেছে। পাশাপাশি, শহরের মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত সমাজের মধ্যে বিজেপির ভোটার তৈরি হয়েছে। যা আগের নির্বাচনগুলোতে সেভাবে দেখা যায়নি। কিন্তু রাজ্যের পুর এলাকাগুলোতে সামগ্রিকভাবে যে ফলাফল এসেছে, তা ২০২৬-এর বিধানসভার আগে শাসক দলকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে।